যেসব যুগান্তকারী কারণে ২০২০’র চেয়ে উত্তম হবে ২০২১, জানালেন বিল গেটস

|

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী ও মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা তিনি। তার প্রতিষ্ঠিত বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন বিশ্বজুড়ে নানান দাতব্য কাজ করছে, বিশেষ করে চিকিৎসা খাতে। বলা হচ্ছে বিল গেটসের কথা। করোনা মহামারি, এর টিকা উদ্ভাবন ও বিতরণ ব্যবস্থা এবং সর্বোপরি করোনা- পরবর্তী বিশ্ব নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন তিনি ব্লগ গেটস নোটসে। পাঠকদের জন্য সেটি ঈষৎ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-


কোভিড-১৯ মহামারিতে এরই মধ্যে ১৬ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ৭ কোটির বেশি মানুষ। অর্থনৈতিক খাতে ক্ষতি হয়েছে ১০ ট্রিলিয়ন ডলার। চাকরি হারিয়েছেন কোটি কোটি মানুষ। বিশ্বজুড়ে ১০০ কোটির বেশি শিশু করোনা মহামারির কারণে স্কুলে যেতে পারেনি। এ বছরটিতে যুক্তরাষ্ট্রে ঘটেছে জর্জ ফ্লয়েড ও ব্রেওনা টেলরের নৃশংস হত্যার ঘটনা, বিশ্ব দেখেছে ধ্বংসাত্মক দাবানল এবং এমন একটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, যা আধুনিক সময়ে আর দেখা যায়নি।

তবে. আমাদের জন্য ভালো খবর আসছে ২০২১ সালে।

চলতি বছরের বেশির ভাগ সময়টা আমি ফাউন্ডেশনের সহকর্মীদের সঙ্গে কাটিয়েছি এবং বিশ্বজুড়ে কোভিড–১৯ প্রতিরোধ, চিকিৎসা এবং শনাক্তকরণ পরীক্ষা চালানোর উপায় সন্ধান করেছি। আমি যখন ২০২০ সালের বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রার গতিপথ নিয়ে ভাবি তখন স্তম্ভিত হয়ে যাই। অন্য কোনো রোগের ক্ষেত্রে এক বছরে মানুষ এতটা এগোতে পারেনি যতটা এগিয়েছে কোভিড–১৯ মহামারির সময়ে। সাধারণত একটি টিকা তৈরি করতে ১০ বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এবার এক বছরের কম সময়ে একাধিক টিকা তৈরি করা হয়ে গেছে।

দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এখনো আমরা প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে বের হতে পারিনি। কম্পিউটারে তৈরি মডেলে দেখা গেছে, সামনের মাসগুলোতে করোনা পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন (স্ট্রেইন) আবির্ভূত হয়েছে এবং সে বিষয়েও আমাদের জানতে হবে। করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরন আরও দ্রুত ছড়াচ্ছে, যদিও এটি ততটা প্রাণঘাতী নয় বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে আশাবাদী হওয়ার মতো দুটি বড় কারণ আছে। একটি হলো মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মধ্য দিয়ে ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়ার গতি কমিয়ে দেয়া যায়। এতে টিকা সর্বত্র পৌঁছানোর আগপর্যন্ত জীবন বাঁচানো সম্ভব।

আশাবাদী হওয়ার অন্য একটি কারণ হলো, করোনার টিকা ও চিকিৎসা সম্পর্কিত যেসব খবর আপনারা এখন সংবাদমাধ্যমে পড়ছেন, ২০২১ সালের বসন্তে সেগুলো এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে যে এটির বৈশ্বিক প্রভাব জোরদার হতে থাকবে। তবে তখনো কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। (যেমন বড় জনসমাগমের ক্ষেত্রে)। অন্তত ধনী দেশগুলোতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কমে আসবে এবং জীবন এখনকার তুলনায় অনেক স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

যেহেতু আমরা এই বছর শেষ করে নতুন বছরের দিকে আগাচ্ছি তাই এই পোস্টে আমি কোভিড–১৯ বিষয়ক উদ্ভাবনগুলো সম্পর্কে নানা বিষয় তুলে ধরতে চাই। টিকা দিয়েই শুরু করছি; যেহেতু এ বিষয়টি খবরে আসছে বারবার এবং এই বিষয়েই আমার কাছে বেশি জানতে চাওয়া হয়েছে।

কোভিড–১৯ টিকা কীভাবে কাজ করে?

আপনি হয়তো জানেন যে মডার্না ও ফাইজার–বায়োএনটেকের তৈরি দুটি টিকা যুক্তরাষ্ট্রে জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পেয়ে গেছে। ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশেও অনুমোদন পেয়েছে। আরও কিছু কোম্পানি তাদের টিকার কার্যকারিতার পরীক্ষার ফল হয়তো শিগগিরই ঘোষণা করবে।

আপনি যে বিষয়টি সম্পর্কে পড়েননি, সেটি হলো প্রথম দুটি টিকার সফলতা অন্যান্য কোম্পানির জন্যও ভবিষ্যতে সফল হওয়ার আশাবাদ দেখাচ্ছে। কার্যত সব টিকাই এখন কার্যকারিতাবিষয়ক পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে, যেটি ওই দুটি টিকা পার হয়ে এসেছে। এখন এই গবেষকেরা জানেন যে করোনাভাইরাসের প্রোটিন অংশটিকে আঘাত করলে তা কাজে দিতে পারে। সুতরাং অন্যান্য টিকার ক্ষেত্রে, যারা একই পন্থায় এগোচ্ছে, তাদের আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

এই মৌলিক মিলের বিষয়টি বাদ দিলে বিভিন্ন টিকা ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে ভাইরাসকে আক্রমণ করার উপায় নিচ্ছে। মডার্না ও ফাইজার–বায়োএনটেক এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। এই পদ্ধতির সঙ্গে আমাদের ফাউন্ডেশন বেশ ভালোভাবেই পরিচিত। কারণ, ২০১৪ সাল থেকে এই পদ্ধতিতে ম্যালেরিয়া ও এইচআইভির টিকা তৈরির গবেষণায় আমরা অর্থায়ন করে আসছি। এটি অসাধারণ বিষয় যে কোভিড–১৯ বিষয়ে অতুলনীয় অগ্রগতি অর্জনে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে।

এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিরাচরিত পদ্ধতির তুলনায় অনেক দ্রুত এ ধরনের টিকা তৈরি করা যায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে এমআরএনএ পণ্য তৈরি করার মতো যথেষ্ট কারখানা নেই। কিছু টিকা আবার মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করার প্রয়োজন রয়েছে। ফলে এসব টিকা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিতরণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেবে। যদিও এটি যত না বৈজ্ঞানিক প্রতিবন্ধকতা, তার চেয়ে বেশি হলো প্রকৌশলগত প্রতিবন্ধকতা।

অন্যদিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভিন্ন ধরনের একটি টিকা তৈরি করেছে। এমআরএনএ প্রযুক্তি ব্যবহারের বদলে এটিতে শিম্পাঞ্জির মধ্যে দেখা দেওয়া সাধারণ ঠাণ্ডা–জ্বরের স্পাইক প্রোটিন যুক্ত করা হয়েছে, যা কিনা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। এতে আপনার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বুঝতে পারে যে স্পাইককে আক্রমণ করতে হবে এবং এ থেকেই আপনি কোভিড–১৯ থেকে সুরক্ষা পেয়ে যাবেন। কার্যকারিতার পরীক্ষায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা প্রায় ৭০ শতাংশ কার্যকর বলে দেখা গেছে। ফাইজার ও মডার্নার টিকার কার্যকারিতা সে ক্ষেত্রে ৯৪ থেকে ৯৫ শতাংশ। কিন্তু রোগ থামানোর জন্য ৭০ শতাংশ কার্যকারিতাও যথেষ্ট উচ্চ হার। এ কারণে একই পদ্ধতিতে তৈরি হতে যাওয়া জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা নিয়েও আশাবাদী হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

আপনি যদি টিকা নিয়ে কাজ করা একাধিক কোম্পানির হালনাগাদ তথ্য জানতে গিয়ে হিমশিম খান, তবে আপনাকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই। এটি কিন্তু একটি মধুর সমস্যা! অনেক কোম্পানি ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে টিকা তৈরির কাজ করায় এটি বলা যায় যে কিছু টিকা নিশ্চয়ই নিরাপদ ও কার্যকর প্রমাণিত হবে। এমন দুটি টিকা এরই মধ্যে পাওয়া গেছে এবং আরও আসছে।

কীভাবে তৈরি হবে ৫ থেকে ১০ বিলিয়ন ডোজ?

যদি টিকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি ডোজের প্রয়োজন হয়, তবে বিশ্বব্যাপী ৫ বিলিয়ন ডোজ প্রয়োজন হবে। আর দুই ডোজের টিকার জন্য প্রয়োজন হবে ১০ বিলিয়ন ডোজ। ধারণা করা হচ্ছে, রোগের ছড়িয়ে পড়ার চক্র ভাঙতে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অন্তত ৭০ শতাংশকে টিকা দেওয়ার প্রয়োজন হবে।

৫ থেকে ১০ বিলিয়ন ডোজ পরিমাণের দিক থেকে কি বিপুল? বিশ্বের সব টিকা তৈরির কোম্পানি সাধারণত বছরে ৬ বিলিয়ন ডোজের কিছু কম টিকা উৎপাদন করে থাকে। সুতরাং করোনার টিকা প্রয়োজনীয় পরিমাণে উৎপাদন করতে হলে সক্ষমতার দ্বিগুণ বা তিন গুণ উৎপাদন করতে হবে।

অধিক উৎপাদনের এই চাপ সহজ করতে ‘সেকেন্ড-সোর্স অ্যাগ্রিমেন্টস’ নামের নতুন এক ব্যবস্থায় ধনী ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর টিকা কোম্পানিগুলোকে জোটবদ্ধ করতে আমাদের ফাউন্ডেশন কাজ করছে। এই প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণে উচ্চ মানের নিরাপদ ও সাশ্রয়ী ডোজ উৎপাদন করা যাবে।

সেকেন্ড-সোর্স অ্যাগ্রিমেন্টসের বিষয়টি ব্যাখ্যা করা সহজ নয়। মনে করুন, হোন্ডা কোম্পানিকে তাদের অ্যাকর্ড নামের গাড়ি তৈরির জন্য নিজেদের কারখানা ছেড়ে দিচ্ছে ফোর্ড কোম্পানি। প্রবল সমস্যা এবং এর জরুরি সমাধানের বিষয়টি মাথায় রেখে অনেক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিই এ ধরনের নতুন পদ্ধতিতে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করার সুবিধা অনুধাবন করতে পারছে।

এটি ঠিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো, যখন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের উৎপাদন সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে গাড়ি তৈরির কারখানায় ট্যাংক–ট্রাক ইত্যাদি তৈরি করেছিল। ভিন্নতা এই জায়গাতেই যে, তখন এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল সরকার, এখন নেই। এই সংকটে বিভিন্ন কোম্পানিগুলো সাড়া দিচ্ছে।

কীভাবে ৫ থেকে ১০ বিলিয়ন ডোজ বিশ্বেজুড়ে বিতরণ করা হবে?

উৎপাদনের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ এই করোনার টিকা ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমতা নিশ্চিত করে বিশ্বজুড়ে বিতরণ করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে অবকাঠামোগত ও আর্থিক- উভয় ধরনের বাধাবিঘ্ন আছে।

এই টিকা ও অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী উপকরণ ন্যায্যভাবে সহজলভ্য করে তুলতে ১৬টি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এরই মধ্যে আমাদের ফাউন্ডেশনের সঙ্গে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। সারা বিশ্বে কীভাবে এই টিকা স্থানান্তর করা হবে, সে বিষয়ে শিপিং ও সরবরাহ ক্ষেত্রের শীর্ষ বিশেষজ্ঞদের একটি উপায় বের করতে হবে। আর দেশের ভেতরে তা সরবরাহের দায়িত্ব জাতীয় সরকারগুলোর। এ ছাড়া জিএভিআইয়ের (গ্যাভি) মতো সংস্থার মাধ্যমে নতুন অর্থায়নের ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। দরিদ্র দেশগুলোতে শিশুদের টিকা দেওয়া নিশ্চিত করার ক্ষেত্র গ্যাভির মতো সংস্থার অসাধারণ কর্মকুশলতা আছে।

টিকার বিষয়ে মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা ভালো কিছু বয়ে আনে না। এমন কিছু তত্ত্বে আমাকে ও মেলিন্ডাকে জড়ানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি, টিকার বিষয়ে আমাদের অর্থায়নের মূল কারণ হচ্ছে, আমরা মানুষের জীবন বাঁচাতে মরিয়া। আমরা চাই, সব শিশু যেন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্ণ সুযোগ পায়। সমাজকে আমাদের সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমরা অনুভব করি এবং এজন্য ভ্যাকসিনের উন্নয়ন ও বিতরণের চেয়ে ভালো কোনো ক্ষেত্র হতে পারে না। গত দু’দশকে শিশুমৃত্যুর হার অর্ধেকে নামিয়ে এনে ভ্যাকসিন চিকিৎসা জগতে অলৌকিক ঘটনার জন্ম দিয়েছে।

এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য রাজনীতিবিদ, কমিউনিটি লিডার, বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসকরা বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। এফডিএ (মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান) বিশ্বের অন্যতম সমাদৃত ড্রাগ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। এই অনুমোদন প্রক্রিয়া অদ্বতীয়। কোভিড-১৯ টিকার অনুমোদনের ক্ষেত্রে কোনো ধাপ বাদ দেয়া হয়নি। প্রথম দফায় যদি যথেষ্ট মানুষ টিকাটি গ্রহণ করে তবে এর সুফল দেখে অন্যরাও সেটি নিতে চাইবে।

উন্নয়নশীল দেশগুলো কেমন করছে

একটি বিষয়ে নিজে ভুল প্রমাণিত হতে পেরে আমি খুশি। আমি আশাও করেছিলাম, যাতে আমি ভুল প্রমাণিত হই। আমার ভয় ছিল, কম আয়ের দেশগুলোতে কোভিড-১৯-এর প্রকোপ প্রচণ্ড হয়ে উঠতে পারে।

এখন পর্যন্ত এই আশঙ্কা সত্য হয়নি। উদাহরণ হিসেবে সাব-সাহারা অঞ্চলের কথা বলা যায়। সেখানকার বেশির ভাগ দেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের চেয়ে কম। সেই অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ দক্ষিণ আফ্রিকাতেও করোনায় আক্রান্তের হার যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ৪০ শতাংশ কম। আর মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ কম। এর কারণ বোঝার মতো পর্যাপ্ত তথ্য এখনো আমাদের হাতে নেই। এর সম্ভাব্য নানা কারণ থাকতে পারে।

গত মাসে আমি জেনে আশ্চর্য হয়েছি যে কোভিড-১৯ আফ্রিকায় মানুষের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ৩১-তম। অথচ বিশ্বে এটি চতুর্থ, আর আমেরিকায় এক নম্বর।

কিন্তু কেন আফ্রিকায় কোভিডে আক্রান্তের হার কম? শুধু যে করোনাভাইরাসে কম মানুষে আক্রান্ত হয়েছে, বিষয়টি তা নয়। এর অন্যতম কারণ হলো, এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা ও অন্যান্য রোগের সেবা দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষে কোভিড শনাক্তের কাজটি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কোভিড-১৯-এ আক্রান্তের হার কম থেকেছে। কিন্তু অন্যান্য রোগের ওপর কোভিডের মারাত্মক প্রভাব রয়েছে। ফলে অন্যান্য রোগ তীব্র হতে পারে।

আরেকটি কারণ হতে পারে, কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ভয় থেকে সন্দেহভাজন রোগীরা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে অনিচ্ছুক ছিলেন। এর অর্থ হলো, মারাত্মক পরিস্থিতি হলেও তা পরীক্ষার বাইরেই থেকে গেছে। অচিহ্নিত থাকার বিষয়টি যত তীব্র হবে, রোগে মানুষের মৃত্যুও বেশি হবে।

কোভিড, জলবায়ু ও সামনের বছর

গত বসন্তে, যখন কোভিড–১৯ মহামারির তীব্রতা স্পষ্ট হচ্ছিল তখন আমি লিখেছিলাম, ‘এটি বিশ্বযুদ্ধের মতো, ভিন্নতা হলো: এবার আমরা সবাই একই পাশে রয়েছি।’

আমি আনন্দের সঙ্গে বলতে চাই যে কোভিড–১৯–এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুরো বিশ্ব একজোট হওয়ার বিষয়টি সঠিক বলে প্রতিভাত হয়েছে (কিছু ব্যতিক্রম বাদে)। আমরা যতটা এগিয়েছি, এতটা কখনোই আসতে পারতাম না, যদি বিশ্বের সরকার ও কোম্পানিগুলো এবং বিজ্ঞানীরা একজোট হয়ে কাজ না করতেন।

এই বৈশ্বিক সহযোগিতাই একটি কারণ, যাতে আমি সামনের বছরের জন্য আশাবাদ দেখতে পারছি। শুধু করোনাভাইরাস মহামারির ক্ষেত্রে নয়, আমি বিশ্বাস করি, আসছে বছরে এ সময়ের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ, অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সুদৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

২০২১ সালে আমি বেশির ভাগ সময় ব্যয় করব বিশ্বজুড়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য। আমি এটিই আশা করছি। সেখানে জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড–১৯ নিয়ে আলোচনা হবে।

আমার ধারণা, আজ থেকে এক বছর পর আমরা পেছনে ফিরে তাকিয়ে বলতে পারব যে ২০২১-এ ২০২০এর তুলনায় অধিক উন্নতি হয়েছে। এই উন্নতি হয়তো ব্যাপক হবে না, কিন্তু বিশ্বের মানুষের জন্য এটি হবে লক্ষণীয় ও পরিমাপযোগ্য পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়া।

আমি আপনাদের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর ২০২১ সাল প্রত্যাশা করি।

বিল গেটসের বিস্তারিত লেখাটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply