রাখাইন রাজ্য দখলের দাবি আরাকান আর্মির 

|

আরাকান আর্মির সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

জান্তা বাহিনীকে হটিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য নিজেদের দখলে নিয়েছে বলে দাবি করেছে অঞ্চলটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। গত বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) আরাকান আর্মি রাখাইন ও চিন রাজ্যের পালেতওয়ার ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ঘোষণা করে। মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এক বিবৃতিতে আরাকান আর্মি জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যের ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১৫টিতেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। এসময় তারা জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে ১৪২টি সেনা ঘাঁটি দখল করেছে বলে দাবি করেছে তারা।

আরাকান আর্মি আরও জানায়, বিগত ৪৫ দিন ধরে তারা টানা যুদ্ধ করে যাচ্ছিল জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে। অবশেষে রাজ্যের রাজধানী সিতওয়েসহ অন্য আরও ১৫টি শহরের নিয়ন্ত্রণ নেয় এএ। পাশাপাশি, পালেতওয়ার ১৭টি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানেরও দখল নিয়েছে তারা।

এখনও বিভিন্ন শহরে চলছে তুমুল সংঘর্ষ। অব্যাহত আছে বিমান হামলা। ধ্বংস হচ্ছে ঘরবাড়ি স্থাপনা। জান্তা সেনাদের হাতে বিনা কারণে আটক হচ্ছে বহু মানুষ। কেবল রাখাইনেই নয়, জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো মিয়ানমারজুড়েই বেশ সাফল্য লাভ করছে। শান প্রদেশের একটি বাণিজ্য কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে জাতিগত সংখ্যালঘু যোদ্ধারা। কয়েক দিন আগে চীন অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করার আশ্বাস দেওয়ার পর জান্তা বাহিনীর দখল থেকে শান প্রদেশ ছিনিয়ে নেয়ার দাবি করেছে সশস্ত্র বিদ্রোহীরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কাচিন বিদ্রোহীদের কাছে প্রশিক্ষণ নেয়া আরাকান আর্মি মিয়ানমারের জন্য সম্ভাব্য বড় ধরনের সামরিক হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। যেটি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির চেয়েও বেশি শক্তিশালী। শুধু আরাকান আর্মিই নয়, মিয়ানমারে সরব বেশ কিছু ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র বিদ্রোহীরাও।

শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলকে এক সাক্ষাৎকারে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জ মিন তুন বলেন, নামশানকে ঘিরে যুদ্ধ চলছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তার ভোন কিয়াও বলছেন, মিয়ানমার সেনারা ১০৫ মাইলের বাণিজ্য জোনও হারিয়ে ফেলেছে। এটি চীন সীমান্তে মিয়ানমারের শান রাজ্যের প্রধান বাণিজ্য প্রণালি হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

উল্লেখ্য, গত অক্টোবর মাসে মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একজোট হয়েছিলো আরাকান আর্মি (এএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এবং তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ)। জোটটি পরিচিতি পেয়েছে ‘থ্রি ব্রাদার্স অ্যালায়েন্স’ নামে।

গত ২৭ অক্টোবর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী থেকে মোট ৪২২টি ঘাঁটি ও সাতটি শহর দখল করে নিয়েছে বলে জানায় থ্রি ব্রাদার্স অ্যালায়েন্স। জোটগুলোর আক্রমণের ফলে জান্তার অন্য বিরোধীরাও নড়েচড়ে বসেছে ও মিয়ানমারের পূর্ব এবং পশ্চিমেও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। ১৩ নভেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত রাখাইনসহ আশপাশের শহর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে এক লাখের বেশি মানুষ।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply