বৃষ্টির প্রত্যাশায় দিনাজপুরে ঘটা করে দেয়া হলো ব্যাঙের বিয়ে

|

বিয়ের আসরে ভানু ও মতি।

দিনাজপুরে গত কয়েকদিনের প্রচণ্ড তাপদাহে প্রাণ ওষ্ঠাগত অবস্থা। দিনের বেলা প্রচণ্ড রৌদ্রতাপের পর রাতে ভ্যাপসা গরম। ফ্যানের বাতাসও গায়ে লাগছে না। ঘরে থাকার অবস্থা নেই। বৃষ্টির প্রত্যাশায় শুক্রবার (১৫ জুলাই) জেলার জুমার নামাজ শেষে মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া করা হয়েছে, মন্দিরে দেয়া হচ্ছে পূজা । এরই মাঝে ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে দেয়া হলো ভানু ও মতি নামের দুটি ব্যাঙের বিয়ে। ব্যাঙের বিয়ে হলেও আয়োজনে কোনো ঘাটতি ছিল না।

আল্পনায় সাজানো বিয়ের মন্ডপ, সেখানে আছে ঘট আর তার উপরে বসানো হয়েছে একটি ডাব। ধান-দূর্বা সাজিয়ে রাখা হয়েছে পাশে রাখা কুলায়। আর তার ঠিক পাশেই জ্বলছে প্রদীপ। বরযাত্রীদের খাওয়ার জন্য রান্নাবান্নাও চলছে। অন্যদিকে বাজছে ঢাক, কাসর আর শঙ্খ।

এভাবেই বৃষ্টি কামনায় ঘটা করে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করেছেন দিনাজপুর সদরের হিরাবাগান এলাকাবাসী। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হওয়া ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন চলে রাতব্যাপী। আয়োজকরা জানালেন, বৃষ্টি কামনায় বরুণ দেবকে সন্তুষ্ট করতেই তাদের এ আয়োজন।

প্রসঙ্গত, দিনাজপুর জেলাসহ আশেপাশের অঞ্চলগুলোর উপর দিয়ে গত ১৫-১৬ দিন ধরে বয়ে যাচ্ছে মৃদু তাপদাহ। নেই বৃষ্টি; প্রচণ্ড গরমে পুড়ছে এ জনপদ। ফলে একদিকে জনজীবন যেমন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তেমনি কৃষি কাজেও ঘটছে ব্যাঘাত। এমন শঙ্কটাপূর্ণ পরিস্থিতিতে লোকাচার মেনে হিরা বাগান এলাকাবাসী এ বিয়ের আয়োজন করেন।

আয়োজকদের বিশ্বাস, এমন বিয়ে দিলেই বরুন দেব সন্তুষ্ট হবেন আর বর্ষণ করবেন বৃষ্টি। রাজবাটী হিরাবাগানের রক্ষা কালী মন্দির প্রাঙ্গণে ব্যাঙ দুটোর বিয়ে দেয়া হয়। আয়োজনকে ঘিরে কোনো প্রকার ত্রুটি রাখেননি আয়োজকরা।

বিয়ের মণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, গায়ে হলুদের দৃশ্য। ছিল সাতপাকে বাঁধা , মালা বদল, শুভদৃষ্টিসহ সিঁদুর দান। বাদ যায়নি পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণ কিংবা ধান-দূর্বা দিয়ে আর্শীবাদ প্রদানও।

যুগ যুগ ধরে চলে আসা লোকসংস্কৃতির অংশ এ বিয়েতে মেয়ে ব্যাঙ মতির মা ছিলেন আল্পনা মহন্ত আর ছেলে ব্যাঙ ভানুর মা ছিলেন সুমনা সরকার। আর এ আয়োজনের মূল আয়োজক ছিলেন ছায়া অধিকারী। বিয়ের মন্ত্রপাঠসহ শুভ কাজ করেন পুরোহিদ নারায়ণ চন্দ্র ঝা।

আয়োজকরা বলছেন, অনাবৃষ্টির কারণে সর্বপ্রথম এমন বিয়ের আয়োজন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবতা শ্রী বিষ্ণুর অবতার ভগবান রামচন্দ্র। আর তাই সনাতনরীতি মেনেই এখানে ব্যাঙ দুটির বিয়ে দেয়া হয়েছে।

ছেলে পক্ষের মা সুমনা সরকার বলেন, অনেক গরম চারপাশে। আকাশে মেঘ নেই তাই বৃষ্টিও হচ্ছে না।
মানুষ চাষাবাদ করতে পারছে না। তাই আমরা এখানে দুটো ব্যাঙের বিয়ে দিলাম। আমাদের বিশ্বাস এই ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হবেই হবে।

পুরোহিত নারায়ণ চন্দ্র ঝা বলেন, এই বিয়ে অনেক দিন ধরেই হয়ে আসছে। রামচন্দ্র দিয়েছিলেন এই বিয়ে। আমাদের বিশ্বাস লোকাচার, দেশাচার মেনে এই বিয়ে দেয়া হলো, যেন বৃষ্টি হয়।

বিয়ের মূল আয়োজক ছায়া অধিকারী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি নেই। মানুষের পাশাপাশি প্রাণিকূল ও উদ্ভিদও সমস্যায় পড়েছে। একটু বৃষ্টির জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন সবাই। ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি এমন খরায় ব্যাঙের বিয়ে দেয়া হয়, তাই আমরাও এই করেছি। এর আগেও এমন বিয়ের আয়োজন করেছিলাম। বিয়ে দেয়ার পর বৃষ্টিপাতও হয়েছিল। আমাদের বিশ্বাস এবারও তেমনই হবে।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply