আইফোন ১৫ প্রো এবং আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্সের পর্যালোচনা

|

সাধারণত নতুন ফোন কেনার সময় বাজেটের পাশাপাশি মানুষ নতুন ফিচার, ডিজাইন কিংবা সেটের রঙের মতো বিষয়গুলোই বিবেচনা করে বেশি। তাতে ব্যবহারকারীর পছন্দ কিংবা রুচিবোধ যেমন প্রতিফলিত হয়, পাশাপাশি তার সেটটি পরিচিত বা অপরিচিত মানুষের কাছে কেমন লাগবে সেই বিবেচনাও করতে দেখা যায়। এ সকল বিবেচনা থেকেই কোনো কোনো সেটের বিশেষ ব্র্যান্ড হয়ে উঠা, যেমন- আইফোন। ফলে আইফোন-১৫ প্রো এবং ১৫ প্রো ম্যাক্স নিয়ে মাতামাতি হবে সেটিই স্বাভাবিক।

বিগত বছরগুলোর আইফোনের মডেলগুলোর সাথে এই বছরের আইফোন ১৫ প্রো এবং আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্সে মোটাদাগে খুব একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। তবে আইফোন লাভারদের জন্য খুশির খবর, ১৫ প্রো ও ১৫ প্রো ম্যাক্সের ডিজাইনে এমন কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তন এসেছে, যা ব্যবহারকারীরা শুরু থেকেই অনুভব করবেন। 

১. আগের চেয়ে হালকা

আইফোন ১৫ প্রো এবং আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্সের চ্যাসিস তৈরিতে  টাইটানিয়াম ব্যবহার করা হয়েছে, যা আগের মডেলগুলোতে ছিল না। টাইটানিয়াম যা একটি শক্তিশালী, টেকসই এবং একই সঙ্গে হালকা ধাতু। ফোনের পিছনে টেক্সচার্ড ম্যাট গ্লাসের পাশাপাশি টাইটানিয়াম ফ্রেম মোবাইল ফোনটিকে করেছে অনন্য।

এটি আগের স্টেইনলেস স্টিলের মডেলগুলোর চেয়ে সুন্দর, অন্তত ব্যবহারকারীরা তাই বলছেন। যদিও মানুষ এটি দূর থেকে লক্ষ্য করবে না। তবে নতুন এই দুই মডেলের সেট যে খুবই হালকা সেটি ব্যবহারকারী মাত্রই অনুধাবন করতে পারবেন। 

 

২.টাইপ সি চার্জার

আইফোনের নতুন যে বৈশিষ্ট্যটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে সেটি হচ্ছে প্রথমবারের মতো ‘টাইপ সি’ চার্জিং পোর্টের সংযোজন। চিরায়ত লাইটনিং পোর্টকে প্রতিস্থাপন করে এবার ১৫ প্রো এবং ১৫ প্রো ম্যাক্সে সংযোজন করা হয়েছে ‘টাইপ সি’ চার্জার।

এই সেটগুলোতে ইউএসবি-সি’র মাধ্যমে দ্রুত ডাটা স্থানান্তর করা যাবে। তবে  প্রতি সেকেন্ডে ১০ জিবি ডাটা স্থানান্তরের গতি সমর্থন করে এমন একটি কেবল ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও বোনাস হিসাবে আপনি এখন ইউএসবি-সি এয়ারপডস প্রো এবং অ্যাপল ওয়াচকে আপনার আইফোনের সাথে সংযুক্ত করে চার্জ করতে পারেন।

৩. গেমারদের জন্য নিখুঁত 

ফোনের ভিতরে অনেক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে অ্যাপল, কিন্তু দৈনন্দিন ব্যবহারে এটি তেমন লক্ষণীয় নয়। অ্যাপলের নতুন এ-১৭ প্রো চিপ ৩ ন্যানোমিটার প্রসেসরের সাথে তৈরি প্রথম চিপ, যা কম ব্যাটারি খরচ করে খেলার সময় আরও বেশি পাওয়ার দেয়। অ্যাপল বলছে, আইফোন ১৫ প্রো এবং আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্সের সিপিইউ (CPU) আগের মডেলগুলোর তুলনায় ১০% দ্রুত। তবে গিকবেঞ্চের গেমারদের জন্য হতাশাজনক। কারণ, আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স দ্রুত, তবে আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্সের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে দ্রুত না।

তবে আপনি যদি একজন আগ্রহী গেমার হন এবং বিশেষ করে যদি আপনি ভারী গ্রাফিক্সের গেম পছন্দ করেন, তাহলে এই ফোনটি আপনার জন্য। অ্যাপলের নতুন ৬-কোর গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) মেশ শেডিং এবং হার্ডওয়্যার আলো ট্রেসিংয়ের মতো জিনিসগুলিকে খুব ভালোভাবে কার্যকরী ও সক্ষম করে তুলে, যা গেমগুলোর আলো এবং ছায়াকে অনেক বেশি প্রাণবন্ত করে তোলে। দুর্ভাগ্যবশত, যে গেমগুলি আসলে এটিকে সমর্থন করে সেগুলি এই মুহূর্তে বিদ্যমান নেই (উদাহরণস্বরূপ, ক্যাপকমের রেসিডেন্ট ইভিল-৪ এই বছরের শেষের দিকে অ্যাপ স্টোরে চালু হবে)।

৪. জুম করার সক্ষমতা 

অ্যাপেলের নতুন ফোন কেনার আরেকটি বড় কারণ হলো উন্নত ক্যামেরা। আইফোন ১৫ প্রো এবং  ১৫ প্রো ম্যাক্সের ক্যামেরাগুলি গত বছরের ফোনের ক্যামেরাগুলির তুলনায় প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভালো। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, শুধুমাত্র আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্সে রয়েছে নতুন, ৫এক্স টেলিফটো ক্যামেরা। 

১৫ প্রো এবং  ১৫ প্রো ম্যাক্সের ক্যামেরাগুলোর রেজ্যুলেশন একই। গত বছরের মডেলগুলোর মতো এবারও মূল ক্যামেরার জন্য ৪৮ মেগাপিক্সেল, টেলিফটোর জন্য ১২ মেগাপিক্সেল এবং আল্ট্রা-ওয়াইড ক্যামেরা একই। 

ছবি: বামদিকের আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্স দিয়ে তোলা ছবিটি, ডানদিকের আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স দিয়ে তোলা ছবির চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে তীক্ষ্ণ, প্রাণবন্ত এবং আরও বিস্তারিত।

যেখানে আইফোন ১৪ প্রো মডেলে ১২ মেগাপিক্সেলের ছবি তোলা যেতো সেখানে এখন আইফোন ১৫ প্রো এবং প্রো ম্যাক্স ডিফল্ট ক্যামেরায় ২৪ মেগাপিক্সেল ছবি তোলা যায়। নতুন আইফোনে আশ্চর্যজনকভাবে তীক্ষ্ণ এবং বিশদ ছবি তোলা যাচ্ছে। উপরের কোলাজটি দেখলে বুঝতে পারবেন। আইফোন ১৪ প্রো ম্যাক্স এবং ১৫ প্রো ম্যাক্সের সাথে একই ভ্যান্টেজ পয়েন্ট থেকে ডিফল্ট সেটিংসে ফটো তোলা হয়েছে এবং নতুন ফোন প্রতিবার জিতেছে। কারণ ১৫ প্রো ম্যাক্স ফটোটির রেজোলিউশন, ১৪ প্রো ম্যাক্সের তুলনায় দ্বিগুণ।  

ছবি: অতিরিক্ত মেগাপিক্সেল ভালো ছবি তোলার জন্য খুবই উপযোগী।

আইফোন ১৫ প্রো ম্যাক্সের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা নিয়মিত ১৫ প্রো’ তে নেই। ছবি তোলার সময়, প্রো ম্যাক্সে একটি টেট্রাপ্রিজম লেন্সসহ ৫-এক্স জুম ইন করতে পারবেন। এর মানে হল আপনি গুণমানের ক্ষতি ছাড়াই কম আলোতেও ভাল দেখাবে এমন ছবি তুলতে সক্ষম। মূলত এই বৈশিষ্ট্য প্রায়শই অন্যান্য স্মার্টফোন-গ্রেডের টেলিফটো ক্যামেরাগুলিতে থাকে না।

ছবি: বাম দিকের ১-এক্স ক্যামেরায় তোলা ছবিতে ডিটেইলস ততটা দৃশ্যমান নয়, ডানদিকের ৫-এক্স টেলিফোটো ক্যামেরার যা স্পষ্ট।

আইফোন ১৫ প্রো এবং  ১৫ প্রো ম্যাক্সের একটি দুর্দান্ত বৈশিষ্ট্য হলো তোলা ছবিগুলিকেও পোট্রেইট ফটোতে পরিণত করা যায়। এরপর ফোকাসও ইচ্ছামত পরিবর্তন করা যায়।

যেমন, প্রথমে একজন ব্যক্তি, কুকুর বা বিড়ালের একটি ছবি তুলুন। এরপর আপনি যদি ব্যাকগ্রাউন্ডটি অস্পষ্ট করতে চান বা ফটোতে একটি জায়গায় ফোকাস করতে চান, তাহলে আপনি এডিট চাপুন। এরপর যেখানে ইচ্ছা ফোকাল পয়েন্ট বেছে নিতে পারেন।

/এআই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply