প্রথম দিন শেষে স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ

|

ছবি: সংগৃহীত

সিলেট টেস্টের প্রথম দিনে শুরুটা দুর্দান্ত ছিল বাংলাদেশের। তবে দিন শেষে স্বস্তিতে নেই স্বগতিকরা। আগে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ৫৭ রানেই ৫ উইকেট তুলে নেয় টাইগার বোলাররা। তবে অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিসের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কা। তাদের দু’জনের জোড়া সেঞ্চুরির পরও ২৮০ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশেরও শুরুটা ভালো হয়নি। জাকির হাসান, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হকের উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। প্রথম দিন শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ৩২ রান জড়ো করেছে টাইগাররা, শ্রীলঙ্কার চেয়ে পিছিয়ে আছে ২৪৮ রানে।

শুক্রবার (২২ মার্চ) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে শ্রীলঙ্কাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রায় ৯ বছর পর ঘরের মাঠে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলো বাংলাদেশ। এই টেস্টের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় পেসার নাহিদ রানার।

টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। নিশান মাদুশকাকে ফেরান সৈয়দ খালেদ আহমেদ। তার ফুল লেংথ ডেলিভারি ড্রাইভ করার চেষ্টায় লঙ্কান ওপেনারের ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে চলে যায় উইকেটের পেছনে। তৃতীয় স্লিপে বাম দিকে হাত বাড়িয়ে দারুণ রিফ্লেক্সে ক্যাচ নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৯ বলে ২ রান করে ফেরেন মাদুশকা।

এদিন পিচ থেকে দারুণ সুইং আদায় করে নেন খালেদ। যার সুফল পেতে খুব একটা বেশি দেরি করতে হয়নি তাকে। কুশল মেন্ডিসকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় উইকেট এনে দেন তিনি। শরীর বরাবর আসা বাউন্সারে কাট করবেন নাকি ছেড়ে দেবেন এই দ্বিধায় শেষ পর্যন্ত ব্যাটে লেগে চলে যায় গালিতে। দুইবারের চেষ্টায় ক্যাচ নেন জাকির হাসান। ফেরার আগে ২ চারে ২৬ বলে ১৬ রান করেন মেন্ডিস।

কুশাল মেন্ডিসের পর একই ওভারে দিমুথ কারুনারাত্নকেও ফেরান খালেদ। অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করা ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন লঙ্কান ওপেনার। বলের লাইনে যেতে পারেননি তিনি, ব্যাট আর প্যাডে ফাঁক থেকে যায় অনেকটা। তীক্ষ্ণভাবে ভেতরে ঢুকে যাওয়া ডেলিভারিতে সেই ফাঁক দিয়ে আঘাত করে অফ স্টাম্পের চূড়ায়। ১ চারে ৩৭ বলে ১৭ রান করে ফেরেন কারুনারাত্নে।

এরপর শান্তর অনবদ্য এক থ্রোতে রান আউটের ফাঁদে পড়েন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুউজ। ৭ বল খেলা ম্যাথুউজ ৫ রানের বেশি করতে পারেননি। ৪৭ রানে ৪ উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কা ৫৭ রানে হারায় তাদের পঞ্চম উইকেট। খালেদ আহমেদের তিন উইকেট শিকারের পর অবশেষে উইকেটের দেখা পেল নতুন কেউ। শরিফুল ইসলামের বলে লেগ স্লিপে মিরাজের হাতে ক্যাচ হন দীনেশ চান্দিমাল।

ক্রিজে এসে প্রথম বলেই ফিরতে পারতেন কামিন্দু মেন্ডিস। শরিফুল ইসলামের বলে দ্বিতীয় স্লিপে তার ক্যাচ ছাড়লেন মাহমুদুল হাসান জয়। অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি ড্রাইভ করার চেষ্টায় কামিন্দুর ব্যাটের বাইরের কানায় লাগে। ক্যাচ নেয়ার মতো উচ্চতায়ই যায় জয়ের হাতে। তবে প্রথম দফায় হাতে নিলেও রাখতে পারেননি তিনি।

৫৭ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর ধনঞ্জয়া-কামিন্দু প্রতিরোধ লড়াই শুরু করেছেন। তাতে রান তোলার গতিও বেড়েছে বেশ। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমেই কামিন্দুর ব্যাটে দ্বিতীয় ফিফটি। এই কামিন্দু মেন্ডিস অবশ্য প্যাভিলিয়নে ফিরতে পারতেন ডাক হয়ে। যদি না শরিফুল ইসলামের বলে সেকেন্ড স্লিপে দাঁড়িয়ে থাকা মাহমুদুল হাসান জয়ের হাত থেকে বল ফস্কে যেত। শুরুতেই জীবন পাওয়া কামিন্দু এরপর আর কোনোপ্রকার ভুল করেননি, দায়িত্ব নিয়ে দলকে টেনেছেন। নিজের ইনিংস বড় করেছেন।

ওয়ানডে মেজাজে ব্যাত চালিয়ে পরপর দু’জনেই পেয়ছেন ফিফটির দেখা। ৫২ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, ৫১ বলে ফিফটি আসে কামিন্দু মেন্ডিসের ব্যাট থেকে। ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে তাদের শতরান পূর্ণ হয় ৯৬ বলে। এদিকে, নাহিদ রানার বলে বাউন্ডারি মেরে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন কামিন্দু মেন্ডিস। পরের বলেই ১০২ রানে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন কামিন্দু, ভাঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ২০২ রানের জুটি। আউট হওয়ার আগে এ ব্যাটার ১২৭ বল খেলে ১১টি চার এবং তিনটি ছক্কা মারেন।

কামিন্দুর পর শতক তুলে নেন ধনাঞ্জয়াও। নাহিদ রানার পায়ের ওপর করা লেংথ ডেলিভারি ফ্লিক করলেন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। বল চলে গেল স্কয়ার লেগ দিয়ে সীমানার বাইরে। ধানাঞ্জয়া ছুঁয়ে ফেললেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। চাপের মুখে দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ১২ চার ও ১ ছক্কায় ১২৭ বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছেন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক। বাংলাদেশের বিপক্ষে তার তৃতীয় সেঞ্চুরি এটি। সবমিলিয়ে একাদশ।

কামিন্দু মেন্ডিসের মতো ধনাঞ্জয়াকেও ফেরান নাহিদ রানা। তরুণ পেসারের বাউন্সারে পুল করার চেষ্টায় ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। ইনিংসে তৃতীয় ক্যাচ নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ফেরার আগে ১২ চার ও ১ ছক্কায় ১৩১ বলে ১০২ রান করেন শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক।

গতি, বাউন্স আর মুভমেন্টে বিপর্যস্ত প্রবাথ জয়সুরিয়া বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি উইকেটে। নাহিদ রানা তুলে নেন তৃতীয় উইকেট। এরপর উইকেট শিকারে নাম লেখান তাইজুল ইসলাম। তার ঝুলিয়ে করা ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ডে হন ১৯ বলে ৯ রান করা ভিশ্ব ফার্নান্দো। আর রান আউটে সমাপ্তি ঘটে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের। কাসুন রাজিথার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে আউট হন লাহিরু কুমারা।তাইজুলের ইসলামের বলে বড় শটের চেষ্টায় টাইমিং হয়নি কুমারার। বল মিড-অফের দিকে যাওয়ার পথে রানের জন্য বেরিয়ে যান তিনি। কিন্তু সাড়া দেননি রাজিথা। কুমারা ক্রিজে ফেরার আগেই ভাঙা হয় স্টাম্প। ২১ রানে শেষ ৫ উইকেট হারিয়ে ২৮০ রানে থামে শ্রীলঙ্কা। অভিষিক্ত নাহিদ রানা ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ নেন ৩টি করে উইকেট।

শেষ বিকালে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ভিশ্ব ফার্নান্দো জাকিরকে ফেলেন লেগ বিফোরের ফাঁদে। রিভিউ চ্যালেঞ্জ জানিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি ৮ বলে ৯ করা জাকির। তিনে নামা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকেও লেগ বিফোরের ফাঁদে বিদায় করেন ভিশ্ব। ১০ বলে পাঁচ রান করা শান্তও রিভিউ নষ্ট করে ফেরত গেলেন সাজঘরে। পরপর দুই ওভারে এই লঙ্কান পেসার রীতিমতো কাঁপুনি ধরিয়ে দেন টাইগার ব্যাটিং লাইনে।

উইকেটে এসে এদিন শুরু থেকেই নড়বড়ে ছিলেন মুমিনুল হক। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, প্রতি বলেই তিনি আউট হয়ে যাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত মুমিনুল হককে ফিরিয়েই দেন কাসুন রাজিথা। ব্যাক্তিগত ৫ রানে মুমিনুল প্যাভিলিয়নে ফিরলে বাংলাদেশ হারায় ৩য় উইকেট।এরপর অবশ্য মাহমুদুল হাসান জয় আর নাইটওয়াচ ম্যান হিসাবে নামা তাইজুল ইসলামের দৃঢ়তায় বাংলাদেশ দিনের খেলা শেষ করে আসে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে। দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩২ রান। ২৪৮ রানে পিছিয়ে থেকে আগামীকাল তারা দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করবে।

/আরআইএম



সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply