ট্রাম্প-কিম বৈঠকের খুঁটিনাটি: কে কী খাবেন? বিল দেবেন কে?

|

বিশ্বজুড়ে আগ্রহের কেন্দ্রে এখন ট্রাম্প-কিম বৈঠক। এ সংক্রান্ত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে এখন আলাপ-আলোচনা করছেন আয়োজনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। তবে, এতসব আয়োজন ভেস্তে যেতে পারে যেকোনো সময়। কারণ খামখেয়ালিপনায় এই দুই নেতারই আছে বিশেষ খ্যাতি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১২ জুলাইয়ের বৈঠক নিশ্চিত করার আগেই দু’দেশের প্রতিনিধিরা সিঙ্গাপুরে গিয়ে আয়োজনের খুঁটিনাটি নিয়ে আলাপ আলোচনা করেছেন। মিটিংয়ের সময় কোন নেতা কোন পাশে বসবেন, বৈঠকস্থলে তাদের সাথে কারা কারা উপস্থিত থাকবে, তাদের কয় দফা কী কী খাবার পরিবেশন করা হবে- সবই ছিল আলোচনায়। আলোচনায় হয়েছে সম্ভাষণসূচক ‘টোস্টের’ সময় কী ব্যবহার করা হবে সেটি নিয়েও। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি অ্যালকোহল পান করেন না!

কোনো সন্দেহ নেই যে দু’পক্ষই নিরাপত্তার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিচ্ছে। আয়োজক রাষ্ট্র হিসেবে সিঙ্গাপুর বিমানবন্দর থেকে শুরু করে সড়ক, বৈঠকস্থল সর্বত্রই নিরাপত্তা প্রদান করবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া দু’রাষ্ট্রই তাদের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে যাবে সেখানে।

রীতি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যখন বিদেশ সফরে যান তার সাথে সিক্রেট সার্ভিস পার্সোনেলদের একটি বহর থাকে। থাকে নিজস্ব লিমুজিন, হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষামূলক বাহন। সেদিক থেকে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিমকে অনভিজ্ঞই বলতে হবে। তার বিদেশ সফরের অভিজ্ঞতা খুবই নগণ্য। সিঙ্গাপুর সফরই হবে তার জন্য এ যাবৎকালের সবচেয়ে লম্বা সফর।

সিঙ্গাপুরের সাবেক এক কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে সিঙ্গাপুরের দক্ষিণাঞ্চলীয় সেন্টোসা দ্বীপে ট্রাম্প-কিম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। অবশ্য, একাধিক জায়গায় সিরিজ বৈঠক হতে পারে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে।

সিঙ্গাপুরের এই সেন্টোসা দ্বীপেই হতে পারে আলোচিত বেঠকটি

কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলন ছাড়া তৃতীয় কোনো রাষ্ট্রে দু’জন রাষ্ট্রনেতার এমন বৈঠক নজিরবিহীন। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভেন্যু সিঙ্গাপুর হওয়ায় ট্রাম্প তুলনামূলক সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবেন। কোরীয় উপদ্বীপ থেকে যতদূরে বেঠকটি অনুষ্ঠিত হবে কিম ততটাই অসুবিধা বোধ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিমের অসুবিধা মানেই যে ট্রাম্পের সুবিধা, তার আর বলতে।

রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে সেখানকার সরকারের ওপর খরচের ব্যয়ভার চাপিয়ে দেয়ার বিশেষ কুখ্যাতি আছে উত্তর কোরিয়ার। গত ফ্রেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিকে উত্তর কোরিয়ার অফিসিয়ালদের একটি বহরের থাকা-খাওয়া ও পরিবহন খরচ বাবদ ২ লাখ ২৫ হাজার ডলার দক্ষিণ কোরিয়াকে বহন করতে হয়েছিল। প্রতিনিধিদলে ছিলেন প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং-ও। সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, তারা উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধি দলের খরচের একটি অংশ বহন করবে। তবে সেটি কতটুকু তা জানা যায়নি।

এছাড়া কারা কী খাবারের অর্ডার করছেন, কারা আগে মিটিংয়ের ভেন্যুতে উপস্থিত হচ্ছেন তার ওপর অনেকখানি নির্ভর করছে কারা কোন খরচের ভার বহন করবেন?

সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ওয়েন্ডি শেরম্যান জানান, বিষয়টি মি. প্রেসিডেন্ট এবং প্রেসিডেন্ট কিমের ওপর অনেকখানি নির্ভর করছে। তাদের চাহিদা মোতাবেক অায়োজন সাজানো হবে।

বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের সাথে সাক্ষাতের ক্ষেত্রে ট্রাম্প কিছুটা আগ্রাসী থাকেন। কূটনেতিক নিয়ম নীতির পরোয়া করেন না। অন্যদিকে, তাদের রাষ্ট্রনেতাকে কতটুকু মর্যাদা দেয়া হচ্ছে সে বিষয় উত্তর কোরিয়ার অফিসিয়ালরা খুব সংবেদনশীল। সুতরাং কিমকে আলোচনার টেবিলের কোনদিকে বসতে দেয়া হবে সেসব খুঁটিনাটি বিষয়ে পর্যন্ত আলাপ-আলোচনা করতে হচ্ছে দু’দেশের অফিসিয়ালদের।

সাধারণত, এ ধরনের মিটিংয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি সভাস্থলে পরে প্রবেশ করেন। তিনি দরজা থেকে দূরে বসেন। ট্রাম্প-কিম বৈঠকে কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন। এ বিষয়ে উত্তর কোরিয়া-জাপানের বৈঠকে মধ্যস্থতা করা এক জাপানিজ কূটনীতিকের পরামর্শ দুটি প্রবেশ পথ আছে এমন একটি রুম বেছে নিন।

সেক্ষেত্রে দরজার হাতল-লকও ভালোভাবে পরখ করে নিবেন দু’দেশের কর্মকর্তারা। ২০০৫ সালের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে চাইবে তারা। সেবার চীনের প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। ব্রিফিং শেষে উঠে যাওয়ার সময় দরজা খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। কারণ, সেটি লক করা ছিল।

ছবি তোলার জন্য দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে কতটুকু হাঁটতে হবে সেটিও মাপা হয়েছে পুঙ্খানুপুঙ্খ। ছবি তোলার মঞ্চে দু’দেশের পতাকা কতখানি শোভা পাবে সেটিও আনা হচ্ছে আমলে।

উত্তর কোরিয়ার পতাকা দেখানোর তাৎপর্য প্রসঙ্গে জাপানের সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কূটনীতিক মিতোজি ইয়াবুনাকা প্রশ্ন তুলেছেন, তবে কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে রাষ্ট্রে হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে? যখন কিনা তাদের মধ্যে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই।

এর বাইরেও আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হচ্ছে আয়োজকদের। উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম যথেষ্ট কৌশলী। তিনি প্রোপাগাণ্ডামূলক ভিকটরি চিহ্ন দেখিয়ে বসলে সেটিও গোটা বিশ্ব এক ধরনের বার্তা দিতে পারে। সবশেষ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে ইনের সাথে সীমান্তে করমর্দনের পর তাকে উত্তর কোরিয়ার সীমানার ভেতরে পা রাখার আহ্বান জানিয়ে গোটা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কিম। উত্তর কোরিয়ার অফিসিয়ালদের সাথে কাজ করা কূটিনীতিকদের অনেকেই বলেছেন, সুপরিকল্পিত যেকোনো পরিকল্পনাই শেষ মুহূর্তে বানচাল করে দিতে পারে উত্তর কোরিয়া। দেখা গেল তারা শেষ মুহূর্তে আপত্তি জানিয়ে বসলো অথবা সুর পরিবর্তন করে ফেললো।

জাপানিজ কূটনীতিক তাকিও হারাদা সেদেশের প্রধানমন্ত্রী জুনিচিরো কোইজুমির পিয়ংইয়ং সফরকালীন সময়ে উত্তর কোরীয় বিষয়ক প্রধান ডেস্ক কর্মকর্তা ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিদের হুঁশিয়ার থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, প্রস্তুতি বৈঠকের সময় তারা খুব বন্ধুত্বপূর্ণ থাকলেও ট্রাম্প-কিম বৈঠকের শেষ মুহূর্তে উত্তর কোরিয়ার আফিসিয়ালদের কী আচরণ হবে তা নিশ্চিত হওয়ার কোনোই উপায় নেই।

দুর্বোধ্য ট্রাম্প, দুর্বোধ্য কিম। বৈরি রাষ্ট্রীয় সম্পর্ক। অনেক আকাঙ্ক্ষিত এই বৈঠক কত রঙ্গ উপহার দেয় সেটিই এখন দেখার অপেক্ষায়।

(নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে তোয়াহা ফারুক)
যমুনা অনলাইন: টিএফ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply