আরাধ্য ট্রফিতে মেসির চুমু আঁকার এক বছর আজ

|

লিওনেল মেসি, একজন ব্যক্তিকে গোটা বিশ্বে পরিচয় করিয়ে দিতে এই নামটিই যতেষ্ট। বাঁ পায়ের জাদুতে ফুটবল বিশ্বে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন এই আর্জেন্টাইন। তার ক্যাবিনেটে শিরোপার কমতি নেই। ক্লাব পর্যায়ে জিতেছেন একের পর এক শিরোপা। তবে হাহাকার ছিল একটি বিশ্বকাপ ট্রফির। শুধু মেসি নন, গোটা আর্জেন্টাইনদেরও হাহাকার এই আরাধ্য ট্রফির জন্য। ‘হ্যান্ড অব গড’ খ্যাত গোল করে ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ জয়ের পর ৩৬ বছর এই শিরোপা না জেতার আক্ষেপে পুড়েছিলেন এলএমটেন নিজেও।

২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে ফাইনালে উঠেছিলো মেসির আর্জেন্টিনা। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে মারিও গোৎসের একমাত্র গোলে শিরোপা উল্লাস করে জার্মানি। হারের পর বিশ্বকাপ ট্রফির দিকে মেসির অপলক তাকিয়ে থাকার দৃশ্য ভক্তদের হৃদয়ে এখনও নাড়া দেয়। ওই আসরে সেরা ফুটবলার হিসেবে গোল্ডেন বল জিতেছিলেন মেসি। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মেসি নিজেই বলেছিলেন, ব্যক্তিগত অর্জন নয়, দলের হয়ে কিছু জিততে চেয়েছিলেন তিনি।

২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপে এসে সেই আক্ষেপ পূরণ করেন মেসি। ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাতে লুসাইল স্টেডিয়ামে থ্রিলালের পর ট্রাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা খরা ঘুচান মেসি। পরম আরাধ্য ট্রফিতে চুমু এঁকে পূরণ করেন লালিত স্বপ্ন। আজ মেসির আক্ষেপ পূরণের এক বছর পূর্তি।

দুই দলেরই লক্ষ্য ছিল তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জেতা। ম্যাচের প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। শুরু থেকে গোল ও আক্রমণে ম্যাচকে ‘একপেশে’ করে রেখেছিলেন স্কালোনির শিষ্যরা। ম্যাচের ৭৮ মিনিট পরই যেন, ফরাসিরা ‘পিকচার আভি বাকি হ্যায়’ কথাটি মনে করালেন। শেষের জন্য জমা রাখা সব রোমাঞ্চ ছড়িয়ে মাত্র ৯৭ সেকেন্ডের ব্যবধানে এমবাপ্পে জোড়া গোল করে আর্জেন্টিনার গ্যালারি ভর্তি সমর্থকদের নীরব করিয়ে দেন। এরপরই শুরু থ্রিলার।

গোল শোধের পর উজ্জীবিত ফ্রান্সের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে আর্জেন্টিনা। কে জানে, তখন হয়তো মারাকানার ২০১৪’র ফাইনালের কথাও মনে পড়ছিলো আর্জেন্টিনা শিবিরে। নির্ধারিত সময়ের খেলায় ২-২ সমতা থাকায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এবার আবারও গোল করে দলকে এগিয়ে নেন অধিনায়ক মেসি। উল্লাসে মেতে ওঠেন আকাশি-সাদারা। এই গোলেই আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতে গেছে ধরে নেন কেউ কেউ। কিন্তু পরক্ষণে আবার পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। গোল করে নিজের হ্যাট্রিক পূরণ করেন এমবাপ্পে। জল ঢেলে দেন আর্জেন্টিনার উল্লাসে।

ফাইনাল বাঁশি বাজার কয়েক সেকেন্ড আগে মার্টিনেজের ‘জীবনবাজি’ রাখা সেভে ৩-৩ ব্যবধানে শেষ হয় নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা। এরপরই শুরু হয় স্নায়ু চাপ বাড়ানো ট্রাইব্রেকার! যে চাপ ঠিকই জয় করে শিরোপা উল্লাস করেন মেসি-ডি মারিয়ারা। কাতার থেকে খালি হাতে ফেরেননি মেসি। স্পষ্ট করে বললে, এমিলিয়ানো মার্তিনেজ শূন্য হাতে ফিরতে দেননি আর্জেন্টিনাকে। পুরো টুর্নামেন্টের মতো ফাইনালেও আর্জেন্টিনার গোলপোস্ট সামলেছেন অতন্দ্র প্রহরীর মতো।

ক্যারিয়ারের সোনালী সময় কাটানো মেসি আসরে জেতেন সেরা খেলোয়াড়ের গোল্ডেন বল পুরস্কার। একমাত্র ফুটবলার হিসেবে বিশ্বকাপে দুইটি গোল্ডেন বল জয়ী খেলোয়াড় তিনি। এক বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব, শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল, ফাইনাল-প্রতিটি রাউন্ডেই গোল করে অনন্য কীর্তিও গড়েন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।

বিশ্বজয়ের পর মেসি জিতেছেন ব্যক্তিগত অনেক পুরস্কার। রেকর্ড অষ্টমবারের মতো ব্যালন ডি’অর, ফিফা দ্য বেস্ট, লরিয়াস পুরস্কারও জিতেছেন তিনি। তার দল আর্জেন্টিনাও রয়েছে দারুণ ছন্দে। বিশ্বকাপ পরবর্তী প্রীতি ম্যাচে কুরাসাওকে ৭-০ গোলে বিধ্বস্ত করে শুরু হয় তাদের জয়ের ধারা ধরে রাখার মিশন। সেই ধারায় বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকেও হারিয়েছে আলবিসেলেস্তেরা। ২০২৬ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে কনমেবল অঞ্চলে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে মেসির আর্জেন্টিনা।

এদিকে, ছুটি কাটাতে সপরিবারে নিজ শহর রোজরিওতে আছেন মেসি। বিশ্বকাপ জয়ের বর্ষপূর্তি, বড় দিন ও নতুন বছরের ছুটি সবমিলিয়ে উদযাপনে কী চমক থাকছে তা ভক্তদের জানতে অপেক্ষা করতেই হবে।

/এনকে


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply