মূল্যস্ফীতিতে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে দিশেহারা মানুষ

|

ছবি-সংগৃহীত

শরিফুল ইসলাম খান:

মূল্যস্ফীতি কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে। আয়-ব্যয়ের হিসাব মিলাতে হিমশিম অবস্থা। সাংসারিক বাজেটে কাটছাঁট করেও মিলছে না কূল-কিনারা। খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন এনেও খরচের লাগাম টানা যাচ্ছে না। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিপণন ব্যবস্থার দুর্বলতা কাটিয়ে ভারসাম্য আনতে হবে চাহিদা ও যোগানে। সেইসাথে দিয়েছেন টিসিবি ও ফ্যামিলি কার্ডে সহায়তা কার্যক্রম বাড়ানোর পরামর্শ।

বাঙালির পুষ্টি চাহিদার আদি এবং অন্যতম উৎস মাছ। কিন্তু এখন আর মিলছে না স্বাদ আর সাধ্যে। কীভাবে সমন্বয় করছে পরিবারগুলো? জানা গেছে, মাছ কাটার সময় পিস ছোট করেও মানুষ খরচের লাগাম টানতে চাচ্ছে।

রাজধানীতে ২০ বছর ধরে মাছ বিক্রি করছেন অর্জুন নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, মাছ কাটায় এখন পরিবর্তন এসেছে। ক্রেতারা এখন বলে একটু পাতলা ও ছোট পিস করতে। আগে যে রুই মাছ ১৫ থেকে ১৭ পিস করে কাটতেন, এখন সেই একই আকৃতির মাছ ২০ থেকে ২২ পিস করেন তিনি।

শুধু মাছ নয়, মুরগির মাংসের চাহিদাও কমেছে। ছোট শিশুর খাবার কিনতে আসা মধ্যবিত্ত পরিবারও সেখানে খরচ কমানোর চেষ্টা করছেন। যে গল্প সবটুকু বলা যায় না, আবার সহ্য করাও কঠিন। অনেকেই বাজারের ফর্দে কাটছাঁট করে টিকে থাকার চেষ্টা চালান।

এক মুরগি দোকানি বলেন, কয়দিন আগেও মুরগি বিক্রি হতো প্রতিদিন আড়াইশ’-তিনশ’ পিস। এখন কোনো কোনোদিন একশ’ পিসই বিক্রি করা যায় না। দাম বেড়েছে, তবে ক্রেতা কমেছে।

ডিমের বাজারেও একই অবস্থা। এখন নাকি ভাঙা ডিম বেশি কিনছেন ক্রেতারা। এক ডিমের দোকানি বলেন, যারা গরীব মানুষ, তারা এখন ভাঙা ডিমও নিচ্ছে। হোটেলগুলোও কিনছে। ভাঙা ডিম নিয়ে ভেজে খাচ্ছে, আবার পুডিংও করছে।

কেবল মাছ-মাংস, ডিম নয়; খাবার-দাবার, পোশাক, বাড়িভাড়া থেকে পরিবহন। শিক্ষা-স্বাস্থ্য কিংবা জীবনধারণের অন্য যেকোনো সেবা; সব খরচই বাড়ছে দিন দিন।

এ বিষয়ে এক ক্রেতা বলেন, জিনিসপত্রের যে দাম! জীবন চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। বাজারে এলে মনে হয়, ডাকাতদের কবলে পড়ছি। শাক-সবজিও কেনার উপায় নেই। দুই আঁটি শাকের জায়গায় এখন এক আঁটি কিনি। আগে যে সবজি কিনতাম এক কেজি, এখন সেটি এক পোয়া নেই।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বেসরকারি একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করেন নাবিল ইসলাম। আগে বেতনের টাকা টেনেটুনে চললেও এখন দ্রুতই ফুরিয়ে যায়। মাসও কাটছে কচ্ছপ গতিতে। তিনি বলেন, সবকিছুর দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এটি সবার জন্যই কষ্টকর হয়ে গেছে। স্বল্প আয়ের মানুষদের কেউই ভালো নেই।

মাস শেষে নির্দিষ্ট বেতন পাওয়ারা বেশি ভুগছেন মূল্যস্ফীতির তীব্র চাপে। তার চেয়েও বেশি টের পাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। মূল্যস্ফীতি নিয়ে এক রিকশাচালক বলেন, চালের দাম, তেল, পেঁয়াজ সবকিছুর দাম বাড়তি। এভাবে চলতে পারে নাকি? আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়ে যাচ্ছে। কীভাবে সঞ্চয় করবো?

ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারণ। এছাড়া রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, দেশে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এবং বাজার ব্যবস্থায় দুর্বলতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে। ভোক্তাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে উৎপাদন বা আমদানি থেকে ভোক্তা পর্যন্ত বিপণন ব্যবস্থা ঠিক করার ওপর জোর দিচ্ছেন সিপিডির ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পরিবহনে যদি চাঁদাবাজি হয় তাহলে শেষ পর্যন্ত এর প্রভাব ভোক্তার ওপর পড়ে। এভাবে সবক্ষেত্রেই খরচ বাড়লে তার চাপ পড়ে ভোক্তার ওপর। দেশের উৎপাদন-সরবরাহ কত, আয়-ব্যয়, কোন পণ্যে কখন শুল্ক আরোপ করা হবে– এসব বিষয়ে সার্বক্ষণিক পরিকল্পনা যদি থাকে, তাহলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply