মিরাজের সেঞ্চুরি ও রিয়াদের ফিরে আসায় চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ টাইগারদের

|

ছবি: সংগৃহীত

প্রথম ওয়ানডেতে মেহেদী হাসান মিরাজের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে হেরে সিরিজ হারের শঙ্কায় ছিল ভারত। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগার ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামিয়ে ভারত নিশ্চয় স্বপ্ন দেখেছিল, সহজেই সমতায় ফিরবে তারা। কিন্তু রোহিত শর্মার দল হয়তো ভাবেনি আরও একবার তাদের বাড়া ভাতে ছাই দিতে দাঁড়িয়ে যাবেন মিরাজ! ইনিংসের শেষ বলে সম্পন্ন হওয়া মিরাজের দুর্দান্ত লড়াকু সেঞ্চুরি এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের চমৎকার ব্যাটিংয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৭১ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ।

বুধবার (৭ ডিসেম্বর) শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে মাঠে নামে বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে এদিন শুরু থেকেই চাপে পড়েছে স্বাগতিকদের ব্যাটাররা। ওপেনার বিজয়ের পর পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগেই ফিরে গেছেন টাইগার অধিনায়ক লিটন দাস। দলীয় ৩৯ রানে সিরাজের ইনসুইঙ্গারে বোল্ড হয়ে ফিরে যান লিটন। ২৩ বলে এক চারে ৭ রান করে ফেরেন তিনি।

তারপরেই উমরান মালিকের গতির কাছে নিজের উইকেট বিলিয়ে ৩৫ বলে ২১ রান করে সাজঘরে ফেরেন শান্ত। সাকিব আল হাসান ছিলেন ছন্দহীন। ২০ বলে মাত্র ৮ রান করে ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে শিখর ধাওয়ানকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। মুশফিকুর রহিমও সাকিবের দেখানো পথেই হাঁটলেন। ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে ধাওয়ানের তালুবন্দি হন মুশফিক। আফিফ হোসেন দাঁড়াতেই পারেননি। শূন্য রানে তিনি ফিরেছেন ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে বোল্ড হয়ে।

৬৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে তখন রীতিমতো ধুঁকছে বাংলাদেশ। ছয় নম্বরে নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ টেনে নেন দলকে। সাথে যোগ দেন আট নম্বরে নামা আগের ম্যাচ জয়ের নায়ক মেহেদী মিরাজ। ব্যাটিং লাইন আপের শেষ স্বীকৃত এই দুই ব্যাটার দায়িত্ব নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজ শুরু করেন। রক্ষণ ও পাল্টা আক্রমণের দারুণ মিশেলে এই দুই ব্যাটার ভারতীয় শিবিরে বাড়ান দুশ্চিন্তা ও শঙ্কা।

দলীয় রানকে চ্যালেঞ্জিং জায়গায় নিয়েই থেমেছেন মাহমুদউল্লাহ। ব্যক্তিগত ৯৬ বলে ৭৭ রানে ফেরার আগে এই নির্ভরযোগ্য ব্যাটার মিরাজকে নিয়ে গড়ে যান একটি রেকর্ড। ৭ম উইকেট জুটিতে গড়া এই ১৪৮ রানের পার্টনারশিপ ভারতের বিপক্ষে যে কোনো জুটিতে সর্বোচ্চ। উমরান মালিকের অফস্ট্যাম্পের বাইরে করা হার্ড লেন্থের ডেলিভারিতে উইকেটকিপার লোকেশ রাহুলের দারুণ ক্যাচে পরিণত হয়ে শেষ হয় মাহমুদউল্লাহর ইনিংস।

নন স্ট্রাইকে থাকা মিরাজের দুশ্চিন্তা লং অন দিয়ে সীমানা পাড় করেন ব্যাট করতে নামা নাসুম আহমেদ। ব্যাটিংয়ে এসেই পরপর দুই বলে তিনি বাউন্ডারি হাকান উড়তে থাকা উমরান মালিককে। ২ চার ও ১ ছয়ে ১১ বলে ১৮ রানের ক্যামিও খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি।

আর বাকি সবই মিরাজের বীরত্বগাথা। এই সিরিজে নিজের ব্যাটিংকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন যেন এই অলরাউন্ডার। সিরাজ, শার্দুল, উমরানদের অসহায় বানিয়ে উইকেটের চারদিকে মিরাজ খেলেছেন দুর্দান্ত সব ক্রিকেটীয় শট। সেই সাথে অপ্রচলিত কিছু শটে বাউন্ডারি বের করে ভারতীয় পেসারদের লাইন-লেংথের পরিকল্পনা ধ্বংস করে দিয়ে ইনিংসের শেষ বলে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন প্রথম ম্যাচে টাইগারদের অবিশ্বাস্য জয়ের এই নায়ক। ৮টি চার ও ৪টি ছয়ের সাহায্যে ৮৩ বলে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংসটিকে মিরাজ হয়তো তার ক্যারিয়ারের অনন্য আরেক অর্জন হিসেবেই বিবেচনা করবেন। আর দর্শকরা? ৩৯ বলে ৩৮, নাকি ধ্বংস্তুপ থেকে দলকে টেনে তোলার পথে করা প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে তা বিচার করতে হয়তো জরিপের প্রয়োজন পড়বে!

ভারতের হয়ে ইনিংসের সবচেয়ে সফল বোলার ওয়াশিংটন সুন্দর। ১০ ওভার বল হাতে দিয়েছেন ৩৭ রান। ঝুলিতে তুলেছেন ৩ উইকেট। এছাড়া দুটি করে উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজ ও উমরান মালিক।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply