খেলোয়াড়ি জীবনে পিছিয়ে থাকলেও কোচিংয়ে বড় ভাইকে ছাড়িয়ে গেছেন সিমোনে ইনজাগি

|

ছবি: সংগৃহীত

খেলোয়াড়ি জীবনে ফিলিপ্পো ইনজাগির ছায়ায় ঢাকা পড়লেও কোচ হিসেবে বড় ভাইকে ছাড়িয়ে গেছেন ছোট ভাই সিমোনে ইনজাগি। খেলোয়াড়ি জীবনটা সাদামাটা হলেও কোচ হিসেবে প্রথম তিন বছরেই জিতে নেন পাঁচটি ট্রফি। তারই ধারাবাহিকতায় এবার ইন্টার মিলানকে উপহার দিলেন লিগ শিরোপা।

খেলোয়াড়ি জীবনে জিয়ানকার্লোর ছোট ছেলে সিমোনে ইনজাগি ঠিক কী কারণে বড়জন ফিলিপ্পো ইনজাগির আড়ালে পড়ে থাকতেন, সেটার যথোপযুক্ত ব্যাখা নেই। ‘সুপারপিপ্পো’ নামে পরিচিত ফিলিপ্পো ইনজাগিকে তার প্রজন্মের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার বিবেচনা করা হয়। ইতালিয়ান সিরি ‘আ’, কোপা ইতালিয়া, ইতালিয়ান সুপার কাপ, উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ, উয়েফা সুপার কাপ, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ—সাবেক এই স্ট্রাইকার য়্যুভেন্টাস ও এসি মিলান মিলিয়ে জিতেছেন সবই।

২০০৬ সালে ইতালির হয়ে বিশ্বকাপ জিতে পেয়েছেন সোনলি ট্রফি জেতার অমরত্বের স্বাদ। ফিলিপ্পোর চেয়ে বয়সে ২ বছর ৭ মাসের ছোট সিমোনে ইনজাগির খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার সে তুলনায় বর্ণহীন। জন্মশহরের ক্লাব পিয়াসেনৎসার হয়ে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক। সেই পিয়াসেনৎসা সিমোনেকে চার মৌসুমে চারটি ক্লাবের কাছে ধারে খেলতে পাঠিয়েছিল।

এতগুলো ক্লাবে যাযাবরের মতো জীবন কাটিয়েও সিমোনে হয়তো কিছুটা তৃপ্তি খুঁজে নিতে পারতেন কিংবা নিজেকে ভাইয়ের পর্যায়ের ভাবতে পারতেন, যদি তালিকায় থাকতো শীর্ষ কোনো ক্লাব। কিন্তু ইতালির শীর্ষ কোনো ক্লাবের হয়ে খেলার স্বপ্ন কখনো পূরণ হয়নি তার।

শীর্ষ স্তরের ফুটবলে ক্লাব ও জাতীয় দল খেলোয়াড়ের ভূমিকায় যেখানে বড় ভাই ফিলিপ্পোর ট্রফি ১৩টি, সেখানে সিমোনের অর্ধেকেরও কম—৬টি। সব কটিই লাৎসিওর হয়ে। ফিলিপ্পো যেখানে ইতালি জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য ছিলেন, সিমোনের সেখানে দেশের জার্সি পরে মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র তিনবার। মাঠের পারফরম্যান্সের বৈপরীত্য ছিলো ব্যক্তিজীবনেও ।

খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করেই কোচিংয়ে ঝুঁকে পড়েন ফিলিপ্পো। ২০১২ সালে এসি মিলান যুব দলের হয়ে তার কোচিংয়ে হাতেখড়ি। কিন্তু কোচ হিসেবে পুরোপুরি ব্যর্থ ফিলিপ্পো। অপরদিকে ২০১৬ সালে লাৎসিও কোচের গুরু দায়িত্ব দেয় সিমোনেকে। লাৎসিওর কোচ হওয়ার পরই নিজেকে বদলে ফেলতে শুরু করেন সিমোন। এই বদলটা ছিল নিজেকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নেয়ার প্রয়াস। এখন দুই ভাইকে পাশাপাশি দাঁড় করিয়ে দিলে বেশির ভাগ মানুষ সিমোনের নামই বলবেন।

সিমোনে যে এখন ইতালিয়ান সিরি ‘আ’–জয়ী কোচ! তার বর্তমান দল ইন্টার, মিলান ডার্বিতে এসি মিলানকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে ৫ ম্যাচ বাকি থাকতেই শিরোপা নিশ্চিত করেছে। এ অর্জন ইনজাগি পরিবারের হলে কী হবে, ভাই ফিলিপ্পোর সাবেক ক্লাবকে হারিয়ে পাওয়া শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি সিমোনের কাছে বিশেষ কিছু।

এই সাফল্যের মুকুট সিমোনেকে ইতালিয়ান ফুটবলে আলাদাভাবে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। কোচ হিসেবে তার প্রথম লিগ জয়। এর আগে পাঁচ বছর লাৎসিওর ডাগআউটে দাঁড়িয়ে জিতেছিলেন তিনটি শিরোপা—একটি কোপা ইতালিয়া ও দু’টি ইতালিয়ান সুপার কাপ।

লিগ শিরোপা জয়ের পর সিমোন ইনজাগি বলেন, তিন বছরে ছ’টি ট্রফি জিতেছি, একবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠেছি। আমার কাছে এটা কল্পনা করা কঠিন। আপনাকে পুরো তিন বছরের দিকে তাকাতে হবে ও বিশ্লেষণ করতে হবে। এই বছরও ভালোই কেটেছে। লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া এমন এক অর্জন, যা বাস্তবায়ন করতে দীর্ঘ সময় লেগেছে।

খেলোয়াড় ও কোচের ভূমিকায় দুই ভাইয়ের বৈপরীত্য চিরন্তন সত্যি মনে করিয়ে দেয়— বড় মাপের খেলোয়াড় মানেই সফল কোচ নয়।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply