বিশ্বে মানব অঙ্গের অবৈধ বাণিজ্য ১৯০ কোটি ডলার

|

বিশ্বব্যাপী মানব অঙ্গ বেচাকেনার অবৈধ বাণিজ্য চলছে রমরমা। প্রতিনিয়ত এ ব্যবসার আকার বাড়ছে। প্রতি বছর বিশ্বে গড়ে প্রায় ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ১৯০ কোটি ডলারের মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবৈধভাবে বেচাকেনা হচ্ছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬ হাজার ১৫০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে)।

মানব অঙ্গের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।

এগুলো হচ্ছে- কিডনি, লিভার, হার্ট, ফুসফুস এবং অগ্ন্যাশয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয় কিডনি। কালোবাজারে এটির দামও পড়ে অনেক কম। কারণ এ অঙ্গ সমাজের দরিদ্র মানুষই বিক্রি করে থাকে।

গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেপ্রিটির (জিএফআই) ‘ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম অ্যান্ড দ্য ডেভেলপিং ওয়ার্ল্ড আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিবেদন, বিভিন্ন দেশের নানা সংস্থা থেকে তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মানব অঙ্গ বেচাকেনা বিশ্বের একটি লোভনীয় ব্যবসা। বিশ্বে প্রতিবছর কিডনি প্রতিস্থাপন ঘটে ৮ হাজার ৯৯৫টি। লিভার ২ হাজার ৬১৫টি, হার্ট ৬৫৪টি, ফুসফুস ৪৬৯টি, অগ্ন্যাশয় ২৩৩টি। সব মিলিয়ে ১২ হাজার ৯৬৬টি অঙ্গ প্রতিস্থাপনে ব্যবসা ৯০০ মিলিয়ন ডলার থেকে ১.৯ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত। বিশ্বে প্রতিবছর যে পরিমাণ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ঘটনা ঘটে, এর ১০ শতাংশ হয় অবৈধভাবে।

২০১৪ সালে বিশ্বে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজারটি অঙ্গ প্রতিস্থাপিত হয়। এর মধ্যে ১২ হাজার প্রতিস্থাপন হয়েছে অবৈধভাবে। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের দুই-তৃতীয়াংশ হচ্ছে কিডনি। এরপরে রয়েছে যথাক্রমে লিভার, হার্ট, ফুসফুস এবং অগ্ন্যাশয়। ২০১৭ সালে মোট ৯ হাজার কিডনি প্রতিস্থাপিত হয় অবৈধভাবে।

জিএফআইর প্রতিবেদনে বলা হয়, কিডনি যেহেতু দেয়া যায়, সে কারণে দালালদের প্ররোচনায় পড়ে দরিদ্র মানুষ সহজেই এ অঙ্গ বিক্রি করে দেয়, যা অনেক কম দামে কিনে নেয়া হয়। এর বিপরীতে অন্য অঙ্গগুলোর দাম দ্বিগুণ বা আরও বেশি। কারণ এ অঙ্গগুলো জীবিত মানুষের পক্ষে পুরোটা দেয়া কঠিন। আংশিক দেয়া যায় কোনো কোনোটির ক্ষেত্রে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিডনি বিক্রির বিনিময়ে বাংলাদেশের একজন ক্রেতা গড়ে পেয়ে থাকেন ২ হাজার থেকে ৩ হাজার ডলার, ভারতের একজন বিক্রেতা পান ১ হাজার থেকে ৫ হাজার ডলার, বেলারুশের বিক্রেতারা পান ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার ডলার, ব্রাজিলে ৩ হাজার থেকে ৮ হাজার ডলার, কম্বোডিয়ায় ৩ হাজার ডলার, চীনে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত।

কলম্বিয়ার নাগরিকরা কিডনি বিক্রিতে পেয়ে থাকেন ১ হাজার থেকে ৩ হাজার ডলার, কোস্টারিকার বিক্রেতারা সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে ৬ হাজার ডলার, মিসরের বিক্রেতারা ২ হাজার ডলার, ইন্দোনেশিয়ার বিক্রেতারা ৫ হাজার থেকে ২৩ হাজার ডলার, ইরাকের বিক্রেতারা পান গড়ে ১ হাজার ডলার, জাপানের বিক্রেতারা ১৬ হাজার ডলার, জর্দানের বিক্রেতারা পান ৫০০ ডলার থেকে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply