সরকারি হাসপাতালে কমিশন চক্র, জড়িত খোদ চিকিৎসকরাই

|

আখলাকুস সাফা, চুয়াডাঙ্গা:

চুয়াডাঙ্গায় সরকারি হাসপাতাল ঘিরে চলছে ক্লিনিক আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দাপট। এ কাজে নিয়োজিত দালালরা কমিশনের বিনিময়ে রোগীদের ভাগিয়ে নেয় বেসরকারি হাসপাতালে। আর এর নেপথ্যে কলকাঠি নাড়েন সরকারি ডাক্তাররাই।

সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় গিয়ে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিজেই খুলে বসেছেন অবৈধ ক্লিনিক। সেখানে চলছে সরকারি হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে আনা রোগীদের চিকিৎসা।

একইসঙ্গে সরকারি হাসপাতালের অবস্থা ঠিক তার বিপরীত। রোগী দেখাতে গিয়ে মিলছে না ডাক্তার। থেকেও নেই প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা। আর এই অজুহাতে, রোগীদের অন্য পথ দেখায় দালালরা। নিয়ে যায় বেসরকারি ক্লিনিকে।

যা ধরা পড়েছে যমুনার ক্যামেরায়। ক্যামেরা দেখে এ সময় এদিক-সেদিক পালানোর চেষ্টা করে দালালরা। যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিল নারী। এছাড়া কে রোগী আর কে দালাল, তৃণমূল কিংবা মফস্বলের মধ্যবিত্তদের জন্য তা বোঝা খুবই কষ্টসাধ্য।

স্বাস্থ্যখাতের চিত্র যখন এমন তখন প্রশ্ন আসতেই পারে, এর নেপথ্যে রয়েছে কারা? অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাসপাতালে দায়িত্বরত সরকারি চিকিৎসকদের যোগসাজশ রয়েছে বেসরকারিতে। কারো আছে নিজেরই ক্লিনিক। হাতেনাতে যা ধরা পড়েছে যমুনা টেলিভিশনের কাছে।

দেখা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহকারি সার্জনের কাজটা করছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি যাদের চিকিৎসা করেন, বেশিরভাগ রোগীকেই পাঠানো হয় আরেকটি ক্লিনিকে। যা তার নিজের।

কয়েকজন রোগীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার সরকারি হাসপাতালে ওষুধ দেয়া হয় না তেমন। কেউ কেউ জানান কেবলমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসা শেষেই তাদের রেফার করে দেয়া হয় বাইরের ক্লিনিকে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাদীকে প্রশ্ন করলে তিনি তার নিজের ক্লিনিক থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। উল্লেখ করেন সেখানে তিনি মাঝে মাঝে রোগী দেখতে বসেন। তবে সেটির মালিকানা তার নয়।

ডা. হাদীর কথার সত্যতা খুঁজতে যায় যমুনার টিম। গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিকটা তার নিজেরই। কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায় বিষয়টি। যা স্বীকার করেন ক্লিনিকটিতে কর্মরতরাও।

খুঁজতে খুঁজতে আরও ভয়াবহ বিষয় উঠে আসে অনুসন্ধানে। ক্লিনিক বলা হলেও এটি আসলে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। পরীক্ষা-নীরিক্ষার অনুমোদন নিয়ে এখানে করা হচ্ছে রোগী ভর্তি। যা রীতিমত আইনের সুস্পষ্ট লংঘন।

অনিয়মে চালানো অবৈধ এ ক্লিনিকটি পুরো জেলায় সবচেয়ে বড়। আলমডাঙ্গার বাইরে অন্যান্য উপজেলার রোগীদেরও চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয় এখানে। এই নামসর্বস্ব ক্লিনিকে যারা ভর্তি হন, তারা মূলত সরকারি হাসপাতাল ঘুরে আসা। যে চিকিৎসা সরকারিতে হয় না, তা এখানে ঠিকই হয়। যার জন্য, গুণতে হয় বাড়তি টাকা।

/এমএইচআর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply