জামালপুরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী তোড়জোড়, বসে নেই অন্যরাও

|

জামালপুর জেলাজুড়ে এখন একটাই আলোচনা। কী হচ্ছে সামনে, কারা অংশ নিচ্ছে নির্বাচনে। এমন পরিস্থিতিতে মাঠে নেমেছেন বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরাও। একনজরে দেখে নেই জেলার সবক’টি নির্বাচনী এলাকার হালচাল।

জামালপুর-১ আসন:

দেওয়ানগঞ্জ ও বকশীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে জামালপুর-১ আসন। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন জয় পায় আওয়ামী লীগ।

বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও নৌকার প্রার্থী হতে চান। তিনি ছাড়াও নৌকার মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ নুর মোহাম্মদ ভল্লুক, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মো. মোখলেসুর রহমান পান্না ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার।

বিএনপি নির্বাচনে এলে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ সাবেক সংসদ সদস্য এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত, তার ছেলে ব্যারিস্টার শাহাদাত বিন জামান শোভন,  বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাহিদা আক্তার রিতা এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হতে চান।

জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুস সাত্তার ও উপজেলা জাতীয় পার্টির নেতা আবু সাঈম। ইসলামী আন্দোলনের বকশীগঞ্জ উপজেলা সভাপতি মাওলানা আবদুল মজিদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মো. জাহাঙ্গীর আলম এ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-১ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১ হাজার ৪৭৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৬৭ জন ও নারী ২ লাখ ১ হাজার ৯১০ জন। হিজড়া ভোটার আছেন ১ জন।

জামালপুর-২ আসন:

ইসলামপুর উপজেলা নিয়ে জামালপুর-২ আসন। এখানে ভোটার ২ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯৭ জন। এ আসনটি মূলত আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসাবে পরিচিত। তবে দলীয় কোন্দলে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে তৃণমূলের কর্মীদের মাঝে। এদিকে আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণে এ আসনে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে জাতীয় পার্টি।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পর থেকে জামালপুর-২ আসনে বেশিরভার সময় ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি জয় পেলেও পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয় পায় আওয়ামী লীগ।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলাল। তিনি ছাড়াও এই আসন থেকে মনোনয়ন চান জামালপুর-শেরপুর সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য হোসনে আরা, সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের মেয়ে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি মাহজাবিন খালেদ বেবি।

বিএনপি ভোটে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে মনোনয়ন প্রত্যাশী ইসলামপুর উপজেলা শাখার সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাবু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নবী নেওয়াজ খানসহ আরও কয়েকজন। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা আল মাহমুদ এ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।

জামালপুর-৩ আসন:

মাদারগঞ্জ এবং মেলান্দহ উপজেলা নিয়ে জামালপুর-৩ আসন। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৯১ সাল থেকে এ আসন দখলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগে মির্জা আজমের কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চান বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল।

এছাড়া মৎস্যজীবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মীর সামসুল আলম লিপটন ও অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মনজুর আহাদ হেলালও প্রার্থী হতে চান। এছাড়াও নির্বাচন করতে চান ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা বোরহান উদ্দিন ও সিপিবি’র শিবলুল বারী রাজু।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৩ আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ১ হাজার ৮৩০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৯ জন ও নারী ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯১ জন। হিজড়া ভোটার আছেন ২ জন। এ আসনে ভোট কেন্দ্র ১৫৩ টি আর ভোট কক্ষ ১০২১ টি।

জামালপুর-৪ আসন:

সরিষাবাড়ী উপজেলা নিয়ে জামালপুর-৪ আসন। ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৯ হাজার ১৭৭ জন। বিগত নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, জামালপুর-৪ আসনে পঞ্চম ও অষ্টম সংসদে বিএনপি, সপ্তম, নবম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ এবং দশম সংসদে জাতীয় পার্টি বিজয়ী হয়।

একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হয়ে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ডা. মুরাদ হাসান। তবে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও দলীয় মনোনয়ন চান ডা. মুরাদ। তিনি ছাড়াও এ আসনে নৌকার মাঝি হতে চান ঢাকার তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর রশীদ, সরিষাবাড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছানোয়ার হোসেন বাদশা, প্রয়াত আব্দুল মালেক এমপির ছেলে ইঞ্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান হেলাল।

দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চান দলের সাবেক মহাসচিব প্রয়াত ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদারের ভাতিজা ও জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবীর তালুকদার শামীম।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চান সাবেক সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ জোয়ারদার ও সরিষাবাড়ি উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ। ইসলামী আন্দোলনের আলী আকবর সিদ্দিকী ও বিএনএফ থেকে সাংবাদিক মোস্তফা বাবুল নির্বাচন করতে আগ্রহী।

জামালপুর-৫ আসন:

সদর উপজেলা নিয়ে জামালপুর-৫ আসন। ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, পঞ্চম ও ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি এবং সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ টানা বিজয়ী হয়।

আওয়ামী লীগের ঘাটি হিসেবে পরিচিত জামালপুর-৫ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও দলের টিকিট চান বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. মোজাফ্ফর হোসেন। তিনি ছাড়াও সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল হক হীরা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি, জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক আহমেদ চৌধুরী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চান জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মণি ও সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী সিরাজুল হক।

জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন খান, ইসলামী আন্দোলনের জামালপুর জেলা শাখার নেতা ডা. ইউনুছ আলী, সিপিবির শেখ মোহাম্মদ আক্কাস আলী এ আসনে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৫ আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩৬৮ জন ও নারী ২ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭০ জন। হিজড়া ভোটার আছেন ৭ জন। এ আসনে ভোট কেন্দ্র ১৫৯ টি আর ভোট কক্ষ ১০৯৬ টি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply