মা ও মেয়েকে ছেড়ে দিয়াবাতের ঈদ করাটা কষ্টদায়ক

|

ছবি: সংগৃহীত

ঈদ আসে ঈদ যায়। কিন্তু সুলেমান দিয়াবাতের পরিবারের সাথে ঈদ করাটা স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। পরিবারের সাথে শেষ কবে ঈদ করেছেন সেটা হয়তো ভুলেই গিয়েছেন মোহামেডানের মালির ফুটবলার দিয়াবাতে। রীতিমতো বাংলাদেশের ঘরের ছেলেই হয়ে গেছেন তিনি। তাইতো বুকে পাথর বেধে এবারের ঈদেও তার সঙ্গী সেই চির চেনা মোহামেডান প্রাঙ্গন।

একটু মন খারাপের মধ্যেই কাটবে এবারের ঈদও। ৯ বছর বয়সের একমাত্র মেয়ে ফাতিমার জন্য মনটা খুব পুড়ছে তার। কত দিন দেখেন না মেয়েকে। কোলে তুলে আদর করা হয়না কলিজার টুকরাকে। সুলেমান দিয়াবাতে বলেন, মেয়েটার জন্য মন খারাপ, ভীষণ মন খারাপ। ঈদ উপলক্ষ্যে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হলো। স্ত্রীর সঙ্গে আমার বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ায় মেয়েটা খুব সমস্যায় পড়েছে। ও বাবার ভীষণ ভক্ত। খুব ইচ্ছে করে ওর জন্য উপহার কিনে নিয়ে যাই।

শুধু মেয়েই নয় দিয়াবাতের মন কাঁদে তার মায়ের জন্যও। বাবাহীন পরিবারে দিয়াবাতের সবকিছুই মাকে ঘিরে। তাইতো মাকে ছেড়ে দিয়াবাতের ঈদ করাটা অনেক কষ্টদায়ক। ঢাকায় থাকলেও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মালির ফুটবলার সুলেমানের মনটাও যে পড়ে আছে মায়ের কাছেই।

সোলেমান দিয়াবাতে বলেন, মা’র সঙ্গে বহুদিন ঈদ করি না। তাঁকে বলেছি বাংলাদেশে চলে এসো। মা–ছেলে মিলে একসঙ্গে থাকি। বলেছি, বাংলাদেশের মানুষ আমাকে ভীষণ ভালোবাসে। মাও খুশি হন, বাংলাদেশের কথা শুনলে।

তবে এখন সয়ে গেছে। পশ্চিম আফ্রিকার বিশাল দেশ মালি আর মনে খুব একটা আঁচড় কাটে না, যতটা কাটে লাল-সবুজের ছোট্ট এই বাংলাদেশ। যেকারণে অনেকগুলো ঈদই পার করেছেন এই দেশে, নিজ পরিবারকে ছেড়ে। জানালেন নিজের আফসোসের কথাও। তিনি বলেন, আমরা ফুটবলার, এটাই আমাদের পেশা। ঈদ এই দেশেও আনন্দের। এই কয়টা দিন এখানকার বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কাটিয়ে দেব। পরিবারের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলবো। ঈদ নিয়ে একটাই আফসোস মায়ের হাতে তৈরি মজার-মজার খাবার গুলো খুব মিস করবো। পাশাপাশি মালির বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি, আড্ডাটা অনেক মিস করবো।

দিয়াবাতের কাছে সবচেয়ে কষ্টের বিষয় একা-একা ঈদ করাটা। ঈদের ছুটিতে সতীর্থরা নিজ নিজ গন্তব্যে পাড়ি জমানোয় শুন-শান নীরবতা এখন ক্লাব প্রাঙ্গনে। তবে এই কষ্টের মাঝেও আনন্দের খোরাক নিয়ে আসেন তারই সতীর্থ সুজন। দিয়াবাতে বলেন, খারাপ লাগে। তবে কিছু করার নেই। একা-একা ঈদ করা সহজ বিষয় নয়। ক্লাবে স্থানীয় খেলোয়াড়রাও নেই। তারা থাকলেও সময়টা কেটে যেতো। ভালো লাগতো। তবে ক্লাবের কাছেই সুজন থাকে। ঈদের দিন ও আসে। আমাকে সময় দেয়। ওর সাথে আড্ডা দেই। এদিকে-সেদিকে একটু ঘোরাঘুরি করি। তখন কিছুটা হলেও কষ্টটা ভুলে যাই।

তবে ক্লাবের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে ঈদ উপহার। ক্লাবের এই আতিথেয়তায় বেজায় খুশি দিয়াবাতে। তিনি বলেন, উপহার পেয়ে অনেক খুশি লাগছে। কিছুটা হলেও ঈদের আমেজ পাচ্ছি। এই ছোট ছোট বিষয়গুলোতে পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্ট ভুলে থাকতে সাহায্য করে। এজন্য ক্লাবকে ধন্যবাদ।

জীবন যুদ্ধের প্রয়োজনে মালি থেকে বাংলাদেশে এসেছেন দিয়াবাতে। পরিবার-স্বজন অনেক দূরে, এই বাংলাদেশের এক ক্লাব মোহামেডান এখন তার প্রিয় স্বজন! তাই তার ঈদের খুশি এই সাদা-কালো শিবিরেই।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply