গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
জমি লিখে না দেয়ায় নির্যাতন করে বিধবা বৃদ্ধা মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন ছেলে মশিউর রহমান ও তার স্ত্রী শাম্মী আকতার। নির্যাতিত ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা মর্জিনা বেওয়া গত ৩ বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। শুধু তাই নয়, এ কাজের প্রতিবাদ করায় মিথ্যা মামলা দিয়ে ভুক্তভোগী মা ও তিন বোনকে হয়রানি করছেন ছেলের বউ শাম্মী।
বৃদ্ধা মায়ের অভিযোগ, ছেলে ও ছেলের বউ তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, থানা পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেও প্রতিকার মেলেনি।
এ ঘটনাটি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের তরফ আল গ্রামের। মর্জিনা বেওয়া ওই গ্রামের মৃত্যু ইউনুস আলী সরকারের স্ত্রী। ৯ বছর আগে মারা যাওয়া ইউনুস আলীর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। ছেলে ও পুত্রবধূর নির্যাতনের এমন ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না।
সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় বৃদ্ধা মা মর্জিনা বেওয়ার সঙ্গে। তার অভিযোগ, স্বামীর রেখে যাওয়া বসতবাড়িতে দুই ছেলের সঙ্গে বসবাস করেন তিনি। এরপর দুই ছেলে ও স্ত্রী মিলে নানা কারণে তার ওপর নির্যাতন চালায়। পরবর্তীতে তারা বিধবা মর্জিনাকে এক পর্যায়ে মারপিট করে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করেন। পরবর্তীতে বসতভিটার জমি নিজের নামে লিখে দিতে মাকে চাপ দিতে থাকে ছোট ছেলে মশিউর ও তার স্ত্রী শাম্মী আকতার। কিন্তু রাজি না হলে প্রায়ই তারা মারধরসহ বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায়। এ নিয়ে গ্রাম্য শালিসে বসতভিটার পাকাবাড়িসহ ৮ শতাংশ জমি দুই ছেলেকে এবং ফাঁকা ৮ শতাংশ জমি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় মর্জিনাসহ তিন মেয়েকে। ওই জমিতে বসবাসের জন্য টিনসেডের ঘর তোলা হলেও তাতে বেশি দিন থাকা হয়নি মর্জিনার। সম্পদের লোভে মশিউর ও তার স্ত্রী ওই ঘরের তালা ভেঙে সমস্ত আসবাবপত্রসহ ঘরটি ভাঙচুর করে।
বৃদ্ধা মা মর্জিনা বেওয়া আরও বলেন, আমাকে সব সময় ওরা (ছেলে ও ছেলের বউ) মারপিট করে। আমাকে দেখলেই তারা বাঁশ-লাঠি কখনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। প্রাণভয়ে মেয়েদের বাড়ি এবং আশপাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আমার কেটে গেছে ৩ বছর। সর্বশেষ গত ১৮ জুন ছেলে-ছেলের বউ আমার মাথা গোজার ঠাঁই ভাঙচুর করা ঘরটিসহ জমি দখলের চেষ্টা করে। কেউ বাধা দিতে আসলে তাকেও গালিগালাজ ও হত্যার ভয় দেখায়। পুলিশকে জানালে তারাও অসহযোগিতা করেন। এ সময় কান্না জড়িত কণ্ঠে মর্জিনা বেওয়া এই ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান এবং অভিযুক্ত ছেলেসহ বউয়ের দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবি জানান।
এ বিষয়ে স্থানীয় এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমানসহ একাধিক নারী ও পুরুষের অভিযোগ, ছেলে ও ছেলের বউয়ের নির্যাতনের ঘটনায় ৩ বছর ধরে বাড়ি ছাড়া বৃদ্ধা মা মর্জিনা। প্রতিকার চেয়ে অনেকের দ্বারে-দ্বারে ঘুরছেন তিনি। এ ঘটনায় প্রতিবাদ করলেই ছেলে এবং তার বউ গ্রামের লোকজনকে গালিগালাজসহ মামলার জড়ানোর ভয়ভীতি দেখায়। দিনদিন তাদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির ফলে এলাকার শান্তি নষ্ট হচ্ছে।
তবে অভিযোগে বিষয়ে জানতে বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যায়নি অভিযুক্ত মশিউর রহমান ও তার স্ত্রী শাম্মী আকতারকে। তবে মুঠোফোনে কথা হলে মশিউরের স্ত্রী শাম্মী আকতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাকে মারধর করাসহ মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন শাশুড়ি। শাশুড়িকে মারধর করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়া এবং মামলা দিয়ে হয়রানির কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রোকসানা বেগম বলেন, এই ঘটনায় বৃদ্ধার লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তার অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তবে অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করে সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার জানান, এর আগে ছেলের বউকে মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মূলত অভিযোগের ভিত্তিতেই আইনি প্রক্রিয়া নেয়া হচ্ছে। এই ঘটনায় পুলিশের যথেষ্ট আন্তরিকতা রয়েছে। নতুন কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইউএইচ/
Leave a reply