গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল ঘুরিয়ে বনিতা খালকো তৈরি করেছেন নিজের চলার পথ (ভিডিও)

|

বনিতা খালকো এখন পেশাদার গাড়ি চালক।

বনিতা খালকো। নওগাঁর প্রত্যন্ত গ্রামে তার জন্ম, বেড়ে ওঠা। ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছেন বনিতা। তারপর সৎ মায়ের গঞ্জনা-বঞ্চনায় আত্মাহুতির পথে পা বাড়ান। তবে সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি, তারপর বিয়ে। ভাগ্য ফেরাতে চলে আসেন ঢাকায়। আত্মবিশ্বাসে ভর করে গাড়ি চালানোকে বেছে নেন পেশা হিসেবে। বনিতা এখন একজন পেশাদার গাড়ি চালক। শত বাধা অতিক্রম করে মনের শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছেন বনিতা। শক্ত হাতে ধরেছেন সংসারের হাল।

বনিতা খালকো, শক্ত হাতে ধরেছেন গাড়ির স্টিয়ারিং সে হাতেই ধরা সংসারের হাল। অবহেলার জীবন থেকে নিজেকে টেনে এনেছেন। নিজের গন্ডিতে বনিতা এখন সফলতার উদাহরণ। বনিতা খালকো বললেন, এই ঢাকা শহরকে দেখবো এটা আমি কখনও কল্পনায়ও ভাবিনি, গাড়ি চালানো তো দূরের কথা।

আরও দেখুন: গাড়ির স্টিয়ারিং হুইল ঘুরিয়ে বনিতা খালকো তৈরি করেছেন নিজের চলার পথ

নওগাঁর পোরশার প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম বনিতা খালকো’র। শৈশবের স্মৃতিতে মা-বাবার আদর বলে কিছুই নাই। তিন বছর বয়সে মাকে হারিয়েছেন। বনিতা বড় হচ্ছিলেন সৎ মায়ের আদরহীন সংসারে। অনাদরের সে জীবনে কখনও এসেছে অভিমান। কৈশোরে অভিমান আর অপমানে নিজেকে শেষ করার চেষ্টাও করেছেন তিনি।

বনিতা বলেন, আমাকে খেতে দিতো না সারাক্ষণ বকা দিতো। ভাবতাম, জীবনই রাখবো না আর।

গার্মেন্টস এ কাজ করবেন বলে ঢাকায় আসা। কিন্তু দু্ই সন্তানের মা বনিতা অন্য কিছু করতে চান। সঙ্গে ছিলো আত্মবিশ্বাস আর স্বামীর সমর্থন। বনিতা বলেন, আমার হাজবেন্ড বলতেন যে গার্মেন্টসে অনেক কষ্ট। তো একবার এক বউদি আমার হাজবেন্ডকে বললেন যে, ব্র্যাক থেকে ড্রাইভিং শেখায়। তারা তিনমাস ড্রাইভিং শেখাবেন, খাওয়া-দাওয়া ওনারাই করাবেন আবার চাকরিও দেবেন ওনারাই।

বনিতার স্বামী স্বপন মিঞ্জ, বললেন, মহিলারা তো এখন বিমানও চালাচ্ছেন। তাহলে তুমি কেনো মাটিতে চার চাকার গাড়ি চালাতে পারবা না!

বনিতা বলেন, তার কথাটা তো ঠিক। তারপর উনি আমাকে নিয়ে যান ড্রাইভিং শিখতে। যখন প্রথমবার ফ্লাইওভারে উঠি মনে হচ্ছিলো এটা আমি কখনই পারবো না (হাসি)।

সেই থেকেই শুরু। জীবনটাকে ঢেলে সাজানোর ইচ্ছাটাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার পালা। গাড়ির স্টিয়ারিংটাকে আপন করে নিয়েছেন তখন থেকেই। এরপর মূল পরীক্ষার মুখোমুখি বনিতা।

বনিতা বললেন, এরপর ব্র্যাকে ইন্টারভিউ দিলাম ভালোমতো, সুযোগ হয়ে গেলো। কাজ করছি, নিজেকে ধন্য মনে হয়, নিজেকে নিয়ে গর্বিত; আমার খুব ভাল লাগে।

বনিতা খালকো এখন পেশাদার গাড়ি চালক। জীবনের বৈরীতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এগিয়ে চলা একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ। মানুষের জীবনে দুঃসময় আসে। মানুষ সেই সময়টিকে কী ভাবে মোকাবেলা করে সেটিই বড় বিষয়। বনিতা খালকো সেই দু:সময়কে অতিক্রম করেছেন।

কৈশোরে অর্থাৎ জীবনের কঠিন সময়ে পাশে ছিলেন বনিতার নানী রমনী রাণী। নাতনির এই সাফল্যে দারুণ খুশি তিনি। বললেন, যখন ছোট ছিল তখন অনেক দুঃখ-কষ্টের মাঝে দিন কেটেছে। আমরা খুশি যে এখন ওর কর্মসংস্থান হয়েছে, দুইটা বাচ্চা আছে, ভাল আছে।

অদম্য ইচ্ছা শক্তির সঙ্গে স্বজনদের সহযোগিতা জীবন নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছে। সঙ্গে ছিলো পেশাগত সহকর্মীদের সমর্থন।

শুভকামনা বনিতা খালকো।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply