পুলিশ সদরে চাকরি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ এএসআই রবিউল

|

মনিরুল ইসলাম, সিনিয়র রিপোর্টার:

প্রায় একযুগ ধরে পুলিশ বিভাগে আছেন রবিউল ইসলাম। এই রবিউল ছোটবেলায় বাবা হারান। তখন থেকে তাকে বড় করেন চাচা আব্দুর রাজ্জাক। সেই চাচা-ফুফুদের পৈত্রিক সম্পত্তি দখল করে নিয়েছেন রবিউল। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ করলে, প্রভাব খাটিয়ে চাচা রাজ্জাকের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে ১৫দিন জেলও খাটান।

রবিউল বর্তমানে পুলিশ সদর দফতরের সংস্থাপন শাখার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই)। পুলিশের নিয়োগ ও বদলির বিষয়গুলো দেখভাল করে এই শাখা। কনস্টেবল হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন ২০০৭ সালে। পরে পদোন্নতি পেয়ে হন এএসআই। দুর্নীতি করে ২ কোটি ১৯ লাখ টাকার জমির (বসতভিটা, বাগান ও দোকান ঘর) মালিক হয়েছেন রবিউল।

যশোরের কেশবপুর ও রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরে মোট পাঁচটি জমির মালিক তিনি। এর দু’টি কামরাঙ্গীর চর ও তিনটি যশোরের কেশবপুরে। এরমধ্যে চারটি নিজের নামে, আরেকটি কিনেছেন শ্বশুর ও ভগ্নিপতির নামে। এছাড়া, পুলিশ সদর দফতরে ৪২ লাখ ৮০ হাজার টাকার দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়েছে। এরই মধ্যে অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। দুদকে রবিউলের নামে অভিযোগ জমা হয় গত ২০ জুন।

রবিউলের চাচা আব্দুর রাজ্জাক জানান, “পুলিশ সদরে বড় বড় অফিসারদের সাথে তার খাতির, এই প্রভাব দেখিয়ে সম্পদ অর্জন করেছে রবিউল। এনিয়ে বারবার অভিযোগ করলেও স্থানীয় পুলিশ আমাদের সহায়তা না করে উল্টো আমাদের হয়রানি করে। এখন পুলিশ সদর ও দুদকে অভিযোগ জানিয়েও দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। উল্টো অভিযোগ জানিয়ে জেল খেটে পুরো পরিবার আমরা বাড়িছাড়া। ”

রবিউলের অবিশ্বাস্য সম্পদ:

ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে প্রায় দুই কাঠা জমি। এগুলোর দলিলে দাম কম দেখানো হলেও দুই খন্ড জমির বর্তমান বাজার মূল্য ৮০ লাখ। যশোরের কেশরপুর পৌর এলাকায় আছে ৩ শতাংশ জমি, যা কেশবপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিস থেকে দলিল হয় ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। জমির বর্তমান বাজার মূল্য ২১ লাখ টাকা। কেশবপুর পৌর এলাকায় রবিউলের রয়েছে আরও প্রায় ১১ শতাংশ জমি। দলিলে জমির দাম দেখানো হয়েছে ১৬ লাখ ২১ হাজার টাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই জমির বাজার বর্তমান বাজার মূল্য ৪৮ লাখ টাকা। এছাড়া, কেশবপুর পৌর এলাকায় বাগান ও স্থাপনাসহ দোকান কেনা হয়েছে এএসআই রবিউলের শ্বশুর মো. শহীদুল ইসলাম ও ভগ্নিপতি মো. ইয়াছিন আলীর নামে। এসবের বর্তমান বাজার মূল্য ৬০ লাখ টাকা। রবিউলের শ্বশুর শহীদুল পেশায় স্থানীয় একটি মাদ্রাসার দফতরি এবং তার ভগ্নিপতি ইয়াছিন আলী পেশায় কৃষিজীবী। তাদের কেউই আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিলনা তারাও এখন বহু টাকা-পয়সা ও জমির মালিক।

দুদক ও পুলিশের সদর দফতরে রবিউলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ:

রবিউলের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, মাদক ব্যবসা ও বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ জমা পড়েছে দুদক ও পুলিশ সদর দফতরে।

অভিযোগে বলা হয়—

•কেশবপুরের মাদক ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফের ঘনিষ্ঠ রবিউল। লতিফ একাধিকবার গ্রেফতার হলেও তাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন রবিউল।
•কেশবপুরের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন রবিউল।
•পুলিশ সদর দফতরে চাকরির সূত্রে কেশবপুরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেন।
•তদবির বাণিজ্য করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন।
•মঙ্গলকোটের এনামুল মাস্টারের ছেলে মাসুম হোসেন সরদারকে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়ে ছয় লাখ টাকা নিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কনস্টেবল মাসুম বর্তমানে ঝিনাইদহে কর্মরত আছেন।
•শিকারপুরের আজিজার গাজীর ছেলে তরিকুল হোসেনকে কনস্টেবল পদে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন রবিউল। এজন্য আজিজারের কাছ থেকে নিয়েছেন ১৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। তরিকুল কর্মরত আছেন চুয়াডাঙ্গায়।
•দেউলি গ্রামের চিনু মোড়লের ছেলে মনিরুল ইসলাম মনিরকে কনস্টেবল পদে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়ে নিয়েছেন ১২ লাখ টাকা। মনির কর্মরত আছেন খুলনায়।
•আটন্ডা গ্রামের ফকির সরদারের ছেলে বুলুকে ডাকাতির মামলা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য নিয়েছেন ১ লাখ ১০ হাজার টাকা।
•পুলিশের চাকরি ও মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ার নামে বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আফসার গাজীর কাছ থেকে নিয়েছেন ১০ লাখ টাকা।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে যমুনা টেলিভিশন থেকে সপ্তাহ ধরে তার দুই নম্বরে কল দেয়া হলেও ফোন ধরেননি রবিউল।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply