ভারতের উত্তরাখণ্ডে হঠাৎ মাটিতে দেবে যাচ্ছে একাধিক শহর

|

ভারতের উত্তরাখণ্ডে হিমালয় সংলগ্ন একাধিক শহরে শত শত বাড়িঘরে দেখা দিয়েছে ফাটল। শহরগুলোর হাজারো বাড়িঘর দেবে যাচ্ছে মাটির নিচে। সেই সাথে তৈরি হয়েছে ভূমিধসের শঙ্কাও। স্থানীয়দের নিরাপদ স্থান সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে দুই শতাধিক পরিবারকে নেয়া হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলোকেভেঙে ফেলা হচ্ছে। পরিবেশবিদদের দাবি, হিমালয় পর্বতকে ঘিরে ভারত সরকারের মেগা প্রকল্পের জেরেই পাহাড় ভারসাম্য হারাচ্ছে। খবর রয়টার্সের।

উত্তরাখণ্ডে হিমালয়ের কোল ঘেঁষা শহর জোশিমঠ। ১৭ হাজার বাসিন্দার শান্ত পাহাড়ি শহরটি এখন আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে শহরের যেকোনো এলাকা। আতঙ্ক ছড়িয়েছে মূল শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরের গ্রাম মারোদাতেও। জোশিমঠের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে একটি এটি। যেখানে অন্তত সাড়ে ৮০০ ভবনে তৈরি হয়েছে ফাটল। এরই বিধ্বস্ত হয়েছে অনেকগুলো বসতবাড়ি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ৯০০ এর বেশি মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে গ্রামটি থেকে। জোশিমঠের পর ফাটল দেখা দিয়েছে কর্ণপ্রয়াগ ও রুদ্রপ্রয়াগ শহরের বাড়িঘরেও। উত্তরাখণ্ডে হিমালয়ের কমপক্ষে ১০টি এলাকা নতুন করে ধসপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

ভারতের সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিটিউটের চিফ সায়েন্টিস্ট ডি.পি. কানুনগো বলেন, ফাটল ধরা এলাকাগুলো থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে খালি করা হবে। এরপর পাহাড়ের ওপরের অংশ থেকে ভাঙার কাজ শুরু হবে। ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামবে।

এদিকে, দীর্ঘদিনের আবাস আর জীবিকা হারিয়ে দিশেহারা স্থানীয়রা। তাদের দাবি, হঠাৎ করে কর্তৃপক্ষ বাড়ি ছেড়ে দিতে বললেও কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি।

হিমালয়ের বুকে হাইড্রো পাওয়ার প্ল্যান্ট, রেললাইন এমনকি হাইওয়ে নির্মাণের মতো বড় বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে ভারত সরকার। যা নিয়ে শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়েছিল পরিবেশকর্মী ও বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি, প্রকল্প শুরুর আগে প্রয়োজনীয় গবেষণা বা জরিপ করা হয়নি। তাই নষ্ট হচ্ছে বাস্তুসংস্থান ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য।

চার ধাম প্রকল্পকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ২০১৮ সালে মামলা করেছিল পরিবেশকর্মীরা। তবে ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্টের সবুজ সংকেত পায় ১২০ বিলিয়ন রুপির প্রকল্প। চীন সীমান্তবর্তী অঞ্চলটিতে ভারতীয় সেনাদের প্রয়োজনীয় সামরিক ও অন্যান্য সরঞ্জাম পাঠানোর পথ সহজ করতেই নেয়া হয়েছে এ কৌশলগত প্রকল্প। ৮২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ চার ধাম সড়কসহ ১২৫ কিলোমিটার রেলওয়ে প্রকল্পের জন্য ৮৩ কিলোমিটার এলাকা খনন করা হয়েছে। পরিবেশকর্মীদের দাবি, এসব বড় বড় প্রকল্প করার আগে ভালোভাবে যাচাইবাছাই না করার কারণেই সৃষ্টি হয়েছে এমন পরিস্থিতি।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply