পটুয়াখালীতে সড়কে কাঠের তক্তা বিছিয়ে চাঁদাবাজি

|

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

পটুয়াখালীর কুয়াকাটার তুলাতলী এলাকার একটি সড়কে কাঠের তক্তা বিছিয়ে অভিনব পন্থায় যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের নির্দেশে কতিপয় যুবক দিন-রাত সমানতালে এই চাঁদা আদায় করছে বলে ভুক্তভোগীরা জানায়।

উপজেলা প্রশাসন কিংবা পাউবো কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই জনসাধারণের সেবার নামে গত তিনমাস ধরে ফ্রি স্টাইলে এমন চাঁদাবাজি করলেও স্থানীয় প্রশাসন কিংবা কোনো জনপ্রতিনিধি এ ব্যাপারে কোনো ভ্রুক্ষেপ করেনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটা-কলাপাড়ার বিকল্প সড়কের উপর পানি নিষ্কাশনের জন্য উপকূলীয় বেড়িবাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প’র (সিইআইপি-১) আওতাধীন মৎস্যবন্দর আলীপুর থেকে চাপলী বাজার পর্যন্ত তিনটি সুইজ গেট নির্মাণ করছে চায়না সিকো কোম্পানি। এর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। বর্ষা মৌসুমে নির্মাণাধীন তিনটি সুইজগেটের উপর ইট কিংবা খোয়া না দেওয়ায় বৃষ্টির পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে যায়। আর এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ওই সড়কে চলাচলরত মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, টমটমসহ ছোট বড় অন্তত দুই শতাধিক যানবাহনের চালকরা। যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা না করেই সুইজগেট নির্মাণ করায় এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়সহ ওই সড়কে চলাচলরতদের। এমন অবস্থায় মানুষের দুর্ভোগকে পুঁজি করে তিনটি সুইজগেটের মধ্যে তুলাতলী সুইজগেটের উপর কাঠের তক্তা বিছিয়ে স্থানীয় কবির পঞ্চায়েত, মো. ছগির ও তার ছেলে আল আমিন ও হালিমসহ পাঁচ যুবক মিলে চলাচলরত যানবাহন থেকে প্রকারভেদে ১০টাকা থেকে ৩০টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে আসছে।

ওই সুইজগেট দিয়ে চলাচলকারী মোটরসাইকেল চালক মো. রুবেল খান জানান, কুয়াকাটা থেকে কাউয়ার চর, পায়রা বন্দরে পর্যটকসহ স্থানীয়দের নিয়ে প্রায় সময়ই তার আসা যাওয়া করতে হয়। যতোবার তিনি যাতায়াত করেছেন ততোবারই ১০টাকা করে দিতে হয়েছে।

রুবেল আরও জানান, গত দুই মাসে দুই হাজারের অধিক টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে তাকে। টাকা না দিলে যানবাহন নিয়ে যাতায়াত করতে দিচ্ছে না। শাহিন, রুবেল মোল্লা, আলমাছ ও রাশেলসহ এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগীরা।

তবে অভিযুক্ত আল আমিন জানান, ৪০ হাজার টাকা খরচ করে তারা তক্তা বিছিয়েছে। স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সমন্বয়ে তারা চার-পাঁচজন মিলে এ টাকা উত্তোলন করছে। লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনছার উদ্দিন মোল্লা, মহিপুর থানা পুলিশ ও পাউবো কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়েই তারা এ টাকা উত্তোলন করছে বলে আল আমিন সাংবাদিকদের জানান।

এছাড়া সাবেক ইউপি সদস্য মো. শাহালম বিশ্বাস জানান, আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ, থানা পুলিশ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানে। তারা কেউ কখনো এ বিষয়ে প্রশ্ন করেনি। সেখানে সাংবাদিকদের এটা দেখার বিষয় নয়। এ সময় শাহালম বিশ্বাস এ টাকা উত্তোলনের বিষয়ে লেখালেখি করলে সাংবাদিকদের দেখে নেয়ারও হুমকি দেন এবং টাকা উঠানো বন্ধ করার ক্ষমতা কারো নেই বলেও তিনি জানান।

ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইব্রাহিম ব্যাপারী বলেন, তার কাছে ওরা (যারা চাঁদা আদায় করছে) বলেছে চেয়ারম্যান টাকা উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে। চেয়ারম্যান অনুমতি দিলে সেখানে তার কি বলার আছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে লতাচাপলী ইউপি চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা জানান, কর্দমাক্ত সড়কে কাঠের তক্তা বিছিয়ে চাঁদাবাজির অনুমতি তিনি কাউকে দেননি। আর এ বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই।

একই কথা বলেছেন উপকূলীয় বেড়িবাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প’র (সিইআইপি-১) প্রকৌশলী মো. মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, কে বা কারা তক্তা বিছিয়ে টাকা উত্তোলন করছে এটা তাদের দেখার বিষয় নয়।

জানতে চাইলে মহিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মনিরুজ্জামান জানান, তক্তা বিছিয়ে সড়কে চাঁদাবাজি করছে এটা তার জানা নেই। মহিপুর থানা এলাকায় কোনো চাঁদাবাজদের স্থান নেই। বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply