করোনার প্রভাব: ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকরা পাচ্ছেন বিশেষ ছাড়

|

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারা দেশে চলমান ‘লকডাউন’র মধ্যে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক ব্যাংকিং কার্যক্রম। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকদের বিশেষ ছাড় দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।

এর মধ্যে রয়েছে- সুদবিহীন কিস্তি পরিশোধের সময় বৃদ্ধি, কিস্তি পরিশোধের সীমা কমানো, কিস্তির মেয়াদ বাড়ানো। এছাড়া ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা ও ঋণসীমাও বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

আরও জানা গেছে, ইতোমধ্যে সিটি ব্যাংক তাদের ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকদের কিস্তি পরিশোধের সীমা শিথিল করেছে। সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক তাদের ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকদের কিস্তি পরিশোধের সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে।

অন্য ব্যাংকগুলোও এ ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের সীমাও বাড়ানোর জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের বিপরীতে সাধারণত প্রতি মাসের শেষে ৯ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে বকেয়া কিস্তির অর্থ পরিশোধ করতে হয়। ব্যাংক ভেদে কিস্তি পরিশোধের সীমা ও কিস্তির পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের হয়।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে পরবর্তী সময়ে গ্রাহকদের জরিমানা দিয়ে কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। জরিমানার অঙ্কও ব্যাংক ভেদে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। এর সঙ্গে দিতে হয় ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এ হিসাবে ৪৫ থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত ভ্যাট দিতে হয়।

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে দেশে ‘লকডাউন’ চলছে। ৪ এপ্রিল প্রথম দফার মেয়াদ শেষ হবে। এরপর আরও এক দফা বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সময়ে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর কিছু শাখা সীমিত সময়ের জন্য খোলা থাকছে।

ব্যাংকিং সেবাও দেয়া হচ্ছে সীমিত আকারে। ফলে সব ধরনের ব্যাংকি সেবা এখন মিলছে না। এছাড়া জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গ্রাহকরা বাসা থেকে বের হতে পারছেন না। এ কারণে অনেক গ্রাহক ক্রেডিট কার্ডের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকদের বিশেষ ছাড় দিচ্ছে।

সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের মার্চের কিস্তি পরিশোধের শেষ সময় ১২ এপ্রিল। ওই সময়ে অনেকের পক্ষে কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব নাও হতে পারে। এ বিবেচনায় তারা কার্ডের কিস্তি পরিশোধের সময় ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহকদের কিস্তি পরিশোধের সীমা কমিয়ে দিয়েছে। আনুপাতিক হারে গ্রাহকরা কম পরিমাণে এখন কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন। কিস্তির বাকি অর্থ পরবর্তী সময়ে সমন্বয় করা হবে।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের কিস্তির টাকা অ্যাপসের মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক অনলাইনে, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদিত বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে কিস্তি পরিশোধের সুযোগ দিয়েছে।

ব্র্যাক ব্যাংক ৭৪টি শাখা খোলা রেখেছে। এগুলোতে ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধের সুযোগ রেখেছে। এছাড়া তারা এটিএম থেকে নগদ টাকা তোলার সীমাও বাড়িয়ে দিয়েছে।

ওষুধ ও নিত্যপণ্য কেনার ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সীমা বাড়িয়েছে সব ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশে তারা এ পদক্ষেপ নিয়েছে। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এসব পণ্য কিনতে প্রতিদিন ১৫ হাজার টাকা খরচ করা যাবে। মাসে করা যাবে ১ লাখ টাকা। এর বাইরে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের সীমাও বাড়ানো হয়েছে।

যেসব আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক বিদেশে গিয়ে আটকা পড়েছেন তাদের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের সীমা বাড়ানো হয়েছে কোটার চেয়ে বেশি। ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এ সীমা নির্ধারিত হবে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি ভ্রমণ কোটায় বছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ডলার নিতে পারেন।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোটার চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হলেও তা ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের ক্রেডিট কার্ডে ছাড় করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশে ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক রয়েছেন প্রায় ১৩ লাখ। প্রতি মাসে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। দেশে প্রায় ৪০ হাজার পয়েন্ট অব সেলস (পস) মেশিন রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে নিত্যপণ্য ও ওষুধ কেনাকাটা করা যায়। সব পস মেশিনও খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply