অর্থ পাচারকারীদের বিশেষ সুবিধা দেয়ায় আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। যদিও এ বিষয়ে ভিন্নমত আছে। তবে এ সুবিধা দিয়ে সরকার খুব একটা লাভবান হবে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। উল্টো নিরুৎসাহিত হতে পারেন ভালো করদাতারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের অনৈতিক সুযোগের কারণে মুদ্রাপাচার আইনে করা মামলাও অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে।
দেশ থেকে বছরে কত টাকা পাচার হয়, তার সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার মতে, এর পরিমাণ ৬০ থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর বড় অংশই পাচার হয় বাণিজ্যের আড়ালে। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) প্রতিবেদন অনুযায়ী, গেল এক দশকে বাংলাদেশ থেকে পাচায় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ কোটি টাকা। সুইস ব্যাংকে শুধু গত বছরই বাংলাদেশিদের আমানত বেড়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।
এবার বিদেশে পাচার হওয়া এসব টাকা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। নিয়মিত করদাতাদের চেয়ে ১৮ শতাংশ কম ট্যাক্স দিয়েই বৈধ করার সুযোগ পাবেন পাচারকারীরা। তবে এ ধরনের সুযোগ দেয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। এনবিআর’র সাবেক সদস্য সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, যে সুবিধাটি দেয়া হয়েছে এবার, নৈতিক দিক দিয়ে তা সঠিক বলে আমরা মনে করি না। আন্তর্জাতিকভাবেও হয়তো এ কারণে বাংলাদেশকে অসুবিধায় পড়তে হতে পারে।
বিআইবিএম’র সাবেক ডিজি ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, এই ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে খুব একটা লাভ হবে না। একবার যারা অর্থ পাচার করেছে তারা কি ঘোষণা করার জন্য আনবে যে, আমি এত টাকা পাচার করেছিলাম?
এতোদিন দেশের ভিতরে থাকা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হলেও এবার পাচার করা টাকা ফেরাতে দেয়া হচ্ছে বিশেষ সুবিধা। তবে এ উদ্যোগে পাচারকারীরা কতটা সাড়া দেবেন তা নিয়ে সন্দেহ আছে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতাদের। সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বলা হচ্ছে বিদেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা হবে। এ কথার মানে, দেশের বাইরে যে বড় অঙ্কের টাকা যাচ্ছে তার স্বীকৃতি দেয়া। সুযোগ এবং এই সম্ভাবনাগুলো দিলেও তা কতটা সাফল্যের মুখ দেখবে, সে সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই।
এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কত টাকা আসছে এই সুযোগ দিয়ে? তারা কালো টাকা নিয়ে যাবে, আবার আড়াই শতাংশ ইনসেন্টিভ পাবে; আমি ব্যক্তিগতভাবে এগুলোর পক্ষে না।
বিনা প্রশ্নে, জরিমানা ছাড়াই পাচারকারীদের অবৈধ অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেয়ায় ভালো করদাতারা নিরুৎসাহিত হতে পারেন এবং বিশেষ সুবিধা দীর্ঘ সময়ে দেয়া ঠিক নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ ধরনের উদ্যোগে অর্থপাচার আইনে করা মামলাও অনিয়শ্চয়তার মুখে পড়তে পারে। পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার সুযোগ না দিয়ে বরং পাচার বন্ধে সরকারের আরো মনোযোগী হওয়া উচিত বলে পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
এনবিআর’র সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, কোনো সংস্থাই নাকি প্রশ্ন করতে পারবে না। তবে দুদকের কেসগুলোর কী হবে? সেক্ষেত্রে, দুদক তো সামনে কারো নামে কোনো কেসই করতে পারবে না। করের হার নাকি কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। সেই সাথে, জরিমানার কোনো ব্যাপারই যদি না থাকে তবে তার দোষ বা দেরি করার জবাবদিহিতাও থাকবে না। এর ফলে, অন্যদের জরিমানা করাও সম্ভব হবে না।
/এম ই
Leave a reply