ভোট না দেয়ায় পুলিশের সামনেই নির্যাতন, গ্রাম ছাড়ার হুমকির অভিযোগ

|

নির্যাতনের সময় উপপরিদর্শক সিদ্দিক ঘটনাস্থলেই ছিলেন এবং ওসি মো. বশিরুল আলম ঘটনাস্থল থেকে অল্প দূরে উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন অসীম চন্দ্র শীল।

বরগুনা প্রতিনিধি:

নির্বাচনে ভোট না দেয়ায় এক দরিদ্র সংখ্যালঘু পরিবারসহ একাধিক পরিবারকে গ্রাম ছাড়ার হুমকি দেয়ার অভিযোগ এসেছে বরগুনার বামনা উপজেলার রামনা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দারের বিরুদ্ধে।

সোমবার (২৬ জুলাই) সকালে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন নির্যাতনের শিকার ওই যুবক অসীম চন্দ্র শীল। তিনি অভিযোগ করেন, ভোট না দেয়ার অভিযোগ তুলে মেরে আহত করাসহ তার পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস ছোট্ট চায়ের দোকানটিও ভেঙে গুড়িয়ে দেন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা।

লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী অসীম চন্দ্র শীল জানান, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট না দেয়ার অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার ও তার ক্যাডার বাহিনী তাকে পরিবারসহ গ্রাম ছাড়ার হুমকি দিতে থাকেন।

ভুক্তভোগী আরও জানান, অভিযুক্ত স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর হওয়ায় গত ১৭ জুলাই বৈকালিন বাজারে উপস্থিত হয়ে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি মিমাংসা করতে গেলে চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনীর সদস্য ফরিদ (৩৫), বাপ্পি (৪০), ফোরকান (২৬), ইমরান (১৭) এবং রাজু জোমাদ্দারসহ (৪০) আরও কয়েকজন মিলে তাকে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেন। এসময় প্রতিবেশী উজ্জ্বল ও কমল তাকে বাঁচাতে এলে তাদেরকেও মারধর করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী উজ্জ্বল বলেন, মারধরের সময় অসীমকে রক্ষা করতে যাওয়ার অপরাধে তাকেও পিটিয়ে হাত ভেঙে দেয়া হয়েছে।

পরে মাথায় জখম নিয়ে অসীম চন্দ্র শীল আরএন ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে গেলে সেখান থেকে তাকে ধরে এনে চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার নিজেই লোহার পাইপ দিয়ে আবার তাকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। এসময় বামনা থানার উপপরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমানকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বশিরুল আলম। অসীম জানান, তাকে নির্যাতনের সময় উপপরিদর্শক সিদ্দিক ঘটনাস্থলেই ছিলেন এবং ওসি মো. বশিরুল আলম ঘটনাস্থল থেকে অল্প দূরে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়াও বৈকালিন বাজারে অসীম চন্দ্র শীলের দরিদ্র পিতার উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন চায়ের দোকানটিও ভেঙে গুড়িয়ে দেন নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার ও তার ক্যাডার বাহিনী। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. মালেক (৫০) নজরুল ইসলামকে থামাতে গেলে তাকেও লাঞ্ছিত করেন বলে জানান ভুক্তভোগী অসীম চন্দ্র শীল।

ঘটনায় এখনও তারা থানায় মামলা করার সাহস পাননি বলে জানান ভুক্তভোগী। এমনকি স্থানীয় হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাও নিতে পারেননি।

এ বিষয়ে রামনা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম জোমাদ্দার সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি, বরং অসীম চন্দ্র শীল এবং তার সহযোগীরা তার লোকজনের উপর হামলা চালালে তা প্রতিহত করতে গিয়ে দুএকজন সামান্য আহত হয়ে থাকতে পারে।

বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বশিরুল আলম বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও অবহিত করেছেন। এছাড়াও ঘটনায় এখনও তার কাছে কোনো অভিযোগ করেনি বলেও জানান তিনি। আর এসআই সিদ্দিকুর রহমানকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply