‘সুপ্রভাত’ থেকে নাম পাল্টিয়ে ‘ভিক্টর ক্লাসিক’, থামছে না ঘাতক বাসের গতি

|

আতঙ্কের নাম ভিক্টর ক্লাসিক।

আল-আমিন হক অহন:

রাজধানীর সদরঘাট থেকে আব্দুল্লাহপুর রুটে এক আতঙ্কের নাম ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহন। বেপরোয়া এই বাসের চাপায় প্রাণ গেছে শিক্ষার্থী-সঙ্গীত শিল্পী-বেসরকারি চাকরিজীবীর। বাদ যাননি পুলিশ কনস্টেবলও। একসময় ‘সুপ্রভাত’ নামে রাজপথ দাপিয়ে বেড়াতো এই ভিক্টর ক্লাসিক। চার বছর আগে প্রগতী সরণিতে বিইউপি শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়ে হত্যা করলে রুট পারমিট বাতিল করে বিআরটিএ। তারপরেই রং বদলে রাতাবাতি হয়ে যায় ভিক্টর ক্ল্যাসিক। কিছু বাস চলছে সম্রাট, ট্রান্সলাইন ও মা ফাতেমার ব্যানারে।

নাম বদলানো সেই ভিক্টর ক্লাসিকই বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) দু’জনকে চাপা দেয়। রামপুরায় বিদেশপড়ুয়া শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়ে উল্টো পথে পালানোর সময় হাতিরঝিলে ধাক্কা দেয় প্রতিবন্ধী শিশুকে। ঘটনাস্থলেই দু’জনের মৃত্যু হয়। নগরবাসীর প্রশ্ন, এরপরও কেন থামানো যাচ্ছে না ভিক্টর ক্লাসিকের গতি?

সাধারণ মানুষের বক্তব্য, পরিবহন খাতে এতটাই দুর্নীতি হয় যে, তা বোধের অতীত। অনেক বাস চালকের লাইসেন্স নেই। রাস্তায় বের হলেই ভীতি গ্রাস করে। শঙ্কা জাগে নিরাপদে ঘরে ফেরা নিয়ে।

সাধারণত দুর্ঘটনার পর দেখা যায় লাইসেন্স নেই চালকের, বাসও ফিটনেসবিহীন। তাহলে দিনের পর দিন কীভাবে চলতো এসব বাস? সে প্রসঙ্গে ডিএমপি ট্রাফিকের পুলিশ সার্জেন্ট কমলেশ বিশ্বাস বলেন, আমরা তো নিয়মিত চেক করি, মামলা দেই। সিনিয়র স্যারের নির্দেশে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছি। যারা ওভারটেক করে তাদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। নিয়মিত কাউন্সেলিং করা হচ্ছে।

দুর্ঘটনার পর থেকেই গণমাধ্যমকর্মীদের এড়িয়ে চলছেন ভিক্টর পরিবহনের মালিক। তবে দুর্ঘটনার দায় পুরোটাই পথচারীদের ওপর চাপায় বাস মালিকরা। প্রজাপতি লিমিটেডের এমডি কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, পথচারিকেও সাবধান হতে হবে। যদিও ড্রাইভারেরও ভুল থাকে। যেমন গতকাল যে শিশুকে চাপা দিলো, ওইটা ড্রাইভারের দোষ। আমরা যখন রাস্তা ক্রস করি তখন ডানে-বামে তাকাই না। দ্রুত গতিতে যে গাড়ি আসছে, আমরা সেটাও লক্ষ্য করি না। এর সম্পূর্ণ দায় চালককে দেবো না। আমি সাধারণ মানুষকে বলবো, রাস্তা পারাপার একটু ঝুঁকিপূর্ণ। সাবধানতা অবলম্বন করলে হয়তো দুর্ঘটনা কমানো যেতো।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনের দাবি, বাস মালিকরাই চান না সড়কে শৃঙ্খলা ফিরুক। সিন্ডিকেটই যেন তাদের আরও বেশি বেপরোয়া করেছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, সরকারকেই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। বাস মালিকরা চায়, পরিবহন খাতে যতদিন অনিয়ম অব্যবস্থাপনা থাকবে ততদিন চাঁদাবাজি করা যাবে, দুর্নীতি করা যাবে।

মালিকদের সিন্ডিকেট ভেঙে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে দায়িত্বশীল সংস্থার সমন্বয়ের তাগিদ দিয়েছেন বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. এম শামসুল হক। বুয়েটের এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ বলেন, গণপরিবহনকে ধরে কোনো উন্নয়ন হয়নি। সামাল দেবেন কীভাবে? কিছু না দেখে রুট পারমিট আপনারা দিয়েই গেছেন। যেটাও দেয়া হয়েছে সেটাই খণ্ডিত। তিনজন মিলে একটা বাস কিনে এনেছে। এটারও রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। খুচরা করে আমরা কীভাবে সামাল দেবো?

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply