ঘুম ঘুম চোখেও বেপরোয়া ছিলেন চালক, ঝরে গেল ১৬টি প্রাণ

|

জিল্লুর রহমান পলাশ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

চালকের চোখে ঘুম ঘুম ভাব থাকলেও গাড়ি চালাচ্ছিলেন বেপরোয়া গতিতে। এছাড়া বাসে ছিলেন অতিরিক্ত যাত্রী। এসব কারণেই গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে দূর্ঘটনার শিকার হয় যাত্রীবাহী বাসটি। মর্মান্তিক এ দূর্ঘটনায় নারী ও পুরুষসহ নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ জনে। মারাত্বক আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। তবে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ব্র্যাক অফিসের পাশে মহেশপুর (বাঁশহাটির সামনে) শনিবার ভোর ৪টা ২০ মিনিটে এ দূর্ঘটনা ঘটে। দূর্ঘটনার পর থেকে সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দীর্ঘ চেষ্টার পর দূর্ঘটনার শিকার বাসটি সরিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

বাসের আহত যাত্রীরা জানান, অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বাসটি ছাড়ার পর থেকে বেপরোয়া গতিতে বাস চালাচ্ছিলেন চালক। ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত চালকের বেপরোয়া গতি দেখে অনেকেই গতি কমাতে বলেন। কিন্তু চালক কারো কথা না শুনেই বাসটি বেপেরায়া গতিতে চালাতে থাকে। বগুড়া পার হওয়ার পর চালকের চোখে ঘুম ভর করে। এসময় বেপরোয়া গতির সঙ্গে দুই-তিনবার অন্য গাড়ি ওভারটেক করতে গিয়ে বাসটি দূর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যায় বলে জানান যাত্রীরা।

এ অবস্থায় পলাশবাড়ীতে পৌঁছার পর ফাঁকা সড়কেই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। প্রচণ্ড গতিতে সড়কের পাশের একটি বড় গাছে সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে খাদে পড়ে যায়। এতে বাসটি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই ৯ জন নিহত এবং আহত হন অন্তত ৩০ জন।

পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আহত যাত্রী রনি তালুকদার ও হান্নান মিয়ার অভিযোগ, বাসের ৪২ সিট ছাড়াও চালকের পিছনে ইঞ্জিন কভারে আরও ৫-৭ জন যাত্রী ছিলো। এছাড়া বাসের ছাদের উপরেও ১২-১৩ জন যাত্রী ছিলেন।

রনি বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী থাকার পরেও বেপরোয়া গতিতে বাস চালাচ্ছিলেন চালক। দূর্ঘটনার আগে প্রচণ্ড শব্দ শুনতে পাই। এরপর বাসটি উল্টে খাদে পড়ে। স্থানীয় লোকজন আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

গরু ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, ‘এক সাথে ১৩ জন গরু ব্যবসায়ী বাসের ছাদের উপর উঠেন। তারা গরু কেনার জন্য দিনাজপুর জেলায় যাচ্ছিলেন। বারবার চালককে সাবধান করা পরেও সে কারও কথাই শোনেনি।

আলী হোসেন জানান, দূর্ঘটনার পর তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। হাসপাতালে আনার পর জ্ঞান ফিরলে দেখেন হাত-পা ও মাথায় আঘাত পেয়েছেন।

গাইবান্ধা ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আমিরুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত যাত্রী থাকার পরেও চালক বেপরোয়া গতিতেই বাস চালায়। এ কারণে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালো বাসটি বড় গাছের সাথে ধাক্কা খায়।  আহতদের উদ্ধার করে পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ রংপুর ও বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়’।

পলাশবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল আলম বলেন, দূর্ঘটনায় চালক ও হেলপারের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

দূর্ঘটনার পরপরেই গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল, পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান সরকার ও পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ হোসেনসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দূর্ঘটনার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।

এর আগে, গত ১০ মার্চ রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পলাশবাড়ী উপজেলা শহরের দক্ষিণ বাসষ্ট্যান্ড ও জুনদহ এলাকায় পৃথক সড়ক দূর্ঘটনায় শিশুসহ ১১ জন নিহত হয়েছিলেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply