অতিরিক্ত ওজন কি সন্তান ধারণের পথে বাধা হতে পারে?

|

সন্তান ধারণের আগে ওজন নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি আমরা প্রায়শই শুনে থাকি। ভারতের জনপ্রিয় কমেডিয়ান ভারতি সিংকেও সন্তান ধারণের আগে ওজন কমাতে দেখা গিয়েছিল। বলা হয়ে থাকে, অতিরিক্ত ওজনের আগে ওজনের বিষয়ে বিশেষ করে নজর দেয়া উচিত। তবে ঠিক কী কারণে ওজন কীভাবে সন্তান ধারণের মুখে বাধা সৃষ্টি করতে পারে?

মূলত, শরীরে বাড়তি মেদ থাকলে ডিম্বস্ফোটন ঠিকভাবে হয় না। ডিম্বস্ফোটন না হলে সন্তান ধারণের সম্ভাবনাও থাকে না। ডিম্বাশয় থেকে স্ত্রী হরমোন ইস্ট্রোজেন তৈরি হয়। অ্যাডিপোজ টিস্যু বা মেদকোষগুলোও আলাদাভাবে ইস্ট্রোজেন তৈরি করে। তাই স্থূলতা থাকলে নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ ‌অনেক বেশি বেড়ে যায়। ফলে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। এই কারণেও সন্তান ধারণে অসুবিধা হতে পারে। এ ছাড়াও বাড়তি মেদের জন্য শারীরিক নানা রকম জটিলতাও দেখা দিতে পারে, যা হবু মা এবং ভ্রূণের ক্ষতি করতে পারে।

স্থূলতা সন্তান ধারণের পথে যেভাবে বাধার সৃষ্টি করে..

উচ্চ রক্তচাপ: দেহের বাড়তি ওজনের ফলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। যা সন্তান ধারণের প্রথম পর্যায়ে ভ্রূণের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। তাই সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা থাকলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। আর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ওজনের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে।

ম্যাক্রোসমিয়া: অনেক সময় দেখা যায়, গর্ভস্থ ভ্রূণটি স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে বড়। তাই প্রসবের সময়ে স্বাভাবিকভাবেই সতর্ক থাকতে হয়। এই ভয় দ্বিগুণ হয়ে যায় যদি মায়ের ওজন বেশি হয়। এ ক্ষেত্রে ক্ষেত্রবিশেষে দু’জনেরই প্রাণের ঝুঁকি থাকে।

ডায়াবেটিস: গর্ভবতী অবস্থায় রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। যা প্রসবের পর আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসে। কিন্তু সন্তান ধারণ করতে চান এমন স্থূলকায় নারীর রক্তে যদি শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে, তাহলে এই প্রক্রিয়া জটিল হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সন্তানের মধ্যেও টাইপ-১ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।

স্লিপ অ্যাপনিয়া: ঘুমের মধ্যে হঠাৎই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় অনেকের। কিছুক্ষণ পর আবার নিজে থেকেই স্বাভাবিক হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা বলেন, এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণই হলো অতিরিক্ত ওজন। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এমন লক্ষণ দেখা দিলে মা এবং ভ্রূণ দু’জনেরই ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

জন্মগত ক্রটি: গর্ভবতী মায়ের অতিরিক্ত ওজনের কারণে গর্ভস্থ ভ্রূণের ক্ষতি করতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, জন্মের সময়ে শরীরে কোনো ত্রুটি নিয়ে ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুদের মায়েদের ওজন গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল।

অবশ্য, মোটা হলেই মা হওয়া যায় না এই ধারণা ভুল। মোটা হওয়ার সঙ্গে মা হওয়ার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। তবে সন্তান ও নিজের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে মা হওয়ার পরিকল্পনা করার আগে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। এ ক্ষেত্রে আপনার আদর্শ ওজন কত হওয়া উচিত, তা উচ্চতার উপর নির্ভর করবে।

সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, আনন্দবাজার পত্রিকা।

এসজেড/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply