ফোনবিহীন সাংবাদিক, ১০ ঘণ্টার ট্রেন ভ্রমণ ও বাইডেনের ‘গোপন’ সফর

|

পোল্যান্ড থেকে কিয়েভের ট্রেন ভ্রমণে জো বাইডেন। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের জন্য এমন সফরকে কিছুটা দুঃসাহসিকই বলতে হয়! ইউক্রেনে চলছে যুদ্ধ, হচ্ছে নিয়মিত আক্রমণ। সেখানে দেশটির রাজধানী কিয়েভে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অপ্রত্যাশিত সফরকে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বলছেন, আধুনিক সময়ে এমনটা নজিরবিহীন। সেই সাথে, প্রেসিডেন্টের বহরের আকারও ছিল খুবই ছোট। মেডিকেল অফিসার, কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তার সাথে গণমাধ্যম থেকে বাইডেনের সাথে যেতে পেরেছেন মাত্র দুইজন সাংবাদিক, যাদের মোবাইল ফোনও কেড়ে নেয়া হয়। ১০ ঘণ্টার ট্রেন রমণ করে অনেকটা যেন গোপনেই কিয়েভ পৌঁছান বাইডেন। যেখানে তিনি পৌঁছানোর আগে খবর জানতো না কোনো গণমাধ্যমই! বিবিসিতে করা সারাহ স্মিথের প্রতিবেদন।

যুদ্ধরত কোনো ভূখণ্ডে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এর আগের সফরগুলো ছিল ইরাক ও আফগানিস্তানে। কিন্তু দুইবারই কঠোর সামরিক প্রহরা নিশ্চিত করা হয়েছিল। বাইডেনের পোল্যান্ড সফরের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার পরই মনে করা হচ্ছিল, ইউক্রেন সফরের ব্যাপারে ভাবতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে তাতে কমেনি এই সফর ঘিরে বিস্ময়। কিয়েভের প্রাণকেন্দ্রে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলদিমের জেলেনস্কির সাথে যখন করমর্দন করছেন জো বাইডেন, তখনও শোনা গেছে বিমান হামলার সাইরেন। পোল্যান্ডে দাঁড়িয়ে কোনো কথার চেয়ে নিশ্চয়ই বাইডেনের এই ইউক্রেন সফর আরও শক্তিশালী বার্তা বহন করে। হোয়াইট হাউসের কমিউনিকেশনস ডিরেক্টর কেট বেডিংফিল্ড বলেন, সফরটি সত্যিই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। নিঃসন্দেহে বাইডেন এমন এক নেতা যিনি প্রতিশ্রুতিকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেন।

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ওয়ারশ’র উদ্দেশে দুই দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেন জো বাইডেন। সফরের সময়সূচির মাঝে একটি লম্বা বিরতি থাকায় হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাওয়া হয় ইউক্রেন সফরের সম্ভাব্যতা নিয়ে। হোয়াইট হাউস জানায়, জেলেনস্কির সাথে বাইডেনের কোনো সাক্ষাতের উল্লেখ নেই সেই সূচিতে।

গত শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বাইডেনের কিয়েভ সফর চূড়ান্ত করা হয়। সেটিও জানানো হয়নি গণমাধ্যমে। বাইডেনের সাথের দুই সাংবাদিককেও বলা হয়েছিল যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট কিয়েভ গিয়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত এই সফর নিয়ে কোনো প্রতিবেদন করা যাবে না। বাইডেনের রওনা হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ইউক্রেন সফরের ব্যাপারে রাশিয়াকে অবগত করা হয় বলে জানিয়েছেন ইউএস ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার জেক সুলিভান। তিনি বলেন, যুদ্ধক্ষেত্রের হুমকির বাইরেও অন্যান্য সামরিক উদ্দেশে গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটে থাকে। সেই ঝুঁকি এড়াতেই রাশিয়াকে জানানো হয়েছে। আমি জানি না, তারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে কিংবা, আমাদের বার্তার ভাষা কেমন। তবে আমি নিশ্চিত করতে পারি, রাশিয়াকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে।

ট্রেনে ১০ ঘণ্টা ভ্রমণ করে কিয়েভ পৌঁছেছেন জো বাইডেন। ইউক্রেনের অন্য অনেক জায়গায়ই সহজে যেতে পারতেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট; তবে কিয়েভে এভাবে ভ্রমণ করে বাইডেন যেন দিতে চাইলেন এক নতুন বার্তা! মস্কোর উদ্দেশে যেন আরও একবার জানানো হলো, ইউক্রেনকে সহায়তায় বাইডেন প্রশাসন তার প্রতিশ্রুতি রক্ষায় বদ্ধপরিকর।

সেই সাথে, নিজ দেশের ভোটারদের আস্থা খুঁজে পাওয়াও বাইডেনের জন্য জরুরি। বাইডেনের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারিন জ্যঁ পিয়েরের কাছে গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে একটি জরিপের ভিত্তিতে প্রশ্ন করা হয় যে, ইউক্রেনের প্রতি আমেরিকার সমর্থন ক্রমেই কমে যাচ্ছে কিনা। ক্যারিন জ্যঁ পিয়েরে বলেন, জো বাইডেন যখনই কথা বলেন, তিনি কেবল আমেরিকার মানুষের উদ্দেশে বলেন না; বলেন পৃথিবীর মানুষের প্রতি। ইউক্রেন সফর তাই সেইসব রিপাবলিকানের প্রতি এক স্পষ্ট জবাব, যারা জানতে চেয়েছিলেন আর কতদিন ইউক্রেনকে সমর্থনকে দিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply