মানসিকতার বদ্ধ দরজায় কড়া নাড়বে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’

|

রেহানা মরিয়ম নূর সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাঁধন।

‘রেহানা মরিয়ম নূর’। নাম সিনেমার, নাম কেন্দ্রীয় চরিত্রের। পেশায় মেডিকেল শিক্ষক এক মধ্যবয়স্ক নারীর চরিত্র রেহানা মরিয়ম নূর। যাকে ঘিরেই নির্মিত হয়েছে পুরো সিনেমা। তার একটা মেয়ে আছে, স্বামী নেই। সিঙ্গেল মাদার রেহানার নিজেকে নিজেরই চালাতে হয়। প্রচলিত সমাজে চলতে গিয়ে তার হার না মানা আর সমাজের সব জায়গায় শক্তভাবে বোনা পৌরুষ মানসিকতার বন্ধ দরজায় তার সাহস করে কড়া নাড়ার গল্প চিত্রিত হয়েছে এই সিনেমায়।

ক্লাসরুমে ছাত্রদের পড়ানোর সময় রেহানা মরিয়ম একজন কড়া শিক্ষক, কিছুক্ষেত্রে তার পুরুষ সহকর্মীদের চেয়েও বেশি। পরীক্ষায় নকলের আশ্রয় নেয়া ছাত্রীর দিকে তিনি তেড়ে আসেন ক্ষুধার্ত হায়েনার মতো। আবার যখন তিনি তার পোশা কুকুরের কাছে আসেন তখন তিনি যেনো এক নিষ্পাপ শিশু, শান্ত, চুপচাপ বয়ে চলা এক নদী। পুরো সিনেমাজুড়ে রেহনুমা মরিয়মকে দেখানো হয়েছে মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে।

সিনেমায় রেহানা মরিয়ম যেখানে কাজ করেন সেখানে নারীদের লিঙ্গ পরিচয়ের জন্য প্রায়ই হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়। রেহানার প্রতিবাদী চরিত্রের জন্য তাকে কেউ তেমন ইঙ্গিত না দিলেও তার আশপাশের অনেক নারী নিয়মিত যৌন লিপ্সু সহকর্মীদের দ্বারা হয়রানির মুখে পড়েন। তেমনি এক সন্ধ্যায় এক ছাত্রীকে মেডিকেলের এক অধ্যাপকের কক্ষ থেকে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে বের হতে দেখেন রেহানা।

বিপর্যস্ত সেই ছাত্রীকে অভয় দেন তিনি। বলেন এই ঘটনার বিচার চাইতে। কিন্তু আর পাঁচটা মেয়ের মতোই প্রতিবাদের সাহস করতে পারে না সেই ছাত্রী। রেহানা সিদ্ধান্ত নেন এর বিচার তিনি বের করবেনই। নিজেকেই বানান ধর্ষণের ভুক্তভোগী। বিচার চান সেই অধ্যাপকের। নিজের জেদ থেকে অন্যায়ের বিচার চাইতে গিয়ে পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে রেহানাকে পড়তে হয় এক দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে।

সিনেমাটি এই পর্যন্ত দেখে সবারই রেহানাকে মনে হবে খুব সমর্থনযোগ্য একটি চরিত্র। কিন্তু পরবর্তীতে রেহানার মানসিক টানাপোড়েনে তা আর নাও হতে পারে। মাত্র ছয় বছর বয়সী মেয়ের প্রতি তার নিষ্ঠুর আচরণ আর উন্মত্ততা তাকে করে তুলতে পারে অগ্রহণযোগ্য একটা চরিত্র।

রেহানা নূর এই সমাজের সাধারণ আবার অসাধারণ মেয়ের জীবনের মিশেল। যার মনে পূর্বাভাস ছাড়াই জোয়ার ভাটা খেলে। যার মনে আছে শৈশবের কোমলতা আবার আছে সমাজের কষাঘাতে পিষ্ট প্রতিবাদী প্রীতিলতা।

নিজের দ্বিতীয় সিনেমায় আব্দুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদ বাঁধনকে নির্দেশনা দিয়েছেন একেবারেই আপন ঢঙে। সিনেমার কোথায় নেই কোনো আবেগের, আয়োজনের আতিশয্য। প্রত্যেকটি চরিত্র একেবারেই বাস্তব হয়ে ফুটে উঠেছে সেলুলয়েডের পর্দায়।

একজনের ব্যক্তি সত্ত্বায়, নানা সম্পর্ক আর টানাপড়েনের গল্পের এই সিনেমা প্রদর্শিত হচ্ছে কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে। বাংলা সিনেমার নতুন যুগের ঈঙ্গিত দেওয়া এই সিনেমা নিয়ে বড় স্বপ্ন সাদ দেখতেই পারেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply