বঙ্গবন্ধুর ‘আমার দেখা নয়াচীন’ যেভাবে হয়ে উঠল গ্রাফিক নভেল

|

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালে শান্তি সম্মেলনে যোগ দিয়ে চীন ভ্রমণের যে অভিজ্ঞতা সঞ্চার করেছিলেন, তা লিপিবদ্ধ করেন ‘আমার দেখা নয়াচীন’ ভ্রমণকাহিনীতে। বইটিকে গ্রাফিক নভেলে রূপান্তর করে প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগের গবেষণা শাখা সিআরআই (সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন)।

প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ ছিল এই ঘরানার প্রথম কাজ। মূলত গ্রাফিক নভেলপ্রেমীদের জন্য এবং বঙ্গবন্ধুকে শিশু-কিশোরদের বোঝার মতো করে উপস্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’ প্রকাশ করা হয়। প্রকাশের পর দারুণ সাড়া পাওয়া যায়। ১০ খণ্ডে সেটি প্রকাশের পর বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইকেও পাঠকদের জন্য গ্রাফিক নভেল আকারে উপস্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়।

এর প্রকাশক হিসেবে আছেন সিআরআইয়ের ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। চিত্রায়ণ করেছেন সব্যসাচী মিস্ত্রী। কাহিনী বিন্যাস ও সংলাপে কাজ করেছেন সিদ্দিক আহমেদ। প্রজেক্ট কিউরেশন ও সম্পাদনায় আছেন শিবু কুমার শীল। সেই গ্রাফিক নভেলের আইডিয়া, প্রস্তুতি এবং দীর্ঘ চিত্রায়ণ প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলেছেন এর মূল কারিগরেরা।

রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক বলেন, আমি একদিন মাকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন নানাকে (বঙ্গবন্ধু) নিয়ে কোনো কমিক বুক (গ্রাফিক নভেল) নেই? এই আইডিয়াটা আমার মাথায় অনেক দিন ধরে ছিল। বড় হয়ে সুযোগ পেলাম যখন, তখন ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ থেকে গ্রাফিক নভেল করার পরিকল্পনা করলাম। এরপর করা হলো ‘আমার দেখা নয়াচীন’ বইটি থেকে। এই গ্রাফিক নভেলের ক্ষেত্রে কিছু কিছু লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ ছিল আমাদের। তবে সেটা উৎরাতে পেরেছি সবার সম্মিলিত প্রয়াসে।

গ্রাফিক নভেলটির অন্তরালের গল্প বলছেন সিআরআইয়ের ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক

প্রজেক্ট কিউরেটর শিবু কুমার শীল এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাকে যখন এই আইডিয়াটার কথা প্রথমে বলা হলো, প্রথমেই ভেবেছি– সব্যসাচী মিস্ত্রী ছাড়া এটা অসম্ভব। সব্যসাচীকে প্রস্তাব দেয়ামাত্র রাজি হলো। এই চীন সফরে যারা ছিলেন, তাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বন্ধুত্বপূর্ণ সময় কেটেছে। তাদের মধ্যে অনেক রকম হাস্যরস বা ফাজলামো হয়েছে। ঐতিহাসিক এইসব চরিত্রদের আরেকটি দিকের যে দেখা পাওয়া গেলো, তা কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই আমরা পেয়েছি।

এনিমেটর সব্যসাচী মিস্ত্রী বলেন, ক্যারেক্টারটি যথার্থ করার খাতিরে আমরা নিয়মিত বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আসতাম। এখানে আগত মানুষেরা যখন বঙ্গবন্ধুর খুঁটিনাটি বিষয় জানতে পারতো, তারা অবাক হতো। এই বইয়ের পটভূমি হংকং ও চীন নিয়ে। সেই সময়ের অনেক ডেটা-ছবি আমরা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমরা যা পাচ্ছিলাম, নিজেদের মাঝে আদান-প্রদান করছিলাম। খুঁজতে খুঁজতে একটা হোটেল আমরা পেলাম কিন্তু সেটা আর তার আগের রূপে নেই। পরে পুরোনো ফাইল খুঁজে সেভাবে আঁকার চেষ্টা করা হলো।

সংলাপ রচয়িতা সিদ্দিক আহমেদ বলেন, ওই সময়ের তথ্যগুলো বইটি ছাড়া আর কোথাও তেমন পাওয়া যায় না। আমরা গুগল করে যা পেয়েছি, লুফে নিয়েছি। ওই সময়ের লোকেশনগুলো দেখে ফিল নেয়ার চেষ্টা করেছি। এবং ক্যারেক্টারগুলোকে অনেকটাই ‘হিউম্যান’ জায়গায় নেয়ার চেষ্টা ছিল আমাদের।

নভেলটির প্রচ্ছদে যুবক বঙ্গবন্ধুকে দেখা যায় কোট-টাই পরা অবস্থায় চিরপরিচিত চশমা চোখে। পেছনে চীনের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ছবি।

‘আমার দেখা নয়াচীন’-এ রয়েছে ১৯৫২ সালে শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে চীন ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা, যা নিজের নোটখাতায় টুকে নিলেও তখনই পুরোপুরি লিখে উঠতে পারেননি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ বিষয়ে লেখার অবসর মেলে ১৯৫৪ সালে, কারাগারে বসে। প্রায় ৬৫ বছর পর ২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় বাংলা একাডেমি থেকে বই আকারে প্রকাশিত হয় এই ভ্রমণকাহিনি।

‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রাফিক নভেলটি সংগ্রহ করা যাবে অমর একুশে বইমেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্থাপিত সিআরআইয়ের ৮৭৮-৯৭৯ নম্বর এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৯-৩০ নম্বর স্টলে।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply