‘সাধারণ মানুষের কাছে হৃদরোগের চিকিৎসা পৌঁছে দেয়া প্রয়োজন’

|

ছবি: সংগৃহীত

সাধারণ মানুষের কাছে হৃদরোগের চিকিৎসা সহজলভ্য করা প্রয়োজন। এক গোলটেবিল বৈঠকে এমনটাই বলেছেন বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি এস এম মোস্তফা জামান।

২৯ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব হার্ট দিবস’। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের আয়োজনে সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

হৃদরোগের লক্ষণ এবং এই রোগের নানা দিক নিয়ে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি এস এম মোস্তফা জামান।

মোস্তফা জামান বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য, সাধারণ মানুষের কাছে যেন আমরা হৃদরোগের চিকিৎসা পৌঁছে দিতে পারি। তার জন্য আজকে সবাই এই গোলটেবল বৈঠকে উপস্থিত হয়েছি। তিনি বলেন, হৃদরোগ বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক রোগ। বিশ্বের প্রায় ৬২ কোটি মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত। সম্প্রতি নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রতি দেড় সেকেন্ডে বিশ্বব্যাপী এক জন রোগীর মৃত্যু হচ্ছে হার্ট অ্যাটাকে। এরকম চলতে থাকলে ২০৩০ সালে মৃত্যুর হার বছরে ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষ মারা যাবে হৃদরোগের কারণে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে পুরুষের চেয়ে নারীদের হৃদরোগে আক্রান্তের হার বেশি। এ অঞ্চলের মানুষের ঝুঁকি বেশি হৃদরোগের কারণে। বিএসএমএমইউ এবং আমার নিজের করা একটি গবেষণায় এসেছে যে, যাদের বয়স ৩৫’এর নিচে, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি উন্নত বিশ্বের তুলনায় সতেরো গুণ বেশি। তাই হৃদরোগের ব্যাপারে সবার সচেতন হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি। গোলটেবিল অনুষ্ঠানটি তিনিই পরিচালনা করেন।

প্রতি বছর ২৯ সেপ্টেম্বর এ দিবসটি পালন করা হয় হার্ট বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ইউজ হার্ট, নোউ হার্ট’। যার বঙ্গানুবাদ করা হয়েছে– ভালোবাসা দিয়ে প্রতিটি হৃদয়ের যত্ন নিন।

গোলটেবিল আলোচনায় ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক এম এ রশিদ বলেন, হৃদরোগের সঙ্গে ডায়াবেটিস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই হৃদরোগের থেকে বাঁচতে হলে প্রতিরোধ করতে হবে ডায়াবেটিস। প্রি-ডায়াবেটিসের সচেতনতা থেকে হৃদরোগ প্রতিহত করা সম্ভব।

ইউনাইটেড হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ফাতেমা বেগম বলেন, আমাদের নারীদের আসলে দশভুজা হয়ে এত কাজ করতে হয়, স্ট্রেস নিতে হয় যে, সবার সেবা করে তারা নিজেদের দিকে তাকানোর ফুসরত পান না। তাই পরিবারের পুরুষ সদস্যদের উচিত স্ত্রী, মা, বোন ও মেয়ে সবার স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা। আর নারীরা বুক ধড়ফড়ানি বা কোনো রকম সমস্যা অনুভব করলে অব্যশ্যই পরিবারের সদস্যদের সেটা জানানো উচিত।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মীর জামাল উদ্দীন বলেন, হৃদ্‌রোগের চিকিৎসা খুব ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়, এটা মানুষের হাতের নাগালেই আছে। দরকার সচেতনতার।

বিশেষজ্ঞরা জানান, হৃদরোগের সবচেয়ে সচরাচর উপসর্গ হলো বুকব্যথা বা অস্বস্তি। তবে এটি একমাত্র উপসর্গ নয়। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, পাকস্থলীর ওপরের দিকে অসহনীয় ব্যথা অনুভব করা, মাথা হালকা লাগা, শরীরের ওপরের অংশ যেমন পিঠ, পেট, গলা, বাম বাহুতে ব্যথা, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা বা অস্বস্তি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে ১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। যার দুই-তৃতীয়াংশের বসবাস বাংলাদেশসহ নিন্ম ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করা না হলে বুকে ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইল এবং হার্ট বিট অনিয়মিত হওয়ার শঙ্কা থাকে।

আশঙ্কার বিষয় হলো, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে তরুণদের মধ্যেও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাতে অকাল মৃত্যু বাড়ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশব্যাপী হার্ট অ্যাটাক ও উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরি জরুরি হয়ে পড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

/এএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply