ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আতঙ্ক ফেন্সি জুয়েল: চাঁদা না দিলে পরিণতি ভয়াবহ, কেউ কেউ বাড়ি ছাড়া

|

আরিফুর রহমান সবুজ

অনেকে চোখেও দেখেননি। কিন্তু নাম শুনেই আঁতকে উঠেন। কখনও চিরকুট পাঠিয়ে, কখনও ভয়ভীতি দেখিয়ে আদায় করেন লাখ লাখ টাকার চাঁদা। না দিলে পরিণতি ভয়াবহ। ভয়ে ঘরবাড়ি ছাড়া কেউ কেউ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের জুয়েল রানা ওরফে ফেন্সি জুয়েল তেমনই মূর্তিমান আতঙ্ক।

যেমন, বছরখানেক আগের কথা। চিরকুট পাঠিয়ে এলাকার প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. সাদেকের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন ফেন্সি জুয়েল। রাজি না হওয়ায় ওই চিকিৎসকের পরিণতি হয় ভয়াবহ।

গভীর রাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় ওই চিকিৎসকের পার্কিংয়ে থাকা প্রাইভেটকারে। একই রাতে আগুন দেয়া হয় আরও দুই ব্যবসায়ীর মোটরসাইকেলে। অপরাধ চাঁদা দিতে চাননি তারাও।

সম্প্রতি নবীনগরের ওই চিকিৎসকের বাড়ি ভুঁইয়া কুঠিরে গিয়ে পাওয়া যায়নি কাউকেই। পাশের দোকানদার জানালেন, পরবর্তীতে পরিবারসহ ওই চিকিৎসক পাড়ি জমিয়েছেন আমেরিকায়।

একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন নবীনগর হাইস্কুল রোডের একটি ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠানের ডিলার মোহাম্মদ রফিকও। তিনি বলছিলেন, পিস্তল বের করে কপাল বরাবর অস্ত্র তাক করেছিল জুয়েল। অস্ত্র তাক করিয়ে বলে, তোমাকে আগে ফোন দেয়া হয়েছিল। ১৫ লাখ টাকা রেডি করো। এত টাকা তো এখন নেই বললে সঙ্গে সঙ্গে দুই রাউন্ড গুলি ছুড়ে। আর বলে আমরা আবার আসবো, ১৫ লাখ টাকা রেডি কইরো। যদি থানা-পুলিশকে জানাও তাহলে তোমাকে যেখানে পাই, সেখানে মেরে ফেলবো।

এ নিয়ে পুলিশকে অভিযোগ দেয়া হলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ফেন্সি জুয়েল। ফোনে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয় রফিককে। হুমকির ফোন রেকর্ডে ফেন্সি জুয়েলকে বলতে শোনা যায়, তোরে মারতে আমার ৫০ পয়সা খরচ হবে। তোর পুলিশ বাঁচাবে তোকে? মাত্র ৫০ পয়সা খরচ করবো তোকে মারতে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, জুয়েল ছিলেন স্থানীয় যুবদল নেতা। টাকার জন্য ২০০৮ সালে শ্বশুর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা কনক সারওয়ারকে জবাই করে হত্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় জুয়েলের ত্রাসের রাজত্ব। এরপর থেকে এলাকায় তাকে দেখা না গেলেও চলছে রাম-রাজত্ব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি ভুক্তভোগী। ও যেহেতু চাঁদাবাজি করে, তাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পরিবারের দিকে তাকিয়ে থানা-পুলিশকে জানাইনি বিষয়টি।

ক্ষমতার পালা বদলের দেড় যুগ হলেও তিতাস নদীর ৬ ঘাট-হাট বাজার থেকে শুরু করে জমি দখল, সবকিছু নিয়ন্ত্রণ ছিল জুয়েলের। এতো অপরাধের পরও নবীনগর থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা মাত্র দুইটি। তবে পুলিশের তথ্য মতে, বিভিন্ন থানায় আরও ১৮টি মামলা রয়েছে তার নামে।

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুব আলম বলেন, সে ছিল নবীনগরের বড় সন্ত্রাসী। আমার দায়িত্বকালে সে কোনো অপরাধ সংঘটিত করেছে, এমন বার্তা পায়নি।

সম্প্রতি এক অপহরণ মামলায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে ফেন্সি জুয়েল। তারপরও আতঙ্ক কাটেনি বাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরবাসীর।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply