কোহলির সেঞ্চুরিতে ভারতের চারে চার; হারের হ্যাটট্রিক বাংলাদেশের

|

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বকাপে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। ফলে হারের হ্যাটট্রিকের তেতো স্বাদ পেলো টাইগাররা। আগে ব্যাট করতে নেমে তানজিদ তামিম ও লিটন দাসের জোড়া ফিফটির পর শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহর ঝড়ো ৪৬ রানের ওপর ভর করে ২৫৬ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ভিরাট কোহলির সেঞ্চুরি ও শুভমান গিলের ফিফটিতে ৫০ বল হাতে রেখেই সহজ জয়ে তুলে নেয় মেন ইন ব্লু’রা। সেই সাথে টানা চার জয়ে সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রাখলো রোহিত শর্মার দল।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের দেয়া ২৫৭ রানের মাঝারি লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ঝড় তুলেন রোহিত শর্মা। অধিনায়কের দেখাদেখি হাত খুলতে শুরু করেন শুভমান গিলও। টাইগার বোলারদের বাজে বল পেলেই বাউন্ডারির বাইরে আঁচড়ে ফেলেন। পাওয়ারপ্লেতে ৬৩ রান যোগ করেন তারা।

পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন গিল। মোস্তাফিজের করা ১২তম ওভারে মারেন তিন চার। পরের ওভারে খানিকটা পরিকল্পনা করেই রোহিতকে আউট করেন হাসান মাহমুদ। স্কয়ার লেগে তাওহীদ হৃদয়কে রেখে শর্ট লেংথ ডেলিভারি করছিলেন ডানহাতি এই পেসার। নিজের পছন্দের জায়গায় বল পেয়ে ছক্কা মারেন রোহিত। পরের বলেও ভারতীয় অধিনায়ককে একই লেন্থে বল করেন হাসান। এবার খানিকটা নিচু করে মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে হৃদয়ের হাতে ধরা পড়েন ৪৮ রান করা রোহিত।

অধিনায়ক রোহিত শর্মা ফিফটির আক্ষেপে পুড়লেও আরেক ওপেনার শুভমান গিল ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১০ম ফিফটি পূর্ণ করেন ৫২ বলে। ১২.৫ ওভারেই স্কোরবোর্ডে ১০০ রান জমা হয় ভারতের। ফিফটি হাঁকানোর পর অবশ্য বেশিদূর যেতে পারেননি গিল। ব্যক্তিগত ৫৩ রানে মিরাজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ধরা পড়েন ভারতীয় এই ওপেনার। ১৩২ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় ভারত। 

‘চেজ মাস্টার’ কোহলি আজও ছিলেন নিজের চেনা ছন্দে। এবারের বিশ্বকাপে ভারতের খেলা চার ম্যাচের তিনটিতেই কোহলি পেলেন অর্ধশতকের দেখা। বাংলাদেশের বিপক্ষে কোহলির এদিন ফিফটি পূর্ণ করেন ৪৮ বলে। আর তাতেই ওয়ানডে বিশ্বকাপে রোহিতের সমান ১১টি ফিফটি স্পর্শ করেন কোহলি। ৩৩.৩ ওভারে ভারতের স্কোরবোর্ডে আসে দুইশো রান। এর আগেই শ্রেয়াস আইয়ার বিদায় নেন। ১৯ রান করা আইয়ারকে ফেরাতে মিরাজের বলে ফের ক্যাচ লুফে নেন রিয়াদ।

৫ নম্বরে নামা লোকেশ রাহুল ক্রিজে এসে দারুণভাবে সঙ্গ দেন কোহলিকে। ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালিয়ে কোহলি সহজেই চলে যান সেঞ্চুরির পথে। জয়ের জন্য শেষ দশ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ৮ রানের, কোহলিরও শতক হাঁকাতে দরকার ছিল ৮ রানে। এমন সমীকরণে সিঙ্গেল ডাবল না নিয়ে কোহলির চাওয়া যেন কেবলই শতক। শেষপর্যন্ত নাসুমকে ছয় হাঁকিয়ে কোহলি তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৮তম সেঞ্চুরি। ৯৭ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় ১০৩ রানে অপরাজিত থাকেন কোহলি। এছাড়াও ৩৪ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন লোকেশ রাহুল। টাইগারদের হয়ে মেহেদী মিরাজ নেন ২ উইকেট। এছাড়াও হাসান মাহমুদ শিকার করেন ১টি উইকেট।

এর আগে, টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা বেশ রয়েসয়ে করেন দুই ওপেনার লিটন ও তামিম। ভারতের দুই পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ এবং মোহাম্মদ সিরাজের দারুণ সব বল ছেড়ে খেলেন দুজনই। তুলনামূলক ধীরগতিতে ছিলেন লিটন। ১৪তম বলে নিজের প্রথম রানের দেখা পান লিটন। পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে বুমরাহর ইয়র্কার ফ্লিক করতে গিয়ে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে যান তানজিদ। যদিও বুমরাহর মনে হয়েছে বলটি তানজিদের প্যাডে লেগেছে, আর তাই আবেদনও করেননি তিনি।

একদম অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ‘জীবন’ পেয়ে যান এই তরুণ ওপেনার। তবে ষষ্ঠ ওভার থেকেই ম্যাচের মোড় ঘুড়িয়ে দেন লিটন। সিরাজের একই ওভারে দু’টি বাউন্ডারি হাঁকান এই ওপেনার। প্রথম পাঁচ ওভারে বাংলাদেশ করে মাত্র ১০ রান।

এরপর সময় যত গড়িয়েছে নিজেদের স্বভাবসুলভ ব্যাটিং উপহার দেন দুই টাইগার ওপেনার। জাসপ্রিত বুমরাহ-মোহাম্মদ সিরাজদের বাজে বল পেলেই বাউন্ডারি মারেন তারা। বিশেষ করে জুনিয়র তামিম ভারতীয় বোলারদের উপর চড়াও হয়ে ব্যাটিং করেন। লিটনের ব্যাট থেকেও এসেছে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় চারের মার।

ইনিংসের ১৪তম ওভারের পঞ্চম বলে শার্দূল ঠাকুরের করা বলে ডিপ পয়েন্টে পাঠিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান জুনিয়র তামিম। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে মাত্র ৪১ বলে ৫টি চার ও ৩ ছক্কায় ফিফটি তুলে নেন এই বাঁহাতি ওপেনার। হাফ সেঞ্চুরির পর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি এই ওপেনার। কুলদীপের গুগলিতে বিভ্রান্ত হয়ে এলবিডব্লিউ হন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ৪৩ বলে ৫১ রান করে সাজঘরে ফেরেন তামিম।

জুনিয়র তামিম ফেরার পর লিটনের সঙ্গে জুটি বাঁধতে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে তাকে থিতু হতে দেননি রবীন্দ্র জাদেজা। ভারতীয় এই স্পিনারের করা ব্যাক অব দ্য লেংথ ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। তৃতীয় উইকেটে লিটনকে সঙ্গ দিতে ক্রিজে আসেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই ব্যাটারকে নিয়ে ৬২ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন।

ব্যাটিং অর্ডারে প্রোমোশন পেয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ভালো খেললেও ভারতের বিপক্ষে হতাশ করেছেন মিরাজ। মোহাম্মদ সিরাজের লেগ স্টাম্পের বাইরে রাখা বলে ব্যাট ঘোরাতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন এই অলরাউন্ডার। ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাতে দারুণ ক্যাচ লুফে নেন উইকেটরক্ষক লোকেশ রাহুল। স্রোতের বিপরীতে এক লড়াই চালিয়ে যান লিটন দাস। তবে এই ওপেনারকেও ফিরতে হয় বাজে শট খেলার কারণে। রবীন্দ্র জাদেজাকে লং অফ দিয়ে উড়িতে মারতে গিয়ে লং অফে শুভমান গিলের হাতে ক্যাচ দেন লিটন। ব্যক্তিগত ৬৬ রানেই থামতে হয় এই ওপেনারকে।

মুশফিকুর রহিম আর তাওহিদ হৃদয় মিলে কিছুটা চাপ সামাল দেন। যদিও হৃদয় শুরু থেকেই মন্থর হয়ে ছিলেন। দু’জনের ৪২ রানের জুটিতে হৃদয়ের ব্যাট থেকে আসে ২৪ বলে ১১ রান। শার্দূল ঠাকুরের ডেলিভারিতে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ৩৫ বলে ১৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই তরুণ ব্যাটার। ছিল না কোনো বাউন্ডারি।

দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা মুশফিকও ফেরেন প্যাভিলিয়নে। জাসপ্রিত বুমরাহর শর্ট লেংথের বলে কাট করেন মুশফিক। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ডান দিকে লাফিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ লুফে নেন জাদেজা। এরপর একাই টাইগারদের হয়ে লড়াই চালান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শেষ ওভারে বুমরাহ’র দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে ৩৬ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় ৪৬ রান করেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। ৫০তম ওভারের শেষ বলে শরিফুল ইসলামের ছক্কায় ৮ উইকেট হারানো বাংলাদেশ পায় ২৫৬ রানের পুঁজি।

ভারতের হয়ে দু’টি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ সিরাজ, জাসপ্রিত বুমরাহ ও রবীন্দ্র জাদেজা। একটি করে উইকেট করেন কুলদীপ যাদব ও শার্দূল ঠাকুর।

/আরআইএম


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply