কেন বারবার আগুন লাগে?

|

শাকিল হাসান:

অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা না রেখেই চলছে মার্কেট-কারখানা। নতুন যেগুলো তৈরি হচ্ছে সেগুলোতেও বালাই নেই নিরাপত্তা ব্যবস্থার। এগুলো যারা দেখভাল করবে, সেই সব সরকারি দফতরগুলোরও মন নেই কাজে। প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পর গঠিত তদন্ত কমিটি নানা সুপারিশ করলেও তা আলোর মুখ দেখে না। এ কারণে ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছে রাজধানী। ফায়ার সার্ভিসের বর্তমান ও সাবেক দু’জন মহাপরিচালকের কথায় উঠে এসেছে এসব তথ্য।

মার্কেট কিংবা বাসা, বস্তি কিংবা অভিজাত এলাকা- অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন ভবন। একের পর এক আগুনের ঘটনা লেগেই আছে। অথচ প্রতিটি আগুনের ঘটনার পরই তদন্ত কমিটির রিপোর্টে থাকে নানা সুপারিশ। বিল্ডিং কোড বা ফায়ার সার্ভিসের অগ্নি নিরাপত্তায় আছে নানা নির্দেশনা। কিন্তু এসব আইন আর নির্দেশনার থোড়াই কেয়ার করেন ভবন-মার্কেট মালিক আর ব্যবসায়ীরা। তা না হলে যে মার্কেট ২০১৯ সালেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলো তা এতো বছর নির্বিঘ্নে চললো কীভাবে! বলা হচ্ছে আজ (৪ এপ্রিল) সকালেই পুড়ে ছাই হওয়া বঙ্গবাজার মার্কেটের কথা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ২০১৯ সালের ২ এপ্রিল এই ভবনটিকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছিলাম। আমরা ব্যানারও টাঙিয়ে দিয়েছিলাম। এরপরও ১০ বার নোটিশ দিয়েছি। আমাদের করণীয় যা যা ছিল, আমরা সবই করেছি।

গত মাসেই সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ আর আগুনের ঘটনার পর তদন্তে দেখা গেছে, বেজমেন্ট যেখানে খোলা থাকার কথা সেখানে তৈরি করা হয়েছিল গুদাম। বেশিরভাগ ঘটনায় দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা মার্কেট বা কারখানায় বিনিয়োগ করেন। কিন্তু অগ্নি নিরাপত্তায় কোনো অর্থ খরচ করতে চান না। বেশিরভাগ ভবন চলছে অগ্নি নিরাপত্তা ছাড়পত্র ছাড়াই।

এসব তদারকিতে গাফিলতি আছে কর্তৃপক্ষের, এমনটাই মনে করেন ফায়ার সার্ভিস ও ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান। তিনি বলেন, আমাদের রেগুলেটরি বডিগুলোর কিছু দুর্বলতা আছে। তারা খুব একটা শক্তিশালী নয়। তাদের শক্তিশালী করাও হয় না। ফায়ার সার্ভিসের এনফোর্সমেন্টেও (প্রায়োগিক অংশ) দুর্বলতা আছে। তারা হয়তো আগুন নেভাচ্ছে। কিন্তু আমাদের প্রতিরোধমূলক সকল ব্যবস্থা এবং ফায়ার সার্ভিসের এনফোর্সমেন্টকে নিশ্চিত করতে হবে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রতিরোধে নিরাপত্তা ছাড়পত্র যথাযথভাবে মানতে হবে। আর, এরই মধ্যে যেসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো দ্রুতই ঝুঁকিমুক্ত করার তাগিদ সাবেক এই মহাপরিচালকের। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান বলেন, মহড়া ভালোভাবে হয় না, সিস্টেমকেও উন্নত করা হয় না। এখানে বিনিয়োগ দরকার। আর এই বিনিয়োগকে অনেকেই অপচয় মনে করে। এখানে বিনিয়োগ এমনভাবে করতে যাতে মূলধনকে রক্ষা করা সম্ভব হয়। যারা বিল্ডিং কোড মানবে না, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আমাদের যদি কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকে, তবে মানুষ কিন্তু এর সুযোগ নিতেই থাকবে।

আরও পড়ুন: ২০১৯ সালেই বঙ্গবাজারকে ‌‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করা হয়: তাপস

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply