প্রচণ্ড তাপদাহে অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যা করবেন

|

তালহা বিন জসিম

বর্তমানে দেশে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বইছে। তাই বাড়ছে তাপমাত্রা। এই সময়ে ছোট একটা স্ফুলিঙ্গ বড় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটাতে পারে। তাই আপনার প্রতিষ্ঠান ও আবাসনকে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে সচেতন হতে হবে। নিম্মোক্ত বিষয়ে সতর্ক থাকুন ও জীবন-সম্পদ রক্ষা করি।

বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের ব্যবহার
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি যে কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটে থাকে, তা হলো বৈদ্যুতিক গোলযোগ। ২০২৩ সালে শুধু এই বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে সারাদেশে ৯ হাজার ৮১৩টি অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তাতে দেখা যায় গড়ে দিনে ২৬টি আগুন লাগে এই বিদ্যুৎ ব্যবহারের অসতর্কতার কারণে। তাই এই তাপদাহের সময়ে বৈদ্যুতিক লাইন ও সরঞ্জাম ব্যবহারে অতি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এ সময়ে কারখানা ও বাসার বৈদ্যুতিক ক্যাবল ওয়্যারিং ঠিক আছে কি না চেক করুন। খুব দ্রুত ত্রুটিপূর্ণ ক্যাবল পরিবর্তন করুন। একটি লাইন বা মাল্টিপ্লাগ থেকে অনেকগুলো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করবেন না। এছাড়া বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বা কারখানার যন্ত্রাংশে নির্দিষ্ট সময় পরপর বিরতি দিন, এমনকি কর্মচারীদের নিয়মিত বিশ্রাম দিন।

রান্নার সময় সতর্কতা
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দ্বিতীয় যে কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটে থাকে, তা হলো চুলার আগুন। তাই এই তাপদাহের সময়ে রান্না করার সময় সচেতন থাকুন। যতক্ষণ রান্না করবেন, ততক্ষণ চুলার পাশে থাকুন। রান্না বসিয়ে মোবাইলে কথা বলা, টিভি দেখা অন্যান্য কাজ থেকে বিরত থাকুন। রান্না শেষে গ্যাসের লাইন ভালোভাবে সতর্কতার সাথে বন্ধ রাখুন। গ্রামে যারা রান্না করেন, তারা রান্নার পর জ্বলন্ত ছাই নিরাপদে রাখুন। চুলার পাশে কাঠ, খড়ি শুকাতে দেবেন না।

ধুমপানে সতর্কতা

অতিরিক্ত তাপ প্রবাহের সময় ভবনে সিগারেট পান করার ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করুন ও সতর্ক থাকুন। সিগারেটের শেষাংশ অবশ্যই নিভিয়ে নিরাপদ স্থানে ফেলুন। গাড়ি চালনার সময় যেকোনো স্থানে সিগারেটের টুকরা ফেলবেন না।

বারবিকিউ, ক্যাম্পফায়ার ও আতশবাজিতে ‘না’
এই অতিরিক্ত তাপদাহের সময়ে বাড়ির ছাদে, বারান্দায় বা খোলা স্থানে বারবিকিউ না করাই উত্তম। কেননা একটু স্ফুলিঙ্গ উড়ে গিয়ে বড় কোনো অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই এই সময়ে ক্যাম্পফায়ার, আতশবাজি, ফানুস উড়ানোকে একবারেই না বলুন।

ফিলিং স্টেশনে সতর্কতা
ফিলিং স্টেশনে তেল ও গ্যাস নেয়ার সময় সচেতন থাকুন। এ সময় গাড়ির ভেতরে থাকবেন না। এই মুহূর্তে ফিলিং স্টেশনের মালিক ও কর্মচারীদের অতি সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া ফিলিং স্টেশনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সচল আছে কি না তা যাছাই করতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ হলে অবশ্যই সচল করতে হবে।

গাড়ি পার্কিং
যেহেতু বাইরে রোদের তীব্রতা অনেক, তাই সরাসরি সূর্যের আলোর নিচে গাড়ি পার্কিং করবেন না। ছায়ায় গাড়ি পার্ক করুন। এছাড়া বাইরে গাড়িতে চলাচলের সময় অবশ্যই গাড়ির ভিতরের তাপমাত্রার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পার্কিং করা অবস্থায় ভিতরে অবস্থান না করাই উত্তম।

আগুন নিয়ে খেলা
এই সময়ে বাচ্চাদের আগুন নিয়ে খেলতে দেবেন না। যেকোনো আগুনের কার্যক্রমকে নিরুৎসাহিত করুন।

অগ্নিনির্বাপনী সরঞ্জাম
মূলত অসচেতনতার কারণেই আগুনের ঘটনা বেশি ঘটে। তাই নিজে, প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যদের আগুন কেনো লাগে সে বিষয়ে সচেতন করতে হবে। এছাড়া বড় অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি কমাতে সবসময় কাছাকাছি অগ্নিনির্বাপনী সরঞ্জাম নিশ্চিত করুন এবং আপনার বাসা ও প্রতিষ্ঠানের অগ্নিনির্বাপনী ব্যবস্থা সচল আছে কিনা চেক করুন। সচল না থাকলে দ্রুত ঠিক করুন। অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবন থেকে কীভাবে বের হবে, সে বিষয়ে ফায়ার ড্রিল করে নিন। অগ্নিনির্বাপনী সরঞ্জাম ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নিন। এই তাপপ্রবাহের চলমান সময়ে সচেতন থাকুন, চোখ খোলা রাখুন, অন্যদের সতর্ক করুন।

ফায়ার সার্ভিসের নম্বর সংরক্ষণ
অগ্নিকাণ্ডে জীবন ও সম্পদ রক্ষা করতে ফায়ারের সেবা দ্রুত পেতে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের নম্বর নিজেসহ পরিবারের সদস্যদের মোবাইলে সেভ করুন ও দৃশ্যমান স্থানে রাখুন। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের হটলাইন ১৬১৬৩ এবং ৯৯৯-এ ফোন করে সেবা নেয়া যাবে।

সবার সচেতনতা-ই কমাতে পারে বড় অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি। তাই সবার সচেতনতা জরুরি। নিরাপদ থাকা সম্ভব।

লেখক: স্টেশন অফিসার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply