মুক্তিযুদ্ধের গানের স্বত্ব নিয়ে বিতর্ক; ৭০ দশকের গান নিজেদের বলে দাবি ২ যুবকের!

|

‘কতো অগণন তাজা তাজা প্রাণ’- মুক্তিযুদ্ধের এই গানের গীতিকার-সুরকার হিসেবে নিজেদের দাবি করেছে আকরাম ও নঈম নামের দুই যুবক। সম্প্রতি গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যে এমন দাবি করেন তারা। সত্তর দশকের এই গানটি নিজেদের দাবি করা নিয়ে শুরু থেকেই চলছে সমালোচনা। যমুনা টেলিভিশনের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে গানটির প্রকৃত স্রষ্টাদের পরিচয়।

সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে দুই যুবক নিজেদের ‘গীতিকার আকরাম’ ও ‘সুরকার নঈম’ দাবি করে বলেন, তারা জীবিত আছেন। ‘কতো অপমান তাজা তাজা প্রাণ’- দুই জন হুবহু গানের এই শিরোনাম উল্লেখ করে বলেন, এটি তাদের গান এবং টাকাও পেয়েছেন তারা। তবে যমুনা টিভির অনুসন্ধান বলছে, ময়মনসিংহ শহরের মূর্ছনা স্টুডিওতে ধারণ করা হয় গানটি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গানের লাইনটি হচ্ছে ‘কতো অগণন তাজা তাজা প্রাণ’। জেলা শিল্পকলা একাডেমির ই-মেইল থেকে দেয়া গানের কপিতেও আছে একই উচ্চারণ। অথচ গানটি নিজেদের দাবি করা যুবকরা বলেছিলেন, ‘কতো অপমান তাজা তাজা প্রাণ’। মূর্ছনা স্টুডিওর স্বত্বাধিকারী আজিজুর রহমান লিটন জানান, গীতিকার, সুরকার, বাদক দল ও শিল্পীদের সেই স্টুডিওতে নিয়ে আসা হয়। তিনি রেকর্ডিং, মিক্সিং ও মাস্টারিং করেছেন। রেকর্ডিংয়ের সময় সুরকার লুৎফর রহমান খোকনও ছিলেন বলে জানান আজিজুর রহমান লিটন। তার কথার সূত্র ধরে যোগাযোগ করা হয় লুৎফর রহমান খোকনের সাথে।

টেলিফোনে যমুনা টিভির সাথে কথা হয় সুরকার লুৎফর রহমান খোকনের। তিনি জানান, ৮০’র দশকে তিনি গানটি গাইতেন। ১৯৮৬-৮৭’র দিকে তিনি নিজে অনেকবারই গানটি গেয়েছেন। এরপর তিনি জানতে পারেন, গানটির সুরকার সালাম খান।

৮০’র দশকে গাওয়া এই গানের আদ্যোপান্ত জানতে অনুসন্ধানে সদরের শম্ভুগঞ্জ এলাকায় খুঁজে পাওয়া যায় প্রকৃত সুরকার সালাম খানকে। তিনি জানান, সত্তরের দশকে এই গান সুর করেছিলেন। সেই সময়ে গানের খাতাও দেখান তিনি। সেখানে দেখা যায়, গীতিকার প্রয়াত শেখ আকরাম আলী ও সুর করেছেন সালাম খান।

সুরকার সালাম খান।

সুরকার সালাম খান বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমি, নাঈম ভাই একটা ঘরে বসে দেশকে ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য এসব স্বাধীনতার গান তৈরি করেছি। আকরাম আলী সাহেব গানটা লিখে দিয়েছেন, খাতাটি তার।

গানের স্বত্ব দাবি করা দুই যুবকের বক্তব্য শুনে হতভম্ব হয়ে যান এই সুরকার। সালাম খান বলেন, ওদের চ্যালেঞ্জ করতে বলেন। লেখা দেখাতে বলেন, তারা কত সালে গানটা করেছে। ওরা গানটা লিখেছে, সুর করেছে- এসব তো মিথ্যা কথা। ওদের বয়সের সাথে গানটা মিলবে না।

এমন মিথ্যার অশ্রয় দেখে এক পর্যায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন সালাম খান। তিনি বলেন, আমার চোখে পানি থাকবে না। কারণ, আমি নিজের ঢোল নিজে পিটাই না। আমার মেধা তারা চুরি করে বাহবা কুড়াবে, টাকা পয়সা নেবে- এই অন্যায়টা আমি মেনে নিতে পারছি না। এই কপিরাইট আইনে যে বিচার হয়, আমি সেটাই চাই। এরা দেশের শত্রু, জনগণের শত্রু।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply