জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের ৫ দফা দাবি

|

মাহফুজ মিশু, শার্ম আল শেইখ (মিসর) থেকে:

রোববার বিরতির পর আবার শুরু হয়েছে এবারের জলবায়ু সম্মেলন, কপ ২৭। চলছে শেষ দিকের দর কষাকষি। গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রিতে সীমিত রাখা আর ক্ষতি মোকাবিলায় দায়ী দেশগুলো থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়টি এবারো জলবায়ু সম্মেলনে বড় আলোচ্য। যদিও এখনও পর্যন্ত বড় কোনো প্রতিশ্রুতি না পাওয়ায় সবার নজর শেষ সপ্তাহের দিকে। সোম ও মঙ্গলবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ নিয়ে কথা বলছেন বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারকরা।

২০২১ সালে কপ ২৬ এর আয়োজক যুক্তরাজ্য ও এবারের আয়োজক মিশরের যৌথ প্রতিবেদন বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দরকার হবে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। সে তুলনায় এখন পর্যন্ত যে অঙ্গীকার মিলেছে তা খুবই সামান্য। এখন পর্যন্ত এবারের সফলতা- এজেন্ডায় ‘লস এন্ড ড্যামেজ’ আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হওয়া। এর পেছনে বাংলাদেশের তৎপরতা অস্বীকার করার উপায় নেই। এরই মধ্যে জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা বা ‘ক্লাইমেট এডাপটেশন প্ল্যান’ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। সেটির বাস্তবায়নে কী পরিমাণ অর্থ দরকার তা নিয়েও চলছে আলোচনা। সামান্য কিছু অর্থ বৈশ্বিক ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ ফান্ডে যুক্ত হয়েছে- এবারের সম্মেলনে সেটিই টার্নিংপয়েন্ট বলে মনে করছেন মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

কপ ২৭ এ, ৫ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমানো, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি মোতাবেক ১০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ বাস্তবায়ন, লস এন্ড ডেমেজের প্রকৃত ক্ষতিপূরণের অর্থ উন্নত দেশগুলোর বাজেট থেকে বরাদ্দ করা এবং পৃথিবীকে বাঁচাতে সবাই মিলে সম্মিলিত পদক্ষেপ নেয়া।

জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে কম দায় আমাদের। বাংলাদেশের মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ মাত্র দশমিক ছয় টন। অথচ বিশ্বের গড় মাথাপিছু কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে ৪.৫ টন। উন্নত ও দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোর মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের দায় আমরা বহন করছি। জলবাযু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবনের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি উদ্ভাবনে আমাদের আরও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, যাতে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারি এবং সহজে কার্বন নিঃসরণ কমাতে পারি।

এবার জলবায়ু সম্মেলন শুরুর আগেই ইউএনএফসিসিসি জানায়, কার্বন নিঃসরণ কমানোর নির্ধারিত লক্ষমাত্রা থেকে অনেক পিছিয়ে দেশগুলো। এ অবস্থা চলতে থাকলে শতাব্দী শেষে তাপমাত্রা শিল্পায়ন শুরুর যুগ থেকে এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রিতে বেঁধে রাখা কঠিন হবে। ভয়ের ব্যাপার হলো তা আড়াই ডিগ্রিতে পৌঁছে যেতে পারে। তার মানে এখনকার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো কার্বন নিঃসরণের যে পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তাতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রিতে বেঁধে রাখা কঠিন হবে। এজন্য কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা দ্রুত করার উদ্দেশ্যে আলোচনা চলমান।

জলবায়ু সম্মেলনের এই দ্বিতীয় ও শেষ সপ্তাহে এসেও অনেকের মনে দ্বিধা, শেষ পর্যন্ত কি কিছু হবে এবার? নাকি প্রতিবারের মতো ক্ষতিপূরণ ইস্যুতে আবারো শিল্পোন্নত, অধিক কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর জলবায়ু কূটনীতির আশ্বাসের ফাঁদেই কপ ২৮ পর্যন্ত আটকে যাবে সব?

লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply