বিক্ষুব্ধদের ইরানের শত্রু বলছেন প্রেসিডেন্ট

|

হিজাব ইস্যুতে ইরানে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ অব্যাহত।‘ঠিকমতো’ হিজাব না পরায় পুলিশের হাতে আটক মাহশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে ইরানের অন্তত ৫০টি শহরে। পুলিশের সাথে সংঘর্ষে প্রাণহানিও ছাড়িয়েছে অর্ধশত। অবশ্য ইরান সরকারের দাবিমতে নিহতের সংখ্যা এত নয়। এমন অবস্থায় সব ধরনের সহিংসতা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রইসি।

প্রেসিডেন্ট রইসি এক ঘোষণায় বলেন, যারা এসব করছে তারা ইরানের শত্রু। অজুহাতের আড়ালে আসলে তারা ইরানে দাঙ্গা ও সহিংসতা ছড়াতে চায়। দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করাই এদের মূল লক্ষ্য। এসময় প্রেসিডেন্ট রইসি চলমান বিদ্রোহকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের কার্যকলাপ ইরান বরদাশত করবে না।

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে ২২ বছর বয়সী মাহশা আমিনিকে হিজাব আইনে আটক এবং হত্যার পর থেকেই রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে রাজপথে নামে হাজারও মানুষ। প্রকাশ্যে চুল কেটে এবং হিজাব ও অন্যান্য পোশাক পুড়িয়ে ফেলে সরকারের বাধ্যতামূলক হিজাব আইনের প্রতিবাদ জানাচ্ছে ইরানিরা। নৈতিকতা পুলিশের হয়রানি বন্ধেরও দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। এসব নিয়ে পুলিশের সাথে বিক্ষুব্ধদের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে বিবিসিসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যম। তবে সরকার এখন পর্যন্তদ ১৭ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে।

সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, মাহশাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার পরই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে যান মাহশা। এরপর তিনদিন কোমায় থাকার পর মৃত্যু হয় তার। পুলিশ স্বাভাবিক মৃত্যু বলে দাবি করলেও, পরিবার বলছে অসুস্থতার কোনো লক্ষণই ছিল না মাহশার। থানায় নেয়ার পথে তার মাথায় আঘাত করা হয় বলে দাবি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর।

এ ঘটনায় আন্দোলন ছড়িয়েছে দেশের বাইরেও। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ কার্যালয়ের সামনেও বিক্ষোভ করেছেন সেখানে বসবাসরত ইরানিরা। মাহশার মৃত্যুর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে তুরস্ক এবং নেদারল্যান্ডসেও। ঘটনাটি তদন্তের দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে হিজাবে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করেছেন দেশটির অনেক নারী। এমনকি মাহশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় নিজেদের চুল কেটে এবং পরনের পোশাক খুলে ফেলে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকে। একাধিক শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সহিংসতার কথায় জানায় সংবাদমাধ্যমটি।

জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র রাভিনা শ্যামদাসানি জানান, মাহশার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাতের তথ্য পেয়েছেন তারা। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা এ ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। নির্যাতনের অভিযোগসহ পুরো বিষয়টি দ্রুত ও সুষ্ঠুভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। তার পরিবার যেনো ন্যায়বিচার পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৯ সালে ইরানে সংঘটিত ইসলামি বিপ্লবের পর থেকেই দেশটিতে বাধ্যতামূলক করা হয় নারীদের হিজাব পরা। ইরানের নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশ সরাসরি তদারকি করে বিষয়টি। ১৩ সেপ্টেম্বর হিজাব আইনের আওতায় আরও অনেকের সাথে আটক হন মাশা আমিনি। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মোরাল পুলিশের সাথে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে যান মাশা।

/এডব্লিউ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply