রেলস্টেশনে তরুণীকে হেনস্তা: পেশায় ঘটক সেই অভিযুক্ত নারী সাতদিনেও অধরা

|

রেলস্টেশনে হেনস্তার শিকার হয় তরুণী। ছবি: সংগৃহীত।

স্টাফ রিপোর্টার, নরসিংদী:

নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে তরুণীকে হেনস্থার সাতদিন পেরিয়ে গেলেও গালিগালাজ, মারধর ও শ্লীলতাহানী চেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত সেই নারীকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। রেলওয়ে পুলিশের ভাষ্য, ওই নারীকে শনাক্ত ও চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি গ্রেফতারের ভয়ে বারবার স্থান ও মুঠোফোন নম্বর পরিবর্তন করছেন, এজন্য তাকে গ্রেফতারে সময় লাগছে। তবে দ্রুতই তিনি আইনের আওতায় আসবেন।

জানা যায়, তরুণীকে হেনস্থা করা ওই নারীর নাম শিলা আক্তার ওরফে সায়মা (৪৫)। তার বিরুদ্ধে ঘটনার দিন বুধবারই (১৮ মে) মামলা করেন নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল জাহেদী। শিলা আক্তার শহরের উপজেলা মোড়ের ভাড়াটিয়া ফয়েজ আহমেদের স্ত্রী। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এবং এ ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হলে তিনি বাসাটি ছেড়ে চলে যান।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, প্রথম স্বামীর মৃত্যুর পর আসামি শিলা আক্তার ফয়েজ আহমেদকে বিয়ে করেন। স্থানীয়ভাবে ওই নারী একজন ঘটক হিসেবে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ওই তরুণীকে হেনস্তা করার ঘটনায় ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে শিলা আক্তারকে শনাক্ত করে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারে অব্যহত আছে অভিযান।

এর আগে গত বুধবার ভোর সোয়া পাঁচটার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে আসেন ভুক্তভোগী তরুণী ও তার দুই বন্ধু। স্টেশনটির ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে তারা ঢাকাগামী ঢাকা মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। পরে সেখানে অবস্থানরত শিলা আক্তার হঠাৎ ওই তরুণীকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘এটা কী পোশাক পরেছো তুমি’। তরুণীও পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনার তাতে কী সমস্যা হচ্ছে?’ এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হলে ওই শিলার পক্ষে সেই বিতর্কে যোগ দেন স্টেশনে অবস্থানরত আরও কয়েকজন ব্যক্তি। ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। হেনস্তাকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওই তরুণীকে ঘিরে রেখেছে একদল ব্যক্তি। এর মধ্যেই এক নারী উত্তেজিত অবস্থায় তার সঙ্গে কথা বলছেন। বয়স্ক এক ব্যক্তিকেও তরুণীর পোশাক নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে ওই তরুণী সেখান থেকে চলে যেতে উদ্যত হলে আসামি শিলা আক্তার দৌড়ে তাকে ধরে ফেলেন। কোনোরকমে নিজেকে সামলে দৌড়ে স্টেশনমাস্টারের কক্ষে চলে যান তরুণী। এ সময় তার সঙ্গে থাকা দুই তরুণকেও মারধর করতে দেখা যায় ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন ব্যক্তিকে। পরে তারাও দৌড়ে স্টেশনমাস্টারের কক্ষে চলে যান। পরে ভুক্তভোগী তরুণী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন দিলে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ রেলস্টেশনে এসে তাদের ঢাকার ট্রেনে উঠিয়ে দেয়।

তবে এ ঘটনার পর ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেয়া হলেও তাদের কেউই এতে রাজি হননি বলে জানিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। পরে ওই রাতেই ভৈরব রেলওয়ে থানায় মামলা করেন নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইমায়েদুল জাহেদী। মামলায় মো. ইসমাইল ও শিলা আক্তারের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও একজন নারীসহ ৮-১০ জন পুরুষকে আসামি করা হয়। গত সোমবার মো. ইসমাইলকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। বর্তমানে ইসমাইল পুলিশি রিমান্ডে আছেন। এছাড়াও ওই নারী ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গ্রেফতার এড়াতে শিলা আক্তার এরই মধ্যে তার বাসা পরিবর্তন করেছেন। বর্তমানে তিনি অন্তত তিনটি সিমকার্ড ব্যবহার করছেন এবং মুঠোফোন কিছু সময়ের জন্য খুলে আবার দীর্ঘক্ষণ বন্ধ করে রাখছেন। সেই সাথে ঘনঘন নিজের অবস্থানও পরিবর্তন করছেন ওই নারী। তাই তাকে গ্রেফতারে সময় লাগছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply