ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বুঝে সাংবাদিকতা হোক মিয়ানমার সীমান্তে

|

মোহসীন-উল হাকিম⚫

সংঘর্ষ হচ্ছে সীমান্তের ওপাশে, এটা ঠিক। এটিও সত্য, এই যুদ্ধ কিংবা গোলাগুলি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আবার এর উত্তাপ মারাত্মকভাবে পড়েছে সীমান্তের এপাশে বাংলাদেশে, তা নিয়েও কোনো সন্দেহ নেই।

সবশেষ বান্দরবানের তুমব্রু-ঘুমধুম সীমান্তে বিদ্রোহীদের সাথে মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সংঘর্ষের প্রভাব অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। সীমান্ত থেকে দূরে যে যুদ্ধগুলো ঘটছে, তার খবর আমরা পাই। তবে সেই ঘটনার প্রভাব সরাসরি পড়ে না সীমান্তে। যদিও রাখাইনে কিছু হলেই আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়ে। নতুন করে রোহিঙ্গাসহ আরও রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের অনু্প্রবেশের শঙ্কা জাগে। এবারও রোহিঙ্গা ও কিছু চাকমা পরিবার বাংলাদেশের নদী ও সীমান্ত পথে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল। বাংলাদেশ তাদেরকে প্রবেশ করতে দেয়নি।

জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে মিয়ানমারের চিন প্রদেশের পালেতাও অঞ্চল দখল করে দেশটির বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি (এএ)। কালাদান নদীর তীরের সেনা স্থাপনা দখলে নেয় তারা। নৌপথ ও নদী বন্দর হিসেবে পালেতাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা। পাহাড় বেষ্টিত দুর্গম অঞ্চলটির মূল যোগাযোগ ছিল এই নদীপথ। আঞ্চলিক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমও কালাদান নদী। পালেতাও বিদ্রোহীদের দখলে যাওয়ায় রাখাইনের উত্তরের চিন প্রদেশের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়েছে রাখাইন। সামরিক কৌশলগত দিক থেকে বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পালেতাও দখলের পর থেকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অভিযান শুরু করে আরাকান আর্মি। লক্ষ্য রাখাইনের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও সেনা ক্যাম্প।

চিন প্রদেশের পালেতাও বন্দর থেকে কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে রাখাইন রাজ্যের শুরু। প্রদেশটির পূর্ব সীমান্তের পুরোটাই বাংলাদেশের সাথে। বান্দরবানের আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি আর কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের কিছু অংশে পড়েছে স্থল সীমান্ত। তার দক্ষিণে টেকনাফের সাথে নাফ নদীর মাঝ বরাবর সীমান্ত। মাসখানেক ধরে স্থল সীমান্তের তুমব্রু-ঘুমধুম, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের কিছু অংশের উল্টো পাশে চলছে বিদ্রোহীদের সাথে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ। একের পর এক বিজিপি ও সেনা স্থাপনা দখল করছে বিদ্রোহীরা।

সাম্প্রতিক সংঘর্ষে দুটি প্রধান বিজিপি ক্যাম্প তুমব্রু রাইট ও তুমব্রু লেফট দখল করে আরাকান আর্মি। দুটি ক্যাম্পই বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা। এই পাশে বাংলাদেশের জনবসতি আছে। মেশিন গানের গুলি ও মর্টার শেলের বিকট শব্দ আতঙ্কিত করেছে তাদের। মর্টার শেল বিস্ফোরণে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। একের পর এক মর্টার শেল পড়ছে বাংলাদেশ অংশে। ভাগ্য সহায় থাকায় কিছু শেল পড়েছে ফাঁকা জায়গায়। কয়েকটি মর্টার শেল ছিল অবিস্ফোরিত।

এই গোলাগুলির শব্দে গত ক’দিন কেঁপেছে সীমান্তের এপাশ-ওপাশ। দখল হয়ে যাওয়া বিজিপি স্থাপনাগুলো থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে বিজিপি সদস্য, সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ ও কাস্টমস কর্মকর্তারা। একইসঙ্গে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন নবী হোসেনের নেতৃত্বাধীন আরাকান রোহিঙ্গা আর্মির (এআরএ) সদস্যরা। তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি চলেছে রাখাইনের ভেতরে। বিজিপির ছেড়ে আসা ক্যাম্পগুলোর দখল রাখতে মরিয়া আরাকান আর্মি। রোহিঙ্গাদের কয়েকটি সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে আরাকান আর্মি দফায় দফায় সংঘর্ষে নামছে। রোহিঙ্গাদের কোনো কোনো দল মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে।

এ দফায় রাখাইন সীমান্তে সংঘর্ষের শুরুতেই খবর আসতে থাকে। প্রথম সংবাদ পাই তুমব্রুর সাংবাদিক মাহমুদুল হাসানের কাছ থেকে। ভিডিওসহ সংঘর্ষের খবর পাঠান তিনি। একইসাথে স্থানীয় সাংবাদিকরা কাজ শুরু করেন। এরপর কক্সবাজার, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে সাংবাদিকরা ছুটে যান সীমান্তে।

এবার পরিস্থিতি বেশ জটিল। ঝুঁকির মাত্রা স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তার মধ্যেও চলেছে সংবাদ সংগ্রহের কাজ। ঘরে বসে আমরা ওই সীমান্তের নিয়মিত আপডেটগুলো দেখেছি। ঘটনার সাথে সাথেই সংবাদমাধ্যমগুলো খবর পৌঁছে দিয়েছে। কারণ মাঠের সাংবাদিকরা ছিলেন ঘটনাস্থলে, একদম ফ্রন্টলাইনে।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও এই ফ্রন্টলাইনারদের আমরা বাড়তি কোনো বাহবা দেইনি। অথচ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সংবাদ সংগ্রহ করেছেন তারা। বেপরোয়া গোলাগুলির মধ্যে শুন্যরেখায় দাঁড়িয়ে কাজ করা সাহসের ব্যাপার। শুধুমাত্র কমিটমেন্ট থেকে সাংবাদিকরা কাজ করেছেন। নিয়েছেন জীবনের ঝুঁকি। সংবাদ সংগ্রহে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, পৌঁছে দিয়েছেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে।

এমন পরিস্থিতিতে টেলিভিশন সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ কয়েকগুণ বেশি। গোলাগুলির সময় সম্মুখে দাঁড়িয়ে তাদের কাজ করতে হয়েছে। সহকর্মী চিত্র সাংবাদিকের সাথে নিজের জীবনের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হয়েছে। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট ব্যবহার করেছেন তারা। কিন্তু সেগুলো যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আসা গুলি ঠেকানোর মতো মজবুত কি না, জানি না। বাজার থেকে কেনা বুলেটপ্রুফ সরঞ্জামগুলো আদৌ বুলেটপ্রুফ কি না, তা কেউ খতিয়ে দেখেনি। তবুও সেই জ্যাকেটে আস্থা রেখে ছুটেছেন সাংবাদিকরা।

আমার সহকর্মী রিয়াজ রায়হান ঢাকা থেকে মিয়ানমার সীমান্তে যান। দিনের পর দিন তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন। সাথে ছিলেন চট্টগ্রাম ব্যুরোর আল আমিন এবং কক্সবাজার প্রতিনিধি এহসান আল কুতুবী। সংবাদ সংগ্রহ করেছেন এবং টেলিভিশন ও সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ করেছেন।

শুরুর দিনে রিয়াজকে দেখলাম, ঘুমধুম সীমান্তের শুন্যরেখার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকতে। পেছনে মিয়ানমার বিজিপির ঢেঁকিবুনিয়া ক্যাম্পে যুদ্ধ চলছে। গোলাগুলির সাথে সাথে ছুটছিল মর্টার শেল। রিপোর্টার ও ভিডিও জার্নালিস্ট থেকে যুদ্ধক্ষেত্রের দূরত্ব মাত্র কয়েকশ মিটার। সেখানে দাঁড়িয়ে তারা লাইভ করেছেন। দেশের প্রায় সবগুলো টেলিভিশন, অনলাইন ও পত্রিকার সাংবাদিকরাও কাজ করেছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। যদিও সাংবাদিকের জীবনের নিরাপত্তার দায়িত্ব কেউ নেয় না। এই পেশাজীবীদের বিমার ব্যবস্থাও নেই সব প্রতিষ্ঠানে।

এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে। খবরগুলো তাৎক্ষণিকভাবে পেলেও আমি কিছু ইনডেপথ সংবাদের অভাব বোধ করেছি। এই সীমান্ত আমার দীর্ঘদিনের চেনা। এই সময়ে সাংবাদিকদের কাছ থেকে অন্তরালের আরও খবর আশা করেছিলাম। কারণ ক্রমেই এটি এখন জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নানা ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

প্রতিবেশী দেশটির ভেতরে ঠিক কী হচ্ছে, সে খবর পাওয়া সহজ না। সীমান্তের দু’পাশ খুব ভালোভাবে না চিনলে নির্ভরযোগ্য সোর্স না থাকলে এখানে ইনডেপথ সাংবাদিকতা করা কঠিন। এখানে দীর্ঘ সময় ধরে যে সাংবাদিকরা কাজ করেন, তারাই সেটি পারবেন। ঘটনার সময় গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করা সাংবাদিকরা এ কাজে বারবার ভুল করবেন, সংবাদ হবে অসম্পূর্ণ। অল্প কয়েকজনকে চিনি, যারা বেশ ভালো জানেন, কাজও করেন। কিছু কাজ আবার খুবই দুর্বল। ‘ভিউ’ বাড়ানোর সাংবাদিকতা করতে গিয়ে তারা বিভ্রান্ত করছেন পাঠক-দর্শকদের।

এমন ইস্যুতে সাংবাদিকতা করতে গেলে আমি প্রথমে মানুষ ও দেশের কথা ভাবি। এজন্য জানতে হয়, আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে কারা আমাদের বন্ধু ও শত্রু। তাই বন্ধু বা শত্রু চিহ্নিত করার সক্ষমতা থাকতে হবে। সময় দিতে হবে। সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহের সাথে ইতিহাস মিলিয়ে বিশ্লেষণ করতে হবে। মিয়ানমারের শত্রু মানেই কৌশলগতভাবে তারা বাংলাদেশের বন্ধু, এমন মনে করার কোনো কারণ নাই। রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন মানেই তারা জান্তা সরকারের প্রতিপক্ষ, তেমনটা ভাবারও সুযোগ নেই। আগেই বলেছি, এই সীমান্ত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে মহাগুরুত্বপূর্ণ। এখানে কাজ করতে হলে সেগুলো খুব ভালো করে জানতে হবে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের সাথে সম্পর্কিত পুরো এলাকা সম্পর্কে একটু ধারণা দেয়া যাক। ভারতের মণিপুর থেকে শুরু করে মিয়ানমারের চিন রাজ্য, সেখান থেকে সোজা দক্ষিণে রাখাইন। তারও দক্ষিণে সিত্তে বন্দর। মিয়ানমারের উত্তর-পূর্ব দিকে কাচিন রাজ্য। পূর্বে শান রাজ্য, তার সাথে চীনের ইউনান সীমান্ত। পশ্চিমে বাংলাদেশের পার্বত্য জেলাগুলো থেকে কক্সবাজারের পূর্বদিক জুড়ে চিন ও রাখাইন সীমান্ত। সব মিলিয়ে বেশ জটিল ভূ-রাজনৈতিক খেলাধূলার মাঠ এই অঞ্চল। এছাড়া, বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে এই অঞ্চলের গুরুত্ব, সম্ভাবনা ও শঙ্কাগুলো জানতে হবে, বুঝতে হবে। না জানলে এই অঞ্চলের কোনো কিছুই পরিষ্কারভাবে বোঝা সম্ভব নয়। আমরা না বুঝলে সংবাদ হবে অসম্পূর্ণ।

ঘটে যাওয়া ঘটনা ও সাংবাদিকদের বিশ্লেষণ দিয়ে এক একটি সংবাদ তৈরি হয়। এই সীমান্তের ক্ষেত্রে বিশ্লেষণ করতে পারেন এমন সাংবাদিকের সংখ্যা হাতেগোনা। তার কারণ দেশের দক্ষিণ-পূর্বের এই সীমান্তের সঙ্কট সম্পর্কে নিউজরুমগুলো সচেতন নয়, প্রস্তুতিও নেই। নিউজ ম্যানেজাররা এই অঞ্চলের গুরুত্ব বুঝতে দেরি করেছেন। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চল নিয়ে তাই বিশেষায়িত সাংবাদিক তৈরি করা হয়নি বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমের।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের অনুপ্রবেশের ঘটনা থেকে আমাদের টনক নড়েছে। কিন্তু পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় আমরা শুধু তাৎক্ষণিক ঘটনাগুলো নিয়ে কাজ করেছি। আমাদের কাজগুলো সব রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প নিয়ে কেন্দ্রীভূত হয়েছে। তাদের থাকা-খাওয়াসহ নানা বিষয় নিয়ে সঙ্কটের খবর করেছি। মানবিক দিক থেকে পুরো বিষয়টি দেখেছি। আঞ্চলিক নিরাপত্তার দিক থেকে ভেবেছি। কিন্তু সেসব নিয়ে গভীরভাবে কাজ করা হয়নি। সশস্ত্র সংগঠনগুলো নিয়ে ইনডেপথ কাজ হয়েছে কিছু। তবে যেভাবে কাজ হওয়ার কথা, সেভাবে হয়নি। এসব নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া তথ্যই আমাদের কাছে তথ্যসূত্র। নিজেদের শক্ত তথ্যের সূত্র তৈরি হয়ে উঠেনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।

উদাহরণ হিসেবে ‘আরসা’র বিষয়টি বলতে পারি। রোহিঙ্গাদের এ সশস্ত্র সংগঠনটি নিয়ে আমরা কয়েক বছর দ্বিধায় ছিলাম। তারা কাদের হয়ে কাজ করছে, জানতে পারিনি। বাতাসে গা ভাসিয়ে যা ইচ্ছা তাই লিখেছি, বলেছি। সংগঠনটি সম্পর্কে ভালো করে না জানার কারণে সংবাদমাধ্যমের একরকম আনুকূল্য পেয়েছে তারা। প্রায় পাঁচ বছর পর জানা গেলো, তারা মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিশ্বস্ত সশস্ত্র সংগঠন। তারাই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ঠেকাতে মরিয়া ছিল। ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের ওই সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ভয় দেখিয়েছে, নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছে।

আমাদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসীরা আশ্রয়কেন্দ্রের ভেতরে গড়ে তুলেছিল মাদকসহ অপরাধের স্বর্গরাজ্য। এ সংক্রান্ত অনেক কিছুই আমাদের জানার বাইরে। কাজেই কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ভারতের সেই মণিপুর পর্যন্ত আঞ্চলিক রাজনীতি আমাদের বুঝতে হবে। সেজন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে নানা সমীকরণ। এই অঞ্চলকে ঘিরে পশ্চিমাদের পরিকল্পনা, ভারত ও চীনের স্বার্থকে মিলিয়ে সবকিছুর হিসাব মেলাতে হবে। হিসাব মেলাতে জানতে হবে। সেজন্য আমাদের আরও প্রস্তুত হতে হবে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিয়ে সঙ্কট দীর্ঘদিনের। এই সঙ্কট কখনও কাটবে বলে মনে করি না। কারণ, রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশসহ ওপাশের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সঙ্কটকে আরও জটিল করে তুলছে। পুরো রাখাইন দখল করে নিলে রাজ্যটির শাসন ব্যবস্থা কেমন হবে? তারা কতদিন টিকবে? টিকে গেলে কি তারা সেদেশ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে? এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের খুঁজতে হবে। জানতে হবে, মানবিকতার মুখোশের আড়ালে কোন দেশ বা গোষ্ঠীর কী স্বার্থ লুকিয়ে আছে।

গত কয়েকদিন ধরে আরেকটি প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে। সীমান্তের সাম্প্রতিক সংঘর্ষের পর থেকে রাখাইন ছাড়ছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা। অথচ এই সময় সেখানে মানবিক সহায়তা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা ছিল সবচেয়ে বেশি। চরম খাদ্য সঙ্কটের মধ্যে যদি বিশ্ব খাদ্য সংস্থা সেখান থেকে চলে আসে, তবে আগামীতে সঙ্কট কোনদিকে মোড় নেবে বলতে পারেন? সাংবাদিক হিসেবে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছি। একইসাথে রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ হারানো অঞ্চলে মিয়ানমারের সেনা অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েও জানতে চাই। কারণ নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নিতে দেশটি সামরিক অভিযানে নামলে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চল ভয়ানক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।

লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply