সাহেদের বিরুদ্ধে সিআইডি’র মানি লন্ডারিং মামলা

|

বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে প্রতারণা ও জালিয়াতির অপরাধে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

মঙ্গলবার উত্তরা পশ্চিম থানায় এ মামলাটি করে সিআইডি। অভিযোগে বলা হয়, সাহেদ গত ১ জানুয়ারি থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতারণা করে ৭ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়া বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারি আকার ধারণ করলে ভূয়া পরীক্ষা এবং জাল সনদ প্রদানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ৩ কোটি ১১ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।

সাহেদ তার অপরাধকর্মের প্রধান সহযোগী মাসুদ পারভেজের সহযোগিতায় রিজেন্ট ডিসকভারি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস লিমিটেডের নামে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শাহ মখদুম এভিনিউ শাখা, ঢাকায় ২৪ ফেব্রুয়ারি একটি নতুন অ্যাকাউন্ট খোলে যার হিসাব নং- ০০৬২০২১০০০৫৯৩৫। হিসাবটি পরিচালনা করতো সাহেদের পিতা সিরাজুল করিম ও এমডি মাসুদ পারভেজ।

সিআইডির অনুসন্ধানে অভিযুক্ত মোহাম্মদ সাহেদের অর্জিত সম্পদের প্রধান উৎস প্রতারণা ও জালিয়াতি মর্মে বেরিয়ে আসে। অপরাধলব্ধ আয় লেনদেনের সুবিধার্থে সে রিজেন্ট হাসপাতাল, রিজেন্ট কে. সি. এস লিমিটেড ও অন্যান্য অস্তিত্ববিহীন ১২টি প্রতিষ্ঠানের নামে ৪৩টি ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করে। ওই ব্যাংক হিসাবসমূহ খোলার সময় কেওয়াইসি ফর্মে সে প্রতিষ্ঠানসমূহের চেয়ারম্যান বা স্বত্বাধিকারী হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানসমূহের এমডি মাসুদ পারভেজ অভিযুক্ত মোহাম্মদ সাহেদের পক্ষে হিসাবসমূহ প্রত্যক্ষভাবে পরিচালনা করেছে, যা সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে উদঘাটিত হয়।

হিসাবসমূহের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নগদ টাকা জমা করা হয়েছে সেখানে। অভিযুক্ত মোহাম্মদ সাহেদ ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ৪৩টি ব্যাংক হিসাবে সর্বমোট জমা একানব্বই কোটি ৭০ সত্তর লক্ষ টাকা এবং তার মধ্যে উত্তোলন ৯০ নব্বই কোটি ৪৭ সাতচল্লিশ লক্ষ টাকা।

এক্ষেত্রে তার হিসাবসমূহে বর্তমান স্থিতির পরিমাণ ২ দুই কোটি ৪ চার লক্ষ টাকা যার মধ্যে ৮০ লক্ষ টাকা ঋণ রয়েছে। অভিযুক্ত মাসুদ পারভেজের ১৫টি ব্যাংক হিসাবে মোট জমা ৩ তিন কোটি ৯৮ আটানব্বই লক্ষ টাকা, মোট উত্তোলনকৃত অর্থের পরিমাণ ৩ তিন কোটি ৯৮ আটানব্বই লক্ষ টাকা এবং বর্তমান স্থিতি ৫ পাঁচ হাজার টাকা।

‘প্রতারণা’ ও ‘জালিয়াতি’ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২(শ) (৫) ও (৬) ধারা অনুযায়ী সম্পৃক্ত অপরাধ। এসকল অপরাধের অভিযোগে মোহাম্মদ সাহেদ ও সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩০টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

মোহাম্মদ সাহেদ, মাসুদ পারভেজ ও প্রতিষ্ঠানসমূহ যথাক্রমে; রিজেন্ট হাসপাতাল লিঃ, রিজেন্ট কে. সি এস লিমিটেড, রিজেন্ট ডিসকভারি টুরস এন্ড ট্রাভেল্স লিমিটেড এবং অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জনের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে গত ১ জানুয়ারি হতে ১৫ জুলাই পর্যন্ত মোট ১১,০২,২৭,৮৯৭ (এগারো কোটি দুই লক্ষ সাতাশ হাজার আটশত সাতানব্বই) টাকা হাতিয়ে নেয়ার তথ্য পাওয়া যায়।

এমতাবস্থায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের মাধ্যমে রুপান্তর এবং ভোগ-বিলাসে অর্থ ব্যয় করার অপরাধে অর্গানাইজড ক্রাইম (ফিন্যান্সশিয়াল ক্রাইম), সিআইডি বাদি হয়ে রাজধানী উত্তরা পশ্চিম থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে নিয়মিত মামলাটি দায়ের করেছে।

উল্লেখ্য, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুসারে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ এর অর্গানাইজড ক্রাইম তদন্ত করবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply