বরগুনায় ডায়ারিয়ার প্রকোপ, খালের পানিতে মলের জীবাণু

|

বরগুনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। এলাকার খালের পানিতে মলের জীবাণু ই-কোলাইয়ের অস্তিত্ব মিলেছে আইইডিসিআরের গবেষণায়।

এলাকার বেশিরভাগ মানুষ গৃহস্থালিসহ নানান কাজে খালের পানি ব্যবহার করে। বরগুনা জেলায় ডায়রিয়া মহামারি আকারে দেখা দেয়ার কারণ খুঁজতে গিয়ে এ তথ্য পেয়েছে গবেষক দল।

ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতির কারণ অনুসন্ধানে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি প্রতিনিধিদল বরগুনায় চালিয়েছে এ গবেষণা।

বরগুনা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধিদল ১ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত বরগুনার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের তালিকা ধরে সমীক্ষা চালায়।

সমীক্ষায় দেখা যায়, জেলার ৯৪ শতাংশ লোক গভীর নলকূপের পানি পান করলেও ৭১ শতাংশ মানুষ দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজে খালের পানি ব্যবহার করে। সমীক্ষাভুক্ত এলাকার মাত্র ২০ শতাংশ বাড়িতে গভীর নলকূপ আছে।

প্রতিষ্ঠানটি বরগুনার খালের পানির নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ল্যাবে পরীক্ষা করে খালের পানিতে মলের জীবাণুর উপস্থিতি পেয়েছে। ২০ জন রোগীর মল পরীক্ষায় ৩ জনের মলে কলেরা ও ই-কোলাই জীবাণুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো আইইডিসিআরের ওই প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে খাওয়া ও গৃহস্থালি কাজে নিরাপদ পানি ব্যবহার নিশ্চিত করা, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে গভীর নলকূপের সংখ্যা বাড়ানো, খাল-নদীর পানি ফুটিয়ে অথবা বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়ে নিরাপদ করে ব্যবহার করা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া।

আইইডিসিআরের প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করে সিভিল সার্জন মারিয়া হাসান বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে সুপারিশমালা বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি চিঠি দিয়েছি।’

এদিকে, ডায়রিয়ার অবনতি হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে আইইডিসিআর আরেকটি প্রতিনিধিদল বরগুনায় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। মার্চ মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় মাসব্যাপী আইইডিসিআরের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বরগুনায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা করে।

দলটি জেলার সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত এলাকা ঘুরে রোগীদের মল, বিভিন্ন উৎসের পানির নমুনা সংগ্রহ করে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়েছে। আইইডিসিআরের তিনজন রোগতত্ত্ববিদ (চিকিৎসক) ও তিনজন কারিগরি সহায়ক এই দলে আছেন।

এ দলের নেতৃত্ব দানকারী রোগতত্ত্বববিদ জাহিদুর রহমান জানান, প্রতিবছরই এই মৌসুমে বিভাগে কমবেশি ডায়রিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। কিন্তু এবার আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি। এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য তারা বরগুনায় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। তারা স্বাস্থ্য বিভাগ, আক্রান্ত ব্যক্তি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলছেন। একই সঙ্গে মানুষের খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনের নানা বিষয় সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন।

প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য বলেন, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে যা বোঝা যায় তাতে এ অঞ্চলের মানুষের একটি নেতিবাচক প্রবণতা হলো দৈনন্দিন কাজে খালের পানি ব্যবহার করা। বিশেষ করে সকালে ভাতের সঙ্গে খালের পানি মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস আছে। এই অভ্যাস বদলাতে হবে। গৃহস্থালিসহ সব কাজে নলকূপের পানি ব্যবহার করতে হবে।

প্রতিনিধিদলের সদস্য রোগতত্ত্ববিদ সুব্রত মালাকার বলেন, ‘আমরা কেবল কাজ শুরু করেছি। নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলো ঢাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বোঝা যাবে, ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার প্রকৃত কারণ।’

এদিকে বরগুনার হাসপাতালগুলোতে জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজারের অধিক ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছে; রয়েছে স্যালাইন সংকট। 


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply