‘যে জলে আগুন জ্বলে’র প্রথম প্রচ্ছদ প্রকাশ করলো হেলাল হাফিজ

|

হেলাল হাফিজ। বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিদের তালিকা করা হলে অগ্রভাগে থাকবেন তিনি। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময়ে রচিত তার ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি রাতারাতি খ্যাতির চূড়ায় বসায় তাকে। এখনও কবিতাপ্রিয় মানুষ বিড়বিড় করে ওঠে– এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়

প্রথম কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে হেলাল হাফিজ পাঠকমনে যে নাড়া দিয়েছেন, তা এখনও ইতিহাস হয়ে আছে। ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থটি ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয়। এখন পর্যন্ত ৩০টিরও বেশি সংস্করণ হয়েছে বইটির। যা এর আগে বাংলাদেশের কোনো কবিতার বইয়ের বেলায় ঘটেনি। এই কবিতার বইয়ের পাঠকের সংখ্যা যে অগণিত, তা বলাই বাহুল্য।

সম্প্রতি কবি হেলাল হাফিজ তার ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্ট শেয়ার করেছেন। সেখানে ‘যে জলে আগুন জ্বলে’র প্রথম প্রচ্ছদের ছবি শেয়ার করে লেখেন– ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬ সাল। বাংলা একাডেমি বইমেলা। অনিন্দ্য প্রকাশনী থেকে বের হয় ‘যে জলে আগুন জ্বলে’। প্রচ্ছদটির স্রষ্টা খালিদ আহসান।

ধ্রুপদি এই বইটির আবরণে পরবর্তীতে অনেক প্রচ্ছদ মাথা উঁচু করে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছে। পাঠক তা পছন্দও করেছে। কিন্তু ভক্তদের কাছে স্রষ্টার প্রথম কোনো কিছু সর্বদাই ‘ভিনতেজ’ এক স্বাদ এনে দেয়। তাই আশি ছুঁই ছুঁই এই কবির ভক্তরা সেটা দেখে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন। কেউ কেউ কমেন্টবক্সে তাদের নস্টালজিয়ার কথা বলেন।

সেই ধ্রুপদি প্রচ্ছদ

হাসানাল আব্দুল্লাহ নামে এক কবি লিখেছেন, ৮৮-৮৯ সালে ‘শাপলাকঁড়ি’র আসরে নিজের কবিতা পড়ে প্রথম হই এবং এই বইটি পুরস্কার হিসেবে পেয়ে কি যে আনন্দিত হই! এখনও তার কাছে সেই সময়ের বইটি রয়েছে বলে জানান তিনি। শোয়াইব জিবরান নামে আরেক লেখক বলেন, আমাদের কিশোর বয়েসে কবিতার আগুন ধরানো সেই বই। ফারহানা হক নামে এক ভক্ত জানান, এই বইটা জীবনের অংশ হয়ে আছে। ভালোবাসা জানবেন, প্রিয় কবি।

পাঁচ বছর পূর্বেও হেলাল হাফিজের মৌলিক কবিতার বই ছিল একটিই– ‘যে জলে আগুন জ্বলে’। অনেকেই তখন মনে করেছিল, জীবদ্দশায় আর কোনো মৌলিক কবিতার বই বের হবে না ৭৮ বছর বয়সী এই কবির। তবে সেটা ঘটেনি। ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় কবির দ্বিতীয় মৌলিক কবিতার বই– ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’। এর আগে ২০১২ সালে বেরিয়েছিল ‘কবিতা ৭১’ নামে তার পূর্বেকার কবিতার ইংরেজি অনুবাদ।

‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ ব্যাপক পাঠক সমাদৃত না হলেও ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ এখনও মানুষের কাছে সমান প্রিয়। এখনও প্রিয়তমা তার প্রেমিকের কাছে এই বইটি কিনে দেয়ার আবদার করে। এখনও ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ লুফে নেয় মানুষ প্রতিটি বইমেলায়। সেই বইয়ের একেকটি কবিতা যেন পাঠকের কাছে একেকটি অনুভূতির কক্ষ। কখনও সেই কক্ষ হয় দ্রোহ বা প্রতিবাদের, কখনও হয় মনের না বলা গভীর কোনো টঙ্কারের।

হেলাল হাফিজ তার কবিতায় বলেন– ‘তুমি আমার নিঃসঙ্গতার সতীন হয়েছ’, ‘নিউটন বোমা বোঝে, মানুষ বোঝে না!’ অথবা ‘আমার দুঃখ আছে কিন্তু আমি দুঃখী নই’। এসব চরণ যখন একজন পাঠক পড়েন, তার বুঝতে বাকি থাকে না; অনুভূতি কতটা গভীর সঞ্চিত হলে এমন কথা বলা যায়।

এখনকার প্রচ্ছদ

পাঠকের মনে হয়, হেলালের কবিতার পংক্তির ওজন কত? সেটা কি পর্বত সমান ভারী? নাকি আকাশ আর মাটির মধ্যকার যে দূরত্ব, তার সমান? এই প্রেমিক অথবা অভিমানী কবির কবিতা পড়তে পড়তে আপনার যদি উপলব্ধি হয়– জীবনকে আহত ফুলের ডগায় তুলে এনেছেন হেলাল, আপনাকে দোষ দেয়া যায় না। কারণ, আপনি এই বাক্যগুলোর সাক্ষী।

‘মানুষ না বোঝে যদি আরেক মানুষ
আমি আহত হবো না, আহত হবো না
কবিতার কসম খেলাম আমি শোধ নেবো সুদে ও আসলে
এবার নিহত হবো
ওসবের কোনো কিছুতেই তবু শুধু আর আহত হবো না..’

গ্রন্থনা: আল মাহফুজ  


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply