ইস্তাম্বুলে কৌশলের লড়াই: পেপের আরেকটি ‘মাস্টারক্লাস’ নাকি ইনজাগির চমক

|

ছবি: সংগৃহীত

ইস্তাম্বুলে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল আজ। ফুটবলীয় রূপকথায় বলা হয়, এই রাতে নাকি পৃথিবীতে নেমে আসেন স্বয়ং ফুটবল ঈশ্বর; আবির্ভূত হন কোনো নির্বাচিত খেলোয়াড়ের রূপে। আর তাতেই নির্ধারিত হয়, সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর নিজ অক্ষে একবার আবর্তনে কেটে যায় যে সময়, তাতে ইউরোপের রাজা হবে কারা! তবে ফুটবল পাল্টেছে অনেক; রূপকথায় বর্ণিত একজন সুপার হিউম্যানের প্রয়োজনীয়তার চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক এখন কৌশল। আর যেখানে এক প্রান্তের ডাগআউটে দাঁড়াবেন পেপ গার্দিওলা নাম্নী ফুটবল পণ্ডিত, সেখানে তাকে টেক্কা দিতে যাওয়ার জন্য দরকার পড়বে কাউন্টার মাস্টারক্লাস। ইস্তাম্বুলে সেই কাজ কতদূর করতে পারবেন ইন্টার মিলান কোচ সিমোনে ইনজাগি, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

চ্যাম্পিয়নস লিগের এবারের আসর শুরুর সময় হয়তো কেউই বাজি ধরেননি ইন্টার মিলানের পক্ষে। গ্রুপ পর্বে ইতালিয়ান ক্লাবটি যখন ছিল বায়ার্ন মিউনিখ ও বার্সেলোনার সাথে, তখন তো নেরাজ্জুরিদের হিসেবের বাইরে ফেলে দিয়েছিলেন বেশিরভাগ বিশ্লেষক দর্শক নির্বিশেষে ইউরোপিয়ান ফুটবলের খোঁজখবর রাখা প্রায় সবাই। তবে একে একে সব ধাপ পেরিয়ে ইন্টার মিলান এখন দাঁড়িয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে। চতুর্থ চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা থেকে সিমোনে ইনজাগির দল দাঁড়িয়ে মাত্র এক ধাপ দূরে।

সাধারণরত ৩-৫-২ ফর্মেশনে দলকে খেলান ইনজাগি। ফেদেরিকো ডিমার্কো এবং ডেনজেল ডামফ্রাইস- দুই উইংব্যাককে কাজে লাগানো হয়। দুই ফ্ল্যাঙ্ক ব্যবহার করে আক্রমণে ওঠার কৌশলই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করেন ইনজাগি। চ্যাম্পিয়নস লিগের চলতি আসরে ডিফেন্ডারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্টের যৌথ মালিক এখন ডিমার্কো। বায়ার্নের হোয়াও ক্যানসেলোর সাথে ৫টি অ্যাসিস্ট আছে তার। ইন্টারের খেলার আরেকটি দিক পরিষ্কার হবে এই পরিসংখ্যানে, চলতি আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মোট ২১০টি ক্রস বক্সে ফেলেছে ইন্টার।

সামনে দুই ফরোয়ার্ড; একজন লাউতারো মার্টিনেজ। আরেকটি জায়গার জন্য এডিন জেকো এবং রোমেলু লুকাকুর মাঝে চলে প্রতিযোগিতা। নিকোলো বারেল্লা, হেনরিক মিখতারিয়ান এবং হাকান কালানোগলুর মিডফিল্ড ছাড়তে চায় না কোনো খালি জায়গা। সেই সাথে ফরওয়ার্ড রানের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভাঙার কাজটাও ভালো করে থাকে ইন্টার মিডফিল্ড। তিনজনের ডিফেন্সে আলেসান্দ্রো বাস্তোনি, ফ্রান্সেস্কো অ্যাসারবি এবং মাতেও ডারমিয়ানের থাকার সম্ভাবনাই বেশি। ইনজাগি সাধারণত তার একজন ডিফেন্ডারকে কিছুটা সামনে এগিয়ে দিয়ে মিডফিল্ডে নিজ দলের জার্সির আধিক্য সৃষ্টি করতে চান। এই কাজটা বেশি করে থাকেন বাস্তোনি।

ম্যানচেস্টার সিটিও তাদের কৌশলে ঝুঁকি-বিমুখ প্রবণতার দিকেই বেশি নজর দেয়। গোল আসলে কিংবা না আসলেও সিটির খেলার ধরনে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা যায় না। তবে চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে প্রথম লেগ কিংবা রিয়াল মাদ্রিদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় লেগে যেমন সম্পূর্ণ খেলায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল গার্দিওলার দল, তেমনটি দেখা যায়নি এফএ কাপের ফাইনালে।

ম্যাচের শুরুতে ম্যান সিটি ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলে। তবে ইংলিশ সেন্টারব্যাক জন স্টোনসকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারই বানিয়ে ফেলেছেন পেপ। রদ্রির পাশে স্টোনস ডাবল পিভট হওয়ায় ফর্মেশন দাঁড়ায় ৩-২-৪-১। এতে জ্যাক গ্রিলিশ, কেভিন ডি ব্রুইনা, ইলকায় গুন্দোয়ান, বার্নাদো সিলভারা মিডফিল্ডে পান অনেক স্বাধীনতা ও সহায়তা। হাফ স্পেসকে কাজে লাগিয়ে গোলের সুযোগ তৈরি করতে সৃষ্টিশীলতার অভাব তাই অন্তত ম্যানসিটির মাঝমাঠে দেখা যায় না। এই পুরো দলটি কোনো ক্রিসমাস ট্রি হলে, তার অগ্রভাগে জ্বলজ্বলে তারকার নাম আর্লিং হাল্যান্ড। ১২ গোল নিয়ে চলতি আসরের সর্বোচ্চ গোলের মালিক এই নরয়েজিয়ান গোলমেশিন।

দুই কোচের কৌশলের মাঝে প্রভাব রাখতে পারে দুই ক্লাবের বেঞ্চের শক্তি। ইন্টার যেখানে জেকো কিংবা লুকাকুর মাঝে একজনকে বেছে নিতে পারে, সিটির বিলাসিতার জায়গা অনেক প্রসারিত। ফিল ফোডেন, রিয়াদ মাহরেজ, হুলিয়ান আলভারেজ, আইমেরিক লাপোর্তা, নাথান একে কিংবা কেলভিন ফিলিপস- সিটির ইতিহাসে এ পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তারা সবাই রাখতে পারেন অবদান।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply