গৃহহীন ও ভূ‌মিহীন মুক্ত ঘোষণা হ‌চ্ছে পটুয়াখালীর সদর উপ‌জেলা

|

স্টাফ ক‌রেসপন্ডেন্ট, পটুয়াখালী:

নিজের জমি না থাকায় যুগের পর যুগ অন্যের বাসায় ভাড়া থাকতো যারা, তারা এখন অনেক খুশি মুজিববর্ষের ঘর পেয়ে। বিভিন্ন ধরনের কাজ করে নিজেরাই স্বাবলম্বী হচ্ছেন তারা। গত দুই বছরে খুঁজে খুঁজে বের করে পটুয়াখালী সদর উপজেলায় ১ হাজার ২৫২ জনকে দেয়া হয়েছে এসব ঘর। যে কারণে আগামী ২২ মার্চ ঘোষণা হচ্ছে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত উপজেলা।

নদী ভাঙনের শিকার কিংবা নিজের জমি না থাকায় এতোদিন অন্যের বাসায় ভাড়া থেকে বসবাস করে হাফিয়ে উঠছিলেন সুলতান। তি‌নি এখন পেলেন মুজিববর্ষের নতুন ঘর। সুলতা‌নের মতো হা‌ফিজা বেগম, আনোয়ারা, আশ্রাফের মতো ভূমিহীনরা এখন ঘর পেয়ে আনন্দে আত্মহারা। জীবনে কখনো কল্পনাও করতে পারেননি যে, এত সুন্দর ঘর পাবেন। সুন্দর সাজানো গোছানো এক একটি পরিবার।

শহর সংলগ্ন টাউন জৈনকা‌ঠি গ্রা‌মে ১৪‌টি মু‌জিবব‌র্ষের ঘর এক সা‌থে। ওই ঘ‌রের সর্ব দক্ষিণের ঘর‌টি পে‌য়ে‌ছে গিতা রানী। গত ২৬ বছর পর্যন্ত শহ‌রের চরপাড়া এলাকায় অন্যের বাসায় ভাড়া থাক‌তেন তিনি। মা‌সে ৩ হাজার টাকা ভাড়া দি‌য়ে পরিবারের সদস্যদের নি‌য়ে জীবনযাপন কর‌তে হিমশিম খেতেন তিনি। স্বামী হরলার চন্দ্র দিন মজু‌রির কাজ কর‌তেন। সেখান থে‌কে যা আয় হ‌তো তার বড় এক‌টি অংশ ঘরভাড়া, পা‌নি বিল আর বিদ্যুৎ বি‌লের পিছ‌নে ব্যয় হ‌তো। নি‌জের কোনো জ‌মি না থাকায় গ্রাম থে‌কে ২৬ বছর আগে শহ‌রে এসে অন্যের বাসায় ভাড়ায় থাক‌তেন। আজ‌কে গিতা রা‌নী আর তার স্বামী মু‌জিবব‌র্ষের ঘর পেয়ে মহা খুশি। হেতা‌লিয়া বাধঘাট সংলগ্ন আশ্রয়ণে ঘর পেয়েছেন শিখা রা‌নি।

তি‌নি জানান, ২০০৭ সা‌লের সিড‌রে তার ঘরসহ সামান্য ভি‌টেবাড়িটুকুও পায়রা নদী‌তে ভে‌ঙে গিয়ে‌ছে। তারপর দীর্ঘ কয়েক বছর শহ‌রে অন্যের বাসায় ভাড়া থে‌কে গৃহস্থতালীর কাজ ক‌রে পরিবারের সদস‌্যদের নি‌য়ে জীবিকা নির্বাহ ক‌রে আসছিলাম। প‌রে খবর পে‌য়ে আবেদনের পর প্রধানমন্ত্রীর এক‌টি ঘর পেলাম। প্রধানমন্ত্রী‌কে ধন‌্যবাদ ও কৃতজ্ঞ জানাই।

এসব মু‌জিবব‌র্ষের ঘ‌রে বসবাসকারী শিশুরাও মুক্তবিহঙ্গের মতো উপভোগ কর‌ছে। নি‌জে‌দের মতো ছুটাছুটি কর‌তে পার‌ছে, খেলাধুলা কর‌তে পার‌ছে। দলবেঁধে কানামাছি ভো ভো খেল‌ছে। ত‌বে আশ্রয়ণের এসব ঘর থে‌কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনেক দূর হওয়ায় কয়েকটি আশ্রয়ণের শিশুরা প‌ড়ে‌ছে বিপাকে। যেমন নুপুর রানী পটুয়াখালী শে‌রে বাংলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। আগে ওই স্কুল সংলগ্ন ‌পো‌রি কাড়ীর এক‌টি বাসায় মা বাবার সা‌থে ভাড়ায় বসবাস কর‌তো। এখন সেই স্কুল থে‌কে প্রায় ৫‌ কি‌লো‌মিটার দূরে জৈনকা‌ঠির মু‌জিবব‌র্ষের আশ্রয়ণে বসবাস কর‌ছে। সেখান‌ থে‌কে শে‌রেবাংলা বিদ্যালয়ে আস‌তে যে‌তে প্রতি‌দিন তার খরচ হয় ১৫০ টাকা। যে খরচ‌টি তার আগে বহন কর‌তে হ‌তো না। তারপ‌রেও ন‌ুপুর খুশি। নি‌জে স্বাধীনভাবে থাক‌তে পার‌ছেন।

ঘরের আশপাশেই শাকসবজি লাগিয়ে হাঁস, মুরগির খামার করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এক সম‌য়ের ভূমিহীন ও গৃহহীনরা। সদর উপজেলার প্রতি‌টি আশ্রয়ণেই এখন সবাই নি‌জে‌দের স্বাবলম্বী ক‌রে গ‌ড়ে তুল‌ছেন।

জেলা আওয়ামী লী‌গের সহসভাপতি বীর মু‌ক্তি‌যোদ্ধা অ্যাড‌ভো‌কেট সুলতান আহ‌মেদ মৃধা জানান, প্রধানমন্ত্রীর মহ‌তি উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। দক্ষিণের জেলা হিসাবে পটুয়াখালী‌কে বি‌শেষ নজরদারিতে রে‌খে‌ছেন। যার ফ‌লে সদর উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা দি‌তে যা‌চ্ছেন। এতে আমরা আনন্দিত। এসব মানুষ এখন নিজেদেরকে স্বাধীন ম‌নে ক‌রে সরকারি বি‌ভিন্ন ট্রেনিং নি‌য়ে স্বাবলম্বী হ‌চ্ছেন। নি‌জেরা নি‌জে‌দের মতো ক‌রে কাজ কর্ম কর‌ছেন।

এদের তালিকা তৈরিটা ছিল খুবই জটিল। পাড়া মহল্লা থেকে ইউনিয়ন পরিষদ অতঃপর উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত ধাপে ধাপে যাচাই করা হয়েছে। যাতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে ব‌লে জানান পটুয়াখালী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট গোলাম সরোয়ার।

শুধু ঘরই নয় পূর্ণাঙ্গ নাগরিক সুবিধা ভোগ করার জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানি, বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ট্রেনিংও দেয়া হচ্ছে, যা‌তে তারা নি‌জেরাই সকল সু‌যোগ সু‌বিধার অংশীদা‌রিত্ব হ‌তে পা‌রেন ব‌লে জানান পটুয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুর রহমান।

জেলা আওয়ামী লী‌গের সভাপতি কাজী আলমগীর জানান, প্রধানমন্ত্রীর এই মহ‌তি উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। দে‌শের সর্বদক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীতে ব্যাপক উন্নয়ন হ‌য়ে‌ছে। এরই ধারাবাহিকতায় পটুয়াখালী সদরসহ ৫‌টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা আমা‌দের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। বড় বড় মেগা প্রক‌ল্পের এসব মানুষও এখন উপকার‌ভো‌গী হিসা‌বে থাক‌বে।

আর সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য কাজী কা‌নিজ সুলতানা জানালেন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতাভুক্ত শুধু পটুয়াখালী সদরই নয় আগামী ২২ মার্চ জেলার ৮টি উপজেলার মধ্যে পাঁচটি উপজেলাকেই গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করা হবে।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply