শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ভারতকে হারিয়ে শেষটা রাঙালো বাংলাদেশ; ম্লান গিলের সেঞ্চুরি

|

ছবি: সংগৃহীত

এশিয়া কাপে সুপার ফোরের নিয়মরক্ষার ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে সাকিব আল হাসান ও তাওহিদ হৃদয়ের জোড়া ফিফটি এবং শেষ দিকে টেলএন্ডারদের ব্যাটের ওপর ভর করে ভারতের বিপক্ষে ২৬৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি শুভমান গিল। টাইগারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ২৫৯ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। ফলে ৬ রানের জয় দিয়েই এশিয়া কাপের মিশন শেষ করলো সাকিব আল হাসানের দল।

শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ২৬৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে ভারত। অভিষিক্ত তানজিম সাকিবের হাতে প্রথম ওভারেই বল তুলে দেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বল হাতে সাকিবের শুরুটা হয় ওয়াইড দিয়ে। তবে ছন্দে ফিরতে খুব বেশি সময় নেননি তিনি। ওভারের দ্বিতীয় বৈধ ডেলিভারিতেই উইকেটের দেখা পান সাকিব। রোহিত শর্মা কভার ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে ধরা পড়েন আনামুল হক বিজয়ের হাতে। শূন্য রানেই সাজঘরে ফেরেন ভারতীয় দলের অধিনায়ক।

তিনে নামা তিলককেও বেশিক্ষণ টিকতে দেননি তানজিম সাকিব। অভিষেকের দিনে শুরু থেকেই অস্বস্তিতে ছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। সাকিবের তৃতীয় বলটি ছেড়ে দিয়েছিলেন তিলক, সেটি বেরিয়েও যায়। পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করেছিলেন পরের বলেও। কিন্তু বল ভেতরে ঢুকে স্টাম্পে আঘাত করে। ফলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরতে হয় ৫ রান করা এই ব্যাটারকে। ১৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বসে ভারত।

৪ নম্বরে নামা লোকেশ রাহুলকে সঙ্গী করে শুরু চাপ সামাল দেন ওপেনার শুভমান গিল। ৮৭ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন তারা। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই জুটির দুর্গে আঘাত হানেন শেখ মেহেদী। শামিম হোসেন পাটোয়ারীর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ১৯ রান করা রাহুল। একপ্রান্ত আগলে রেখে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৯ম ফিফটি তুলে নেন গিল।

৫ নম্বরে নামা ইশান কিশানও বেশিদূর এগোতে পারেননি। ৫ রান করা এই ব্যাটারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। রিভিউ নিলেও আউটের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি ইশান। এরপর ক্রিজে আসেন সুরিয়া কুমার যাদব। তাকে সঙ্গে নিয়ে ৫৫ বলে ৪৫ রানের জুটি গড়েন শুভমান গিল। তবে ভয়ঙ্কর ওঠা সুরিয়া কুমারকে বোল্ড আউট করে জুটি ভাঙেন সাকিব। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের শিকার হওয়ার আগে ৩৪ বলে তিন চারে ২৬ রান করেন সুরিয়া। তার বিদায়ে ৩২.৪ ওভারে ১৩৯ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় ভারত।

এরপর ক্রিজে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বাঁহাতি ব্যাটার রবীন্দ্র জাদেজা। মোস্তাফিজের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেন জাদেজা। বল গিয়ে সোজা আঘাত হানে স্টাম্পে। ১২ বলে ৭ রান করে সপ্তম ব্যাটার হিসেবে সাজঘরে ফেরেন জাদেজা। তবে একপ্রান্ত আগলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫ম সেঞ্চুরি তুলে নেন ভারতীয় দলের তরুণ তারকা ব্যাটার শুভমান গিল। ১১৭ বলে ৬টি চার আর ৪টি ছক্কার সাহায্যে তিন অঙ্কের ম্যাজিকাল ফিগার স্পর্শ করেন গিল।

সেঞ্চুরির পর আরও আগ্রাসী হয়ে খেলতে থাকেন গিল। আক্সার প্যাটেলকে সঙ্গী করে সপ্তম উইকেট ৩৯ রানের জুটি গড়েন গিল। ৪৪তম ওভারে শেখ মেহেদীর করা ৩য় বলে ছক্কা হাঁকান গিল, পরের বল আবারও তুলে মারতে গিয়ে লং অফে দাঁড়িয়ে থাকা তাওহিদ হৃদয়ের হাতে ধরা পড়েন তিনি। আউট হওয়ার আগে ১৩৩ বলে ৮টি চার ও ৫টি ছক্কার সাহায্যে ১২১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন এই ওপেনার।

গিল আউট হলেও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন আক্সার প্যাটেল। ৪৫ তম ওভারে নাসুম আহমেদকে ১টি ছক্কা ও ১টি চার হাঁকান আক্সার। ৪৮তম ওভারেও শেখ মেহেদীকে ১টি ছক্কা ও ১টি চার মারেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। তাতে ভারতের জয়ের জন্য শেষ ২ ওভারে দরকার ছিল ১৭ রান। ৪৯তম ওভারের প্রথম বলেই শার্দুল ঠাকুরকে ফেরান মোস্তাফিজ। একই ওভারের ৪র্থ বলে ডেঞ্জারম্যান আক্সারকে ফেরান কাটার মাস্টার। ৩৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কার সাহায্যে ৪২ রান করে সাজঘরে ফেরেন আক্সার।

শেষ ওভারে ভারতের জয়ের জন্য দরকার ছিল ১২ রান আর বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১টি উইকেট। বল হাতে আসেন অভিষিক্ত পেসার তানজিম সাকিব। প্রথম বলেই বাউন্সারে শামির হেলমেটে আঘাত, পরের বলে দারুণ এক স্লোয়ারে বোকা বানানো সাকিব ম্যাচ গ্রিপে নিয়ে নেন। তৃতিয় বলটিও ব্যাটে লাগাতে পারেননি শামি। চতুর্থ বল সীমানা ছাড়া করলেও পঞ্চম বলে ২ রান নিতে গিয়ে রান আউট হন শামি। ফলাফল ৬ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। টাইগারদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট পান মোস্তাফিজুর রহমান। ২টি করে উইকেট নেন শেখ মেহেদী এবং তানজিম সাকিব। এছাড়াও ১টি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ।

এর আগে, টসে হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। এবারের এশিয়া কাপে প্রথমবার ওপেনিংয়ে নেমে হতাশ করেন লিটন দাস। রানের খাতা খোলার আগেই মোহাম্মদ শামির বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন লিটন। ওপেনিংয়ে নেমে শুরুতে আশা জাগিয়েছিলেন তানজিদ হাসান তামিম। তবে দ্বিতীয় সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ১২ বলে ১৩ রান করে শার্দুল ঠাকুরের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি।

প্রায় ৯ মাস পর ওয়ানডে ম্যাচে সুযোগ পেয়ে সুবিধা করতে পারেননি জাতীয় দলে অনিয়মিত হয়ে যাওয়া খেলোয়াড় আনামুল হক বিজয়। শার্দুল ঠাকুরের খাটো লেন্থের বল তুলে মারতে গিয়ে টপ এজ হয়ে উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুলের হাতে ধরে পড়েন ৪ রান করা বিজয়। ৫ নম্বর পজিশনে এদিন ব্যাট করতে নামেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ক্রিজে এসে শুরু থেকেই ধুঁকছিলেন মিরাজ। দুইবার জীবন পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। ১৪তম ওভারে আক্সার প্যাটেলের বলে আউট হওয়ার আগে ২৮ বলে ১৩ রান করেন মিরাজ।

এরপর দলের হাল ধরেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও তাওহিদ হৃদয়। পঞ্চম উইকেটে জুটিতে তারা ১১৫ বলে ১০১ রানের জুটি গড়েন। তাদের দায়িত্বশীল জুটিতে খেলায় ফেরে বাংলাদেশ। সাবলীল ব্যাটিংয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৫৫তম ফিফটি তুলে নেন সাকিব। দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকা সাকিব ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকে কিন্তু হতাশা নিয়ে ফেরেন তিনি। শার্দুল ঠাকুরের বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৮৫ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় ৮০ রান করেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই পোস্টার বয়।

সাকিবের বিদায়ের পর শামীম পাটোয়ারীও পথ ধরেন প্যাভিলিয়নের দিকে। এই বাঁহাতি ব্যাটার ফেরেন মাত্র ১ রান করে। রবীন্দ্র জাদেজার বলে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হন তিনি। শামীম ফিরলে নাসুম আহমেদকে নিয়ে ৭৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন হৃদয়। অবশ্য এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। মোহাম্মদ শামির করা ব্যাক অব লেন্থ ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে তিলক ভার্মার হাতে ধরা পড়েন তিনি। ৮১ বলে  ৫টি চার ও দুই ছক্কায় ৫৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন হৃদয়।

শেষদিকে নাসুম ও শেখ মেহেদী বাংলাদেশের রান বাড়াতে থাকে। তুলনামূলক আগ্রাসী ছিলেন নাসুম। ৪৫ বলে ১টি ছক্কা ও ৬টি চারে ৪৪ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেন নাসুম। এরপর মেহেদী ও তানজিম হাসান সাকিব মিলে বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৬৫ পর্যন্ত নিয়ে যান। মেহেদী ২৯ ও সাকিব অপরাজিত থাকেন ১৪ রানে।

ভারতের হয়ে ১০ ওভারে ৬৫ রান দিয়ে তিনটি উইকেট শিকার করেন শার্দুল ঠাকুর। এছাড়াও মোহাম্মদ শামি নেন দুই উইকেট এবং একটি করে উইকেট শিকার করেন আক্সার প্যাটেল, রবীন্দ্র জাদেজা ও প্রসিধ কৃষ্ণা।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply